জেলা প্রতিনিধি:চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডিউটিরত অবস্থায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকারিয়া পিণ্টু কর্তৃক সিনিয়র স্টাফ নার্স ও প্রশিক্ষনার্থী সেবিকাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৭টার দিকে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতালের সকল স্টাফদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। অভিযুক্ত জাকারিয়া চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী। এরপর থেকে অভিযুক্ত জাকারিয়া পলাতক রয়েছেন। তবে পরিবারের দাবি, অভিযুক্ত জাকারিয়া পিণ্টু মানসিক রোগী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে আলমডাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাঁর এব বছর বয়সী শিশুকন্যা জেরিনকে ঠাণ্ডাজনিত কারণে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর হাসপাতালে ভর্তি শিশুকন্যা জেরিনকে দেখতে আসেন তিনি। এসময় তাঁর কন্যার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে ওয়ার্ডের অফিসকক্ষে গেলে কাউকে না পেয়ে চিৎকার করতে থাকেন পিণ্টু। পরে ওয়ার্ডের বাইরে থাকা চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত রেশমা খাতুন ছুটে আসেন। আসতে দেরি হওয়ায় জাকারিয়া উত্তেজিত হয়ে রেশমার মুখে একটি ঘুষি মারেন। রেশমা তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহেনা পারভিনকে এ ঘটনা জানান। পরে রেহেনা পারভিন রেশমাকে কেন মারলেন তা জানতে জাকারিয়াকে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এসময় সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহেনা পারভিনের মুখ থেকে মাস্ক খুলে নেন ও তাঁকেও ঘুষি মারেন। এরপর অভিযুক্ত জাকারিয়া কৌশলে হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন।
এ ঘটনার পর পুরো হাসপাতাল এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এসময় খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান ও হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ ঘটনার পর থেকে সদর হাসপাতালে কর্মরত সকল স্টাফ ও সিনিয়র স্টাফ নার্সদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সদর হাসপাতালে কর্মরত সকল স্টাফ ও সিনিয়র স্টাফ নার্সদের মধ্যে অনেকে বলেন, ‘আজ আমাদের এক সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহেনা পারভিন লাঞ্ছিত হয়েছেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় শারীরিকভাবে অসুস্থ। কাল আমরাও রোগী এবং তার স্বজনদের দ্বারা যে লাঞ্ছিত হব না, এর কোনো গ্যারান্টি আছে? আমরা নিরাপত্তা চাই।’
সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহেনা পারভিন বলেন, ‘গতকাল রাতে আমি ও নার্সিং ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত অধ্যয়নরত রেশমা খাতুন শিশু ওয়ার্ডে ডিউটি করছিলাম। এসময় কোনো এক বিষয় নিয়ে রেশমা খাতুনকে ঘুষি মারে জাকারিয়া। আমি ঘটনা শুনে প্রতিবাদ করলে আমার মুখে মাস্ক খুলে ছিড়ে দেন এবং ঘুষি মারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি অন্তঃসত্ত্বা। শারীরিকভাবে আমি অসুস্থ। নিজেকে বাঁচাতে আমি দ্রুত অফিস রুমে চলে আসি। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। যখন যার ইচ্ছামতো আমাদের লাঞ্ছিত করছে।’
এদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকারিয়া পিণ্টুর শাশুড়ি রাবেয়া খাতুনের দাবি, তাঁর জামাই জাকারিয়ার মাথায় সমস্যা আছে। প্রায় সময় তিনি পাগলামি করেন। পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয় তাঁর মেয়ে সাথির সঙ্গে। বিয়ের পর দুই বছর পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওখানের সব চিকিৎসাপত্র আছে তাঁদের কাছে। গতকাল সন্ধ্যায় মেয়েকে দেখতে এসে এ ঘটনা ঘটালো। এটা আসলেই দুঃখজনক।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে ছুটে যায়। সন্ধ্যায় সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহেনা পারভিন ও চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত রেশমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে জাকারিয়া পিণ্টু। তিনি আলমডাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ খান বলেন, এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত জাকারিয়া পিণ্টু আলমডাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত বলে জেনেছি আমরা। অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান চলছে।