জেলা প্রতিনিধি:একসময় বেহারার গানের সুরে সুরে বর কনের একমাত্র বাহন ছিল গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় এতিহ্যবাহী পালকি কিন্তু আজ সবই হারিয়ে গেছে কালের আবর্তে শুধু স্মৃতি হয়ে দোলা দেয় মানুষের মনে মনে, ঠিক তেমনি ঝিনাইদহে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার এতিহ্যবাহী পালকি আর তাদের পেশা। দেখা যায় না বর কনেকে কাঁধে নিয়ে বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়ি আবার কনের বাড়ি থেকে বরের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অপরুপ দৃশ্য,আর সেইসাথে শোনা যায় না বেহারার কন্ঠে সেই সুমধুর গান। আগে রাস্তা দিয়ে পালকি গেলে বেহারার গান শুনে বেরিয়ে আসতো ঘর থেকে ছেলে মেয়েরা, সেই বর কনের নিয়ে যাওয়ার অপরুপ দৃশ্য দেখতে, এখন আর সেই দৃশ্য নেই বললেই চলে। পালকির সামনে থাকতো ৩ জন আর পিছনে থাকতো ৩ জন আর মাঝে থাকতো বর কনে আবার কখনো বর কখনো থাকতো কনে। এভাবেই পালকিতে বহন করা হতো বর কনে যাত্রী। সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপার মধুদহ গ্রামের পালকি পেশার সাথে জড়িত আদিবাসৗ পল্লীর চিত্র। এই পেশার সাথে জড়িত আছে ৭০-৮০ টি আদিবাসি পরিবার। আদিবাসি যারা পালকি পেশার সাথে জড়িত গ্রামে তাদেরকে বেহারা বলা হয়। ঠিকমত ভাড়া না পাওয়ায় বেহারেরা এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। পালকি এখন ঘরের চালের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায়, কেউ কেউ ঘরের বারান্দায় ও আবার কেউ ঘরের ডাবের সাথে বেঁধে রেখেছে। অভাবের তাড়নায় কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় জীবিকার তাগিদে চলে গেছে, আবার অনেকেই বাপ দাদার এই পেশাকে আকড়ে ধরে বসে আছে। এই পেশার সাথে জডিত কুমার সরকার বলেন, আমরা খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি মাঝে মধ্যে ২-১ টি পালকি ভাড়া পেয়ে থাকি তাতে আমাদের সংসার চলে না। আমাদের এখানে ৭০-৮০ টি পরিবার আছে সবার অবস্থা একই, খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে আমাদের। কালু সরকার বলেন, আমাদের বছরের প্রায় সময়ই বসে থাকতে হয় আমারা সব মিলে বছরে ৪-৫ টা ভাড়া মারি এক একটি ভাড়াবাবদ পারি শ্রমিক পায় ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। শখ করে সাধারণত আমাদের পালকি ভাড়া নিয়ে থাকে। বিয়ের অনুষ্ঠান ছাড়া কেই ভাড়া নেয় না। এই আদিবাসী পল্লীর বেহারেরা সরকারের দুষ্টি আকর্ষণ করেছেন সেইসাথে সমাজের বিত্তবানরা সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে এলে তাদের অভাব কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে মনে করেন তারা।