চার দিনে ৪৬ জেলেকে অপহরণ করেছে আরাকান আর্মি
- আপডেট সময় : ০৯:১৭:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৪০০ বার পড়া হয়েছে
চার দিনে ৪৬ জেলেকে অপহরণ করেছে আরাকান আর্মি
স্টাফ রিপোর্টারঃ
গত বছরের আগস্টে রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহর আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ নেয় পর থেকে নাফ নদ ও সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের একেরপর এক অস্ত্রের মুখে অপহরণ করছে।
গেল নয় দিনে ৫১ জেলেকে অপহরণ করে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত ১ জনকেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। গত ১৭ আগস্ট থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত এসব অপহরণের ঘটনা ঘটে।
সবশেষ ২৬ আগস্ট টেকনাফের নাফ নদের মোহনা থেকে দুটি মাছ ধরার ট্রলারসহ ১৩ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়। এ অবস্থায় স্থানীয় জেলেরা আতঙ্কে আছেন। তারা মাছ ধরতে সাগরে নামতে ভয় পাচ্ছেন। পাশাপাশি অপহরণের শিকার জেলে পরিবারগুলো উদ্বিগ্ন আছে। অপহৃতদের দ্রুত ফেরত আনার দাবি জানিয়েছে তারা।
স্থানীয় প্রশাসন ও জেলেদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৭ আগস্ট পাঁচ, ২৩ আগস্ট ১২, ২৪ আগস্ট ১৪, ২৫ আগস্ট সাত এবং ২৬ আগস্ট ১৩ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। এই হিসাবে টানা গত চার দিনে ৪৬ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। যাদের কাউকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরত আনা যায়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মাছ ধরে ফেরার পথে শাহপরীর দ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে টেকনাফের নাইট্যংপাড়ার বাসিন্দা মোঃ আলম এবং জাদিমুরার হেলাল উদ্দিনের মালিকানাধীন দুটি ট্রলারসহ ১৩ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।
ট্রলার মালিক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শাহপরীর দ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ভাটার সময় নাব্যতা সংকটের কারণে ট্রলারগুলোকে মিয়ানমারের সীমান্তের কাছাকাছি দিয়ে চলাচল করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, গত ৫০ বছর ধরে এভাবে জেলেরা যাতায়াত করে আসছিলেন। নাফ নদে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আরাকান আর্মি। আমাদের জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের জলসীমানায় ঢুকে জেলেদের ধাওয়া দিচ্ছে। গত চার দিনে ৪৬ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। যাদের কাউকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরত আনা যায়নি। আমাদের সরকারের উচিত এর কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। না হয় আমাদের লাখো জেলে পরিবারে দুর্দিন আসবে।
কায়ুকখালিয়া ট্রলার মালিক সমিতি ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত আট মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদ সংলগ্ন এলাকা থেকে অন্তত ৩শ জেলেকে অপহরণ করেছিল আরাকান আর্মি। তাদের মধ্যে বিজিবির সহায়তায় ২শ জনকে কয়েক দফায় ফেরত আনা হয়। বাকি ১শ জন জেলে এখনও তাদের হেফাজতে রয়েছেন। এর মধ্যে গত চার দিনে ৪৬ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।
এ বিষয়ে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট বিএন শাকিব মেহবুব বলেন, মাছ শিকারে যাওয়া ট্রলারডুবির ঘটনায় নাফ নদে ছয় জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা বারবার জেলেদের বলার পরও জলসীমানা অতিক্রম করছে। যার কারণে জেলেরা আরাকান আর্মির হাতে ধরা পড়ছে। যার কারণে এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। ইতিমধ্যে আমরা নাফ নদে টহল জোরদার করেছি। পাশাপাশি জলসীমানা অতিক্রম না করতে জেলেদের নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আরাকান আর্মির হাতে অপহৃত জেলেদের দ্রুত কীভাবে ফেরত আনা যায়, সে বিষয়ে আমাদের বিজিবি, কোস্টগার্ড কাজ করছে। এ ছাড়া নাফ নদে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল এবং নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।