বয়স, জন্ম নিবন্ধন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্র জালিয়াতি করে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হওয়ার জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) আবেদন করেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আছমা বিবি। প্রতারণার এ ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে আছমা বিবিকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেবেকা সুলতানা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবা বেগম নায়না সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজা মন্ডল রিনা বলেন, ‘দলের নেত্রী হয়ে সম্পূর্ণ ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে আছমা বিবি বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জামুকায় আবেদন করে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেছেন। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রকৃত বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানানোর পর তাদের নির্দেশেই আছমা বিবিকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সদর উপজেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আর পড়ুন: সৌদিতে ৩ দেশের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
জানা গেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিজেকে ২১ বছরের তরুণী দাবি করে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি চেয়ে আছমা বিবি ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে তিনি স্থানীয় মাদ্রাসা হতে সংগ্রহ করা শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রত্যয়ন, জন্ম নিবন্ধন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের জাল করা কাগজপত্র জমা দেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সদর উপজেলার সরকারি তদন্ত দলের আহবায়ক উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহনাজ সিগমা যাচাই-বাছাই না করে অফিসের একজন পরিদর্শকের মাধ্যমে জামুকা থেকে সরবরাহ করা ফরম পূরণ করে ২৪ জুন প্রতিবেদন জমা দেন। যেখানে তিনি আছমা বিবিকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করার সুপারিশও করেন। বিষয়টি জানাজানির পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এমন মিথ্যাচারের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, স্থানীয় এলাকাবাসী, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন মহলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে আছমা বিবির জালিয়াতির এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ করেন জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজম আলী।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঘটনাটি পুন:তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি নারী তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। যাদের চার জন সরকারি কর্মকর্তা ও একজন এনজিও প্রতিনিধি। আগামী সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।