পদ্মাসেতু হয়ে সাত মিনিটে ট্রেন ভাঙ্গায়-উচ্ছ্বাসিত জনগণ
মামুনুর রশীদ/ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
নতুন রেলপথ, নতুন অভিজ্ঞতা, উচ্ছ্বাসিত এলাকাবাসী, রেল জংশন ঘিরে উৎসুক জনতার ভীর, জনতার ভীরে একাকার হয়ে গেছে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সংসদ সদস্য ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।
অবশেষে দুপুর সাড়ে বারটার সময় মাহেন্দ্রক্ষণ ঘনিয়ে আসতেই বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি রেল হুইসেল বাঁজাতেই উপস্থিত জনতার জয়বাংলা বলে চিৎকার। এসময় গোঁটা রেল জংশন এলাকা আরও মুখরিত হয়ে উঠে।
নতুন নতুন ইঞ্জিন যুক্ত আটটি বগি নিয়ে আন্তনগর স্পেশাল ট্রেনটি স্টেশনে থামতেই একটি বগী থেকে হাত নারিয়ে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। মন্ত্রী রেলবগীর থেকে নামতেই ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো: কামরুল আহসান তালুকদার, পুলিশ সুপার মো শাহজাহান, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।
রাজধানী ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা মাওয়ার রেল লাইনের প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রেনটি ভাঙ্গায় মাত্র ৭ মিনিটে পদ্মা সেতু হয়ে আজ বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর সোয়া বারটার দিকে পৌঁছানোর মধ্যে দিয়ে ঢাকা হতে ভাঙ্গা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন পরিচালনার শুভ উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
উপস্থিত সাংবাদিকদের রেল মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সারাদেশে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কাজ শুরু করেন। আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়নের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় এনে সাধারণ মানুষের জন্য রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপদ রেল যাত্রায় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতীয় নির্বাচন সমাগত হলেও রেল পথের চলমান উন্নয়নের কাজের ত্রুটি হবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনাকে আবারও সরকার গঠন করার সুযোগ করে দিতে হবে। কারন শেখ হাসিনার হাতেই এদেশ নিরাপদ এবং সঠিক উন্ননের মধ্যদ দিয়ে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।
রেল মন্ত্রী আরও জানান, বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভাঙ্গাগামী ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। ১১ টা ২৭ মিনিটে ট্রেনটি পদ্মা সেতু পারি দিয়ে জাজিরা রেল স্টেশন পর ভাঙ্গা বামনকান্দা রেল স্টেশনে এসে পৌছায়। এভাবেই পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রায়ল করে বিশেষ ট্রেনটি। আগামী ১০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলেও জানান রেল মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান এমপি, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ কামরুল আহসান,পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন, মোঃ শাহজাহানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও সর্বস্তরের জনগণ।
উল্লেখ্য ইশ্বরদী থেকে ফরিদপুর হয়ে স্পেশাল ট্রায়াল ট্রেন এমটি ঢাকার উদ্দেশ্যে বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরে আসে পদ্মা রেল সেতুর ওপর দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রায়ালের জন্য। ট্রেনের চালক ছিলেন আবুল কাশেম। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় নতুন নতুন ইঞ্জিন যুক্ত আটটি বগি নিয়ে আন্তনগর বিশেষ ট্রায়াল ট্রেন এমটি ঈশ্বরদী থেকে ছেড়ে আসে। রাজবাড়ী স্টেশনের অবস্থান করার পর বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় বিশেষ ট্রায়াল ট্রেন এমটি ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ফরিদপুর ত্যাগ করে এবং ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌছায়।
এদিকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকায় রেল সংযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আসায় উচ্ছ্বাসিত ফরিদপুরবাসী। বিশেষ করে ভাঙ্গার সাধারণ জনগণের অভিমত নতুন ট্রেন খুলে গেল ব্যাবসায়ীক দ্বার। পার সম্ভবনা নয়,ভারী শিল্পলের অঞ্চল গড়ে উঠবে। বেকার সমস্যা দূর হবে। ঢাকার দ্বিতীয় রাজধানী হয়ে উঠবে ফরিদপুর। ২০২৪ সালের জুন মাসেই ঢাকা থেকে ট্রেন চলাচল করবে যশোর। ১৭২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের পদ্মাসেতু হয়ে সীমান্তবর্তী এলাকা বেনাপোল-যশোর-খুলনা হয়ে বহু ভারী ভারী শিল্পক যন্ত্রপাতি নিয়ে রেল আসবে ফরিদপুরে। ঢাকা থেকে চট্রগ্রামেও যাবে। পদ্মাসেতু ও পদ্মাসেতু রেল লাইন দুটি স্বপ্ন পুরোন করায় আওয়ামীলীগ সরকার ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন উপস্থিত সকল নারী পুরুষ।