স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়ি চালক আব্দুল মালেকের শতকোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়ার বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন – এই ড্রাইভার ছিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহপরিচালক আবুল কালামের ড্রাইভার। তার যদি এতো সম্পত্তি থাকে তাহলে পরিচালক যে চোর সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তিনি বলেন – অনেকেই ড্রাইভার নিয়ে কথা বলছেন। তাকে নিয়ে কথা বলবেন ঠিক আছে কিন্তু সে কোন ক্ষমতাবলে কার প্রশ্রয়ে এতো টাকার মালিক হলো সেটাও দেখা দরকার।
আরও পড়ুনঃ মসজিদে বিস্ফোরণ: তিতাসের ৮ কর্মকর্তার জামিন মঞ্জুর
ব্যারিস্টান সুমন বলেন – করোনা মহামারীর শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি থেকে শুরু করে মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী পর্যন্ত সবারই দুর্নীতির বিষয়ে যেসব অভিযোগ এসেছিলো সব ধিরে ধিরে সত্য হচ্ছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন – একজন ড্রাইভারের যদি এতো সম্পদ থাকে তাহলে মানুষ লেখাপড়া না করে তো ড্রাইভারের চাকরি নেওয়া শুরু করবে। একই সাথে তিনি ড্রাইভারকে রিমান্ডে নেওয়ারও আবেদন জানিয়েছেন।
তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন – কেবল ড্রাইভারকে নয় বরং এর পেছনে যারা আছে সবাইকে গ্রেফতার করতে হবে। সাথে সাথে তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন – সরকার ধিরে ধিরে সব দুর্নীতিবাজদের ধরার দিকে আগাচ্ছে।
প্রসঙ্গত : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়ি চালক আব্দুল মালেককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অবৈধ অস্ত্র, জাল নোটের ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করার পর র্যাব বলছে তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারীর বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছেন তারা।
মালেককে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানায়, তার দুটি সাততলা ভবন, নির্মাণাধীন একটি ১০ তলা ভবন, জমি, ঢাকায় ২১টির মতো ফ্ল্যাট, গরুর খামার ও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ গচ্ছিত অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার সম্পদের অর্থমূল্য শত কোটি টাকারও ওপরে।
গতকাল রোববার বেলা সোয়া ৩ টার দিকে তুরাগের বামনারটেক এলাকার একটি সাততলা ভবন থেকে গ্রেপ্তার হন আবদুল মালেক। র্যাবের দাবি, এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ জাল বাংলাদেশি টাকা, একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল জব্দ করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমকে জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আবদুল মালেক অষ্টম শ্রেণি পাস। তিনি ১৯৮২ সালে প্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পের গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। বছর চারেক পর অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে যোগ দেন। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ছিলেন। ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তিনি বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের আস্থাভাজন ছিলেন মালেক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে র্যাব জানতে পেরেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আশিক বিল্লাহ জানান, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ইনি শতাধিক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। মূলত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বদলি বাণিজ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করিয়ে দেওয়ার নাম করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আনুকূল্যে অর্থ উপার্জন করেছেন বলে (মালেক) প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন।