সরকারের পক্ষ থেকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার প্রক্রিয়া চলছে। এই বিষয়টিকেই ক্ষমতাসীনদের ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ।
রোববার (১১ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
করোনামুক্ত জাহাঙ্গীর কবির নানক
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মতে দেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, ধর্ষণ অপরাধের সাজা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া (আইন সংশোধন) শুরু করার জন্য। তাই সাজা বাড়াতে আইন সংশোধন করার যে প্রক্রিয়া তা আমরা শুরু করে দিয়েছি। এই বক্তব্য আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আইনমন্ত্রীর বক্তব্য (আইন সংশোধন) চরম ধাপ্পাবাজি। দেশজুড়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠছে সেই আন্দোলনকে প্রশমিত করার জন্যই নতুন আইন তৈরির উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে। বিদ্যমান যে যাবজ্জীবন সাজার বিধান আছে সেটি প্রয়োগ হয়নি কেন? কারণ বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় গুম, খুন, ধর্ষণ মহামারি রূপ ধারণ করেছে। সুতরাং অপরাধীদের অধিকাংশই পার পায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। তাদের শাস্তি দেয়া দূরের কথা, বরং রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে ফাঁসির আসামিকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। ফলে অপরাধীরা যা খুশি তাই করার উৎসাহ পাচ্ছে। অপরাধ করে রেহাই পাওয়ার সংস্কৃতির জন্যই দেশে নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতন ও সম্ভ্রমহানীসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধগুলো জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম, খুন, ধর্ষণ ও দুর্নীতি করলে পার পাওয়া যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে আটক করে না- এটি যেন দেশের অলিখিত বিধান হয়ে গেছে। দেশের রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে বারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমার (স্টেট ক্লিমেন্সি) কারণে ভয়ঙ্কর অপরাধীরা রেহাই পাওয়াতে তারা এখন সমাজে প্রভু হয়ে বসেছে। খুন, জখম ও নারীর শ্লীলতাহানিকে তারা নিজেদের অধিকার মনে করছে।
রিজভী বলেন, গতকাল চাঁদপুর ও জয়পুরহাটের কালাইয়ে দুটি পৌরসভা নির্বাচন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৪ নং ওয়ার্ডে কমিশনার নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে। শতভাগ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হলেও সেসব এলাকায় বিএনপির এজেন্ট ও ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। চাঁদপুরে পৌর নির্বাচনে ভোটাররা কেন্দ্রে গেলে তাদের ওপর আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। সেখানে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির ২০/২৫ জন নেতাকর্মীসহ ভোটারদের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে। জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভায় এ পর্যন্ত কোনোদিন নৌকা প্রতীক বিজয় লাভ করেনি। কিন্তু সেখানে এবার জোর করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে কেন্দ্র করে দখল করে নৌকায় সিল মেরে তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কেবল একটি মাত্র ওয়ার্ডের ভোট, সেটিও তারা জোর করে কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে ছিনিয়ে নিয়েছে।
রিজভী বলেন, আজ দেশব্যাপী নারী-শিশু নির্যাতনের মহামারিতে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকেই বেশিরভাগ লিপ্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে, অথচ সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার। নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু ভোট ও গণতন্ত্রের শ্লীলতাহানি করে যাচ্ছেন নিরন্তরভাবে। উল্লিখিত নির্বাচনী ঘটনাগুলো আবারও প্রমাণ করল- বর্তমান নির্লজ্জ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে দেশের সকল নির্বাচনের সম্ভ্রমহানি ঘটতেই থাকবে।
তিনি বলেন, গতকাল বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উত্তরার বাসভবনে কতিপয় উশৃঙ্খল বহিরাগত ব্যক্তি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বাসার ক্ষতিসাধন করে।
রিজভী বলেন, আমি সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় হামলার ঘটনার পেছনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতনের ঘটনায় সরকারের অবিমৃশ্যকারী আইনের শাসনবিরোধী ভয়ঙ্কর রূপটি ফুঠে উঠেছে। সারাদেশ নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। গুম, খুন, নারী ও শিশু নির্যাতনের যে মহামারি চলছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতেই সরকারের এজেন্টরা দলের মহাসচিবের বাসভবনে এই হামলা চালিয়েছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী জানাচ্ছি, আমার স্বাক্ষর জাল করে একটি জালিয়াতচক্র চাঁদপুর জেলাধীন হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি উপজেলা ও সংযুক্ত দুটি পৌরসভায় বিএনপির কমিটি বাতিল করা হয়েছে বলে মিথ্যা, বানোয়াট ও সম্পূর্ণরুপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে উক্ত কমিটিসমূহ দলের মহাসচিবের পক্ষ থেকে অনুমোদিত হয়েছে। এর বাইরে আর নতুন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। সুতরাং আমার স্বাক্ষর জাল করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে চিঠিটি প্রকাশ করেছে সেই বিষয়ে বিভ্রান্ত না হতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।