ঢাকা ০৪:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনকারী দেলোয়ারের যেভাবে উত্থান

News Editor
  • আপডেট সময় : ০৭:২০:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০
  • / ১১৩৭ বার পড়া হয়েছে

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশের পর আলোড়ন সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। এ ঘটনার হোতা দেলোয়ার বাহিনীর প্রধার দেলোয়ার হোসেন। তবে নির্যাতনের শিকার নারীর করা মামলায় ৯ আসামির মধ্যে ছিল না দেলোয়ারের নাম। আর এ নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

একটি বাহিনীর প্রধান হয়েও কীভাবে মামলায় নাম নেই। এছাড়া দুই বছর আগের জোড়া হত্যা মামলার আসামি দেলোয়ার। তাহলে কী দেলোয়ার পার পেয়ে যাবেন? এভাবেই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।

নারী নির্যাতনের দায়ীদের শিগগিরই আইনের মুখোমুখি করবো: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

এরইমধ্যে ফেসবুকে দেলোয়ার ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অনেকে সরব হয়ে উঠছেন। দেলোয়ার একলাশপুর ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম একলাশপুর গ্রামের কামাল উদ্দিন ব্যাপারী বাড়ির সাইদুল হকের ছেলে।

২০১৮ সালে একলাশপুর বাজারের পূর্ব পাশের ভিআইপি রোড এলাকায় মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জোড়া হত্যার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হন দেলোয়ার। এরপর স্থানীয় প্রভাবশালী আলমগীর কবির আলো নিজের অবস্থান ধরে রাখতে দেলোয়ারকে জামিনে মুক্ত করে আনেন।

জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর দেলোয়ারকে দিয়েই একটি গ্রুপ তৈরি করেন আলমগীর কবির। সেই গ্রুপে চোর, ছিনতাইকারী, অটোচালক, মাদক সেবনকারী সব একত্রিত হয়। আলমগীর কবির তাদের নিয়ে যায় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে।

আস্তে আস্তে সেই গ্রুপের সবাই একের পর এক অপকর্ম করতে শুরু করেন। কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাননি। বড় বড় নেতাদের ড্রয়িং-রুম থেকে তারা আস্তে আস্তে বেডরুম পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ পান। এরপর আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন গ্রুপের সদস্যরা।

এদিকে, এ গ্রুপে থেকেই দেলোয়ার আরেকটি গ্রুপ তৈরি করেন। এরপর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা মাদক ব্যবসা, হত্যা, যৌন হয়রানিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।

এতদিন কেউ কিছু না বললেও দেশব্যাপী আলোচিত সেই নারীকে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতনের পর অনেকে দেলোয়ার বাহিনীর অপকর্ম বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন।

দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারের গ্রেফতারের খবরে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানা গেছে। সেইসঙ্গে তাদের দ্রুত সাজা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

বর্বরোচিত এ নারী নির্যাতনের ঘটনার মাধ্যমে আলোচনায় এলেও এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ছিল দেলোয়ার।

বছরখানেক আগের অটোচালক দেলোয়ার রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে রাতারাতি বনে যায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ডন। এরপর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন দেলোয়ার। এলাকায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করলেও প্রতিবাদ করার সাহস পাননি কেউ।

একলাশপুর ইউপি আওয়ামী লীগের এক সদস্য বলেন, আলমগীর কবির আলো এই দেলোয়ারকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। তিনিই তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছেন। এরপর থেকেই এলাকায় দেলোয়ারের অপকর্ম বেড়ে যায়।

নারী নির্যাতনের এ ঘটনায় দেলোয়ারসহ জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন নোয়াখালীর এসপি মো. আলমগীর হোসেন। তবে আগে থেকেই দেলোয়ার একাধিক হত্যা ও মাদক মামলার আসামি বলে জানা গেছে।

৪ অক্টোবর দুপুরে ঘটনার ৩২ দিন পর নারীকে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ হলে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। ঘটনার পর থেকে ৩২ দিন অভিযুক্ত স্থানীয় দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতিত নারীর পরিবারকে কিছুদিন অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে তার পুরো পরিবারকে বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে। এতে ঘটনাটি এলাকাবাসী ও প্রশাসনের অগোচরে থাকে। অবশেষে জানাজানি হলে পুলিশ ও র‌্যাব কয়েক দফায় অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামিসহ এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে।

নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনকারী দেলোয়ারের যেভাবে উত্থান

আপডেট সময় : ০৭:২০:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশের পর আলোড়ন সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। এ ঘটনার হোতা দেলোয়ার বাহিনীর প্রধার দেলোয়ার হোসেন। তবে নির্যাতনের শিকার নারীর করা মামলায় ৯ আসামির মধ্যে ছিল না দেলোয়ারের নাম। আর এ নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

একটি বাহিনীর প্রধান হয়েও কীভাবে মামলায় নাম নেই। এছাড়া দুই বছর আগের জোড়া হত্যা মামলার আসামি দেলোয়ার। তাহলে কী দেলোয়ার পার পেয়ে যাবেন? এভাবেই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।

নারী নির্যাতনের দায়ীদের শিগগিরই আইনের মুখোমুখি করবো: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

এরইমধ্যে ফেসবুকে দেলোয়ার ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অনেকে সরব হয়ে উঠছেন। দেলোয়ার একলাশপুর ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম একলাশপুর গ্রামের কামাল উদ্দিন ব্যাপারী বাড়ির সাইদুল হকের ছেলে।

২০১৮ সালে একলাশপুর বাজারের পূর্ব পাশের ভিআইপি রোড এলাকায় মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জোড়া হত্যার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হন দেলোয়ার। এরপর স্থানীয় প্রভাবশালী আলমগীর কবির আলো নিজের অবস্থান ধরে রাখতে দেলোয়ারকে জামিনে মুক্ত করে আনেন।

জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর দেলোয়ারকে দিয়েই একটি গ্রুপ তৈরি করেন আলমগীর কবির। সেই গ্রুপে চোর, ছিনতাইকারী, অটোচালক, মাদক সেবনকারী সব একত্রিত হয়। আলমগীর কবির তাদের নিয়ে যায় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে।

আস্তে আস্তে সেই গ্রুপের সবাই একের পর এক অপকর্ম করতে শুরু করেন। কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাননি। বড় বড় নেতাদের ড্রয়িং-রুম থেকে তারা আস্তে আস্তে বেডরুম পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ পান। এরপর আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন গ্রুপের সদস্যরা।

এদিকে, এ গ্রুপে থেকেই দেলোয়ার আরেকটি গ্রুপ তৈরি করেন। এরপর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা মাদক ব্যবসা, হত্যা, যৌন হয়রানিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।

এতদিন কেউ কিছু না বললেও দেশব্যাপী আলোচিত সেই নারীকে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতনের পর অনেকে দেলোয়ার বাহিনীর অপকর্ম বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন।

দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারের গ্রেফতারের খবরে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানা গেছে। সেইসঙ্গে তাদের দ্রুত সাজা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

বর্বরোচিত এ নারী নির্যাতনের ঘটনার মাধ্যমে আলোচনায় এলেও এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ছিল দেলোয়ার।

বছরখানেক আগের অটোচালক দেলোয়ার রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে রাতারাতি বনে যায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ডন। এরপর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন দেলোয়ার। এলাকায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করলেও প্রতিবাদ করার সাহস পাননি কেউ।

একলাশপুর ইউপি আওয়ামী লীগের এক সদস্য বলেন, আলমগীর কবির আলো এই দেলোয়ারকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। তিনিই তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছেন। এরপর থেকেই এলাকায় দেলোয়ারের অপকর্ম বেড়ে যায়।

নারী নির্যাতনের এ ঘটনায় দেলোয়ারসহ জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন নোয়াখালীর এসপি মো. আলমগীর হোসেন। তবে আগে থেকেই দেলোয়ার একাধিক হত্যা ও মাদক মামলার আসামি বলে জানা গেছে।

৪ অক্টোবর দুপুরে ঘটনার ৩২ দিন পর নারীকে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ হলে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। ঘটনার পর থেকে ৩২ দিন অভিযুক্ত স্থানীয় দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতিত নারীর পরিবারকে কিছুদিন অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে তার পুরো পরিবারকে বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে। এতে ঘটনাটি এলাকাবাসী ও প্রশাসনের অগোচরে থাকে। অবশেষে জানাজানি হলে পুলিশ ও র‌্যাব কয়েক দফায় অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামিসহ এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে।