নজরুল ইসলামঃ পবিত্র কুরআন শরিফে অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সসয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
বিএনপি নেতা হারুনের বক্তব্যের প্রসঙ্গটি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য বলেছেন, কুরআন শরিফে নাকি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা নেই। আমি বলবো অবশ্যই আছে। আমাদের নবী করিম (সা.) বলেছেন, অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল হতে। তিনি এই শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের কুরআন শরিফে বলা হয়েছে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম সব ধর্মের মর্যাদা দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুরআন শরিফে আছে ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন’ অর্থাৎ যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। যার যার মতামত সে সে প্রকাশ করবেন। এটা প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতাই আসে। যতই তিনি (এমপি হারুনুর রশিদ) অস্বীকার করুন, যেভাবে তিনি ব্যাখ্যা দেন- এটা হচ্ছে বাস্তবতা।
যুগ যুগ ধরে এটা চলছে। হ্যাঁ অবশ্যই নিজের ধর্ম পালনে সব সময় গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল থাকতে হবে। এটা আমাদের শিক্ষা। এটা নবী করিম (সা.) সব সময় বলে গেছেন। কাজেই এ ধরনের কথা সংসদে না বলাটাই ভালো। শেখ হাসিনা বলেন, ঈদুল ফিতরের সময় সবাই যদি সরকারের কথাটা শুনতেন, তাহলে আজ করোনা এভাবে ছড়িয়ে পড়ত না। দেশে টিকা আসা শুরু হয়েছে আর কোনো সমস্যা হবে না। দেশে আরও টিকা আসবে। শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে। টিকার এখন আর সমস্যা নেই।
টিকা দেওয়ার পর স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, শিশুদেরও তো করোনা হচ্ছে। জেনেশুনে শিশুদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা এসে গেছে, আরও আসবে। আমরা অনেক টাকা দিয়ে টিকা কিনে এনেছি। কিন্তু জনগণের স্বার্থে বিনামূল্যে টিকা দিচ্ছি। আমরা সব কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার দেই গ্রামের ও খেটে খাওয়া মানুষদের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের উপনেতা ও সংসদ সদস্যদের বলতে চাই আমরা জেনে শুনে শিশুদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বেই এই অবস্থা।
বাবা-মায়েরা চায় না তাদের সন্তানরা এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যাক। আর যাদের ছেলে-মেয়ে নেই তারা শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলেন। সংসদ নেতা বলেন, আমরা ভারত থেকে করোনা টিকা কেনার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু ভারতে যেভাবে করোনা আক্রান্ত সংখ্যা বেড়েছে ফলে তারা রফতানি বন্ধ করে দেয়। এতে কিছুদিন আমাদের সমস্যা হয়েছিল।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত শুক্রবার রাতে এবং গতকাল শনিবার সকালে মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা পাওয়া গেছে। আরও কিনে আনব। চীন, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র সব জায়গায় আমরা যোগাযোগ রেখেছি। আমি আগেই বলেছি আমরা ৮০ শতাংশ মানুষের টিকার আওতায় আনব। বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।
আপনাদের প্রতি আহ্বান অন্তত নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন। নিজে সুরক্ষিত থাকুন, অন্যকে সুরক্ষিত রাখুন। সবাই এটা মেনে চললে আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। টিকা আসা শুরু হয়েছে সমস্যা হবে না। এর আগে অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের তার বক্তব্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান। বিরোধীদলের নেতার বক্তব্যর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সর্বস্তরে শিক্ষা বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। চলমান করোনাকালে আমরা স্কুল শুরুর জন্য বাজেটে টাকা রেখেছি। শিক্ষার্থীদের স্কুলের ড্রেস-জুতা, ব্যাগ কেনা এবং স্কুল ফিডিংয়ের জন্য।
তিনি বলেন, স্কুল বন্ধ আছে কিন্তু পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয় তার জন্য টিভি চালু আছে। আমরা রেডিও উন্মুক্ত করে দিয়েছি। রেডিওয়ের মাধ্যমে পাঠ চলছে। যেভাবে সম্ভব পড়াশোনার কাজটি চালিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছি। স্কুল বন্ধ এজন্য একটু ক্ষতি হচ্ছে। টিকা দেওয়ার পরে আমরা সব স্কুল খুলে দেবো। এর আগে আমরা যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিলাম তখনই সারা বিশ্বে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়লো! আর তার ধাক্কা এসে পড়লো আমাদের মধ্যে। এখন তো শিশুরাও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। লেখাপড়া শিখবে কিন্তু লেখাপড়ার জন্য জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঢেলে দেবো কিনা তা মাননীয় সংসদ উপনেতা, সংসদ সদস্যরা একটু বিবেচনা করবেন। বলার জন্য বলতে পারেন কিন্তু এটাও একটু চিন্তা করবেন ছেলে- মেয়েদের মৃত্যুর মুখে দেবেন কিনা?
নিজের নাতিরা বিদেশে পড়াশোনা করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে আমরা দেখেছি সব ক্লাস অনলাইনে হয়। একটু খুললো আবার মহামারি ছড়িয়ে পড়লো সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ। আবার ঘরে বসে কাটাচ্ছে। হ্যাঁ তারা অপশনও দিচ্ছে। যারা ঘরে বসে পড়বে তারা পড়ছে। যারা যাচ্ছে স্কুলে যাচ্ছে। আবার যখন করোনা বেশি ছড়ায় সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করছে। শুধু বাংলাদেশ কেন এখন সারা বিশ্বে এই অবস্থা। সেটা সবাইকে ভাবতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী এক সেনা শাসকের পকেট থেকে যে দলের সৃষ্টি তারা গণতন্ত্রের কি বুঝে? কোন গণতন্ত্র শিখাবে? তারা কি গণতন্ত্র শেখাবে আমাদেরকে? আজ তাদের মুখেই শুনতে হয় গণতন্ত্রের সংজ্ঞা। যাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে কুর্দি পরে। জিয়া-খালেদা জিয়া-এরশাদ একই বৃত্তের কয়েকটা ফুল। ৭৫ সাল থেকে ৮১ সাল পর্যন্ত কারফিউ দিয়েছিলো বিএনপি। জিয়াউর রহমান দিয়েছিলো কারফিউ গণতন্ত্র।
তিনি বলেন, তখন অনেকগুলো দল গঠনের সুযোগ দিয়েছিলো এটা ঠিক। কিন্তু সেখানে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ ছিলো না। বিএনপি এমন একটি দল যে দল সৃষ্টি করেছে একজন সামরিক জান্তা। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার যে পরিকল্পনা হয় তার মূল শক্তি ছিল এই জিয়াউর রহমান। খুনি কর্নেল রশিদ এবং ফারুক বিবিসিকে দেওয়া তাদের ইন্টারভিউতে এটি স্পষ্ট রয়েছে। জিয়াউর রহমান তাদের সঙ্গে না থাকলে কোনদিনও এই ষড়যন্ত্র করতে পারত না। কারণ জিয়াউর রহমান ছিল উপ-সেনাপ্রধান।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার পর খালেদা জিয়াকে ঘরে নিতে চাননি। কারণ তার আরেকটি ঘটনা আছে সেটা আমি জানি। ওই সময় জিয়াউর রহমান ছিল কুমিল্লায়। তখন তাকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং উপ-সেনাপ্রধান করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাকে উপ-সেনাপ্রধান করেন। ওই সময় তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর থেকে মেজর জেনারেল করেন বঙ্গবন্ধু। আর সেই জিয়াই ষড়যন্ত্র করে মুস্তাক, কর্নেল রশিদ ফারুককে নিয়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ মাটি মানুষ থেকে গড়ে ওঠা দল। জনগণের অধিকার, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঁচার অধিকার এবং এই দেশকে স্বাধীন করার পুরো পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠিত। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু পারেনি, পারবে না। কেন না আমাদের আওয়ামী লীগের শেকড় অনেক শক্তিশালী।