নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি! চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে সংগঠিত হবার প্রচেষ্টা
আস্থা ডেস্কঃ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে আটকের পর বাকী নেতাদের অনেকেই আত্মগোপন করেছে।
নেতাদের আটক, রিমান্ড ও কারাদণ্ড।
মঙ্গলবার রাতে আটকের পর বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল উভয়কেই বুধবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
এর আগে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটক ভাঙ্গার মামলায় আটক হওয়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রবিবার রাতে আদালতে থেকে কারাগারে নেয়া হয় তাঁর জামিন আবেদন না মঞ্জুর হওয়ার পর। মিস্টার আলমগীরের বিরুদ্ধে এর আগে আরও ১০১টি মামলা রয়েছে বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
কিন্তু এবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে আটক করা ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক নেতার বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
আবার স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব এবং ঢাকা -১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী রবিউল ইসলাম রবিসহ বেশ কিছু নেতাকে মামলায় শাস্তি দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে আমান উল্লা আমান এখন কারাগারে আছেন, বাকীরা পলাতক।
আটক হয়ে কারাগারে আছেন দলটির নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব। আটক হয়েছে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন।
আটক এড়াতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় যারা দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পরিচিত, এমন অনেকেই এখন বাসা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছে। ফলে দলটির চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে নেতাদের খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
দলটির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার অনলাইন ব্রিফিংয়ে বলেছে ২৮শে অক্টোবরের মহাসমাবেশ, ২৯শে অক্টোবরের হরতাল ও মঙ্গলবার ও বুধবারের অবরোধকে কেন্দ্র করে ৫৫টি মামলা হয়েছে এবং আটক হয়েছে দলটির ২ হাজার ৫শ ৬৩জন নেতা-কর্মী।
সব মিলিয়ে গত ২৯শে জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৪শ ৭৩ মামলায় দলটির ৬ হাজার ৯শ ৭৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়াও ১৭টি মামলায় নয় জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ১শ ১১ জন নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
এ পরিস্থিতিও নেতাদের জেল বা আত্মগোপনের কারণে দলের অভ্যন্তরে সংকট বা চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন দলটির নেতারা।
তাদের দাবি দলের মূল নেতৃত্ব খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান এবং মাঠ পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা জেলে গেলে বা আত্মগোপনে থাকলে- তারেক রহমান পরিস্থিতি অনুযায়ী যখন যাকে যে দায়িত্ব দিবেন তিনিই সে দায়িত্ব পালন করবেন।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, আটক, হামলা-মামলা নেতাদের জন্য নতুন বিষয় নয়। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য করার জন্য মামলায় সাজা দেয়ার একটি প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়েছিলো।
বিএনপি গণতান্ত্রিক দল, নেতৃত্বের একটি ধারাবাহিকতা আছে। শীর্ষ নেতারা জেলে বা মামলায় অথচ সর্বাত্মক অবরোধই তো পালিত হচ্ছে। নেতাদের আটক/আত্মগোপনে দলের মধ্যে নেতৃত্বের শূন্যতা বা সংকট তৈরির কোন আশঙ্কা নাই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, বিএনপি মূল নেতা হিসেবে তারেক রহমান বিদেশে থেকে দলটি পরিচালনা করলেও মাঠে অধিকাংশ নেতাই যদি জেলে যান বা আত্মগোপনে থাকেন তাহলে দলটির সংগঠিত হবার প্রচেষ্টা চ্যালেঞ্জে পড়তেই পারে। দেখার বিষয় হবে বিএনপি সেই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেয় বা কতখানি দিতে পারে।
তার মতে, এটি সত্যি যে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের মতো দলগুলোতে মূল নেতা যাকে দায়িত্ব দিবেন তাকেই দলের বাকীরা মেনে নেয়। ব্যাপক আটক বা এ ধরনের পরিস্থিতি বিএনপির নেতৃত্বকে নতুন কোন চ্যালেঞ্জে ফেলে কি না আর ফেললেও তা মোকাবেলায় বিএনপি কী করে।