পদ্মা সেতুর আশীর্বাদে শিল্পায়নের হিড়িক পড়েছে ফরিদপুরে
মামুনুর রশীদ/ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উন্নয়নমুখী রাজনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও অর্জন কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেতুর নির্মাণের মধ্যে দিয়ে দক্ষিন বঙ্গের মানুষের আর্থ সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখছে পদ্মাসেতু। গত বছরের আজকের ২৫ জুন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশের মানুষের জন্য তার কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা পর থেকে বদলে গেছে ফরিদপুরের জনপদের চিত্র।
বিশেষ করে ঢাকা থেকে শুরু হয়ে ভাঙ্গা উপজেলার গ্রামীণ সড়কের দু’পাশে কলকারখানা ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ যেন শুরু হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের এক নতুন শিল্প বিপ্লব। প্রাপ্ত তথ্য ও সাধারণ মানুষের ভাষ্যমতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণ এখন ফরিদপুর। বড় ব্যয়র শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য এক্সপ্রেসওয়ের দু’পাশ ছাড়াও মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের দু’পাশে জমি ক্রয় করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের থেকে। সে সাথে চলছে অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তুতি।
গত বছরে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে সূচনা হয় ফরিদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলায় নতুন এক স্বর্ণযুগের। রাজধানীর সাথে যোগাযোগ সহজতর নিমিত্তে শিল্প, কৃষি ও পর্যটনখাতে বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে কর্মপরিকল্পনা শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা অনেকেই মনে করছেন অত্র জেলাগুলোর সকল দিক থেকে উন্নতি করা হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে লাখো মানুষের।
অপর দিকে পদ্মাসেতু ও ঢাকা-ভাঙ্গা সড়কে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ফলেএ রুটে যাতায়াতের সময় কমেছে। পদ্মা সেতুর আগে ফরিদপুর জেলা সদর থেকে ঢাকায় যেতে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় দুই ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীতে পৌঁছানো যাচ্ছে। রয়েছে গ্রামীণ এলাকা থেকে পরিবহন যোগে দ্রুত পণ্য ঢাকায় পৌঁছে যাওয়ার।
পরিবহনের পাশাপাশি নতুন সুখবর হচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু হচ্ছে পদ্মাসেতু দিয়ে রেল চলাচল। রেল্মন্ত্রীর ভাঙ্গায় সফরকালে জানিয়ে ছিলেন আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন ঢাকা ভাঙ্গা যশোর রেল লাইনের আনুষ্ঠানিকতা। অভিজ্ঞজ মহলে মনে করছেন রেল চলাচল শুরু হলে যাত্রী চলাচল ও পণ্য আনা-নেয়া আরো সহজতর হবে। এর ফলে ফরিদপুরে বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট হচ্ছেন দেশীয় ও বিদেশী সংস্থার উদ্যোক্তারা। ইতিমধ্যে ভাঙ্গা উপজেলায় এক্সপ্রেসওয়ে এবং জাতীয় মহাসড়কের দু’পাশে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ার কাজ দৃশ্যমান।
ভাঙ্গার বাজারের ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, পদ্মাসেতু হওয়ার ফলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধার খাত বেশ ব্যাপক হয়েছে। শনিবার ব্যবসায়ীদের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন দুপুরে মোকামে গিয়ে পাইকারী মালামাল ক্রয় শেষে রাত হওয়ার আগেই নিজের এলাকায় ফিরে আসতে পারি। মোকামে করতে গেলেও মনে হয় ভাঙ্গাতেই অবস্থান করে মালামাল কিনছি। তিনি আরও বলেন মাদারীপুরের পাচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের দু’পাশে শত শত বিনিয়োগকারী জমি কিনেছেন। অনেকে জমি কেনার অপেক্ষায় রয়েছেন। একারণে ভাঙ্গার মাঠের জমির দামও হু হু করে বেড়েছে। যেই জমির দাম ছিল এক লাখ টাকা শতাংশ এখন ৩-৫ লাখ টাকা দাম উঠেছে। কিন্ত এরপরেও জমি পাওয়া যাচ্ছে না।
সাংবাদিক মাসুম অর রশীদ বলেন, কয়েক বছরের ব্যবধান বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মাসেতুর উদ্বোধনের পর থেকে ভাঙ্গার সকল দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। কিছু দিন আগের সেই চেহারার সঙ্গে ভাঙ্গাকে মেলানো যায় না। একের পর এক নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ গড়ে উঠআর ফলে ভাঙ্গায় নতুন এক শিল্প বিপ্লব উত্থাপন হতে চলেছে বলে তার অভিমত।
ফরিদপুর জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই আজ যেমন পদ্মাসেতু স্বপ্ন থেকে বাস্তবে রুপ নিয়েছে, তেমনি এখানকার জনগণের জীবনমানেরও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এককালের পশ্চাদপদ এই জনপদ এখন আধুনিক নগর। দ্রুতই এখানে শিল্পায়নের বিস্তার ঘটতে চলেছে।
ভাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোঃ আইয়ুব আলী বলেন, পদ্মাসেতুর কল্যাণে ভাঙ্গায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। এতে মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বদলে যাবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা। এজন্য তিনি দেশের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার বলে উল্লেখ করেন নিজের অভিমত ব্যক্ত করার সময়।
ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার দেশের ও জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নের সারথী একটি দল। জাতির জনকের কন্যা ক্ষমতায় আছেন বলে দেশের যে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে বিগতে দিনের কোন সরকার উন্নয়ন দিতে পারে নি বলে শেখ হাসিনা সরকার জনগনের কাছে আস্থার প্রতিক। পদ্মা সেতুর নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী যে দৃঢ়তার সাথে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার মানুষের জন্য তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন বাংগালী জাতি বীরের জাতি। আমরা পারি এবং দেশের উন্নয়নে যে কোন কাজ চ্যালেঞ্জের সাথে করার মত মনোবল আমাদের রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মাসেতুর কারণে ফরিদপুর জেলার মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তনের পাশাপাশি ধীরে ধীরে বড় বড় কলকারখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে ফরিদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ব্যাপক কর্মসঙস্থান গড়ে উঠবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করেছেন। সরকার উন্নয়নমুখী প্রতি আস্থা রেখে বিনিয়োগকারীরা নিজেদে থেকে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। তিনি আরও বলেন, প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তুলতে যুবকদের নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ফরিদপুরের প্রধান কৃষি ফসল পাটভিত্তিক নানা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন পদ্মাসেতুর জন্য এখানে মানসম্মত একটি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে যা যা দরকার পর্যায়ক্রমে তা গড়ে উঠবে বলে মনে করেন।