নীলফামারিতে বাদাম বিক্রি করছে ১৩ বছরের জুয়েল রানা।
নীলফামারী প্রতিনিধিঃ নীলফামারী সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়ন রামগঞ্জ বাজারে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জুয়েল রানা বাদাম বিক্রি করছে। শিশু জুয়েলের সঙ্গে কথা হলে সে জানায়,এখন করোনার কারনে স্কুল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে বিক্রি করে বাদাম।
পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময় পেলে বাদাম বিক্রি করে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করে জুয়েল। রামগঞ্জ বাজারে শুধু শিশু জুয়েলেই সীমাবদ্ধ নয়, বেঁচে থাকার জন্য খাবারের অর্থ জোগাতে সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও গ্রামের দরিদ্র পরিবারের শিশুরা বাদাম বিক্রিসহ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত।
শিশুরা শ্রমে জড়িয়ে পড়ার ফলে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা ও বিনোদনের মতো মৌলিক অধিকার থেকে। অনুসন্ধান করে দেখা যায়, শিশুদের বয়স একই, শুধু পেশাটা ভিন্ন। যে বাসে করে প্রতিদিন শিশুরা স্কুলে যায়, সে বাসের হেলপারও একই বয়সী। দেশের জাতীয় শ্রম আইন-২০১৬ (সংশোধিত ২০১৮) অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোনো প্রকার কাজে নিযুক্ত করা যাবে না। যদি কেউ শিশুশ্রমিক নিয়োগ করে, তাকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হবে।
১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোরদের হালকা কাজ করার কথা উল্লেখ থাকলেও নীলফামারীর চিত্র ও এর বাস্তবতা ভয়াবহ। নীলফামারীতে ১২ বছরের নিচে বহু শিশু বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সঙ্গে জড়িত। যে বয়সে স্কুলব্যাগ কাঁধে নিয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা, নীলফামারিতে দারিদ্র্যের গোলকধাঁধায় পথ হারিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে শিশুরা। স্কুলে যাওয়ার শখ থাকার পরও স্কুলগামী হতে পারছে না অনেক কোমলমতি শিশু। সরেজমিন দেখা যায়, নীলফামারীতে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের ৫০ শতাংশ হেলপার অপ্রাপ্তবয়স্ক।
গ্যারেজ, ওয়ার্কশপের দোকান, মিল কারখানা, সিগারেট বিক্রি, ফুল বিক্রি, ফুটপাতে পানি বিক্রি, বাদাম বিক্রি ও হোটেল-রেস্টুরেন্টের কর্মচারী এবং মহাসড়কজুড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে অনেক শিশু, শ্রমের পাশাপাশি অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। আবার অনেক শিশু জড়িয়ে পড়ছে নেশার মতো ভয়ংকর জগতে।
শিশুশ্রম নিরসনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার পরও উন্নয়নের ভিড়ে শিশুশ্রম নিরসনে নজর নেই প্রশাসনের। দ্রুত এই শ্রমের প্রতিকার করা না গেলে ক্রমেই হারিয়ে যাবে এই শহরের কোমলমতি শিশুদের শৈশব।