পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কানাডার টরেন্টোর একটি আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কানাডার আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, ‘এই মামলায় যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে, তা অনুমানভিত্তিক, গালগল্প এবং গুজবের বেশি কিছু নয়।’
চলতি বছরের জুনে দেয়া পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) পদ্মা সেতুতে সর্বশেষ স্প্যানটি বসানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হলো। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হবে।
এই পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল ২০১১ ও ২০১২ সালে। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রকল্পের নির্মাণকাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন কানাডার একটি কোম্পানি এসএনসি-লাভালিন’র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে বিশ্বব্যাংক। দুর্নীতির ষড়যন্ত্র প্রমাণিত হওয়ার আগেই বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো ঋণচুক্তি স্থগিত করে এবং সময়ক্ষেপণ করে। ফলে প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়।’
বাল্যবিয়ে রোধে জন্ম-বিয়ে নিবন্ধন ডিজিটাল করার সুপারিশ
২০১২ সালের ৩০ জুন বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘বিশ্বব্যাংক বলছে, সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা, কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি ব্যক্তিদের মধ্যে যোগসাজশে বিভিন্ন সূত্র থেকে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে। এসব তথ্য-প্রমাণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, (তৎকালীন) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে দেয়া হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে এসব তথ্য-প্রমাণ দেয়া হয়।’
আইএমইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ও স্বাধীনচেতা নেতৃত্ব ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ২০১২ সালের ৯ জুলাই অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ সভার বৈঠকে সরকার সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে প্রকল্পটির ডিপিপিতে দ্বিতীয়বার সংশোধন করা হয়।’
এরপর ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কানাডার টরেন্টোর একটি আদালতে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তার আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুই দফা অনুসন্ধান করে এই অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি।
এছাড়া পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে মিথ্যা গল্প সৃষ্টিকারী কে তা জানতে চেয়ে এবং প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করার জন্য কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে ২০১৭ সালে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে তাদের কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, যোগাযোগ সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।