পশ্চিমকে পাশ কাটিয়ে নতুন শক্তির উত্থান!
- আপডেট সময় : ০১:৪৩:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৩৯১১ বার পড়া হয়েছে
পশ্চিমকে পাশ কাটিয়ে নতুন শক্তির উত্থান!
মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ
ইউরোপে বিগত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধে আগ্রাসনকারীদের প্রতি সংহতির বার্তা দিতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং প্রথমবারের মতো রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া ও ভারতের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে যেকোনো পরিস্থিতিতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের থাকা উচিত।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের এমন বার্তাকে পাত্তা না দিয়ে, নিজেদের মতো করে এগিয়ে যাবে পারমাণবিক শক্তিধর এই চাকরি দেশ। শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মধ্য প্রাচ্যের ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান। দেরিতে হলেও ইরানের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে বিশ্বের অনেক দেশ। তার সাথে নতুন করে যুক্ত হল চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, এবং সর্বশেষ ভারত।
বিশ্লেষকদের মতে, শি স্বৈরশাসকদের পাশে দাঁড়িয়ে পশ্চিমা বিশ্বের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চাইছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের হুমকি, নিষেধাজ্ঞা আর শুল্ককেন্দ্রিক কূটনীতি দীর্ঘদিনের মিত্রতার সম্পর্কে চাপ তৈরি করছে। অপর দিকে বেইজিংয়ে ভ্লাদিমির পুতিন, কিম জং উন এবং নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি কতটা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন চীনা প্রেসিডেন্টে তা পশ্চিমা নেতারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।
চীনের রাজধানীতে এই ঐতিহাসিক বৈঠক নতুন এক ত্রিপক্ষীয় অক্ষ গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত জুনে রাশিয়া–উত্তর কোরিয়ার মধ্যে হওয়া প্রতিরক্ষা চুক্তির ওপর ভিত্তি করে বেইজিং ও পিয়ংইয়ংয়ের ঘনিষ্ঠ জোট সেই কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। এর ফলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সামরিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
গতকাল বৈঠকের শেষ দিন সোমবার শি জিন পিং মন্তব্য করেন, আমাদের অবশ্যই আধিপত্যবাদ আর ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে এবং প্রকৃত বহুপক্ষবাদের চর্চা করতে হবে। এই মন্তব্যকে যুক্তরাষ্ট্র সহ তার মিত্রদের প্রতি পরোক্ষ আক্রমণ বলে মনে করা হচ্ছে।
তিয়ানজিনে শি ও পুতিন ২০ টির বেশি অপশ্চিমা দেশের নেতাদের সামনে তাঁদের নতুন নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থার প্রস্তাব তুলে ধরেন। এরপর কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক তাদের আরেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। ৩ সেপ্টেম্বর চীনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ।
অপদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কার পাইয়ে দেওয়ার জন্য নোবেল পুরস্কার বিতরণ কমিটির উপর চাপ প্রয়োগের জন্য ভারতের কাছে আবেদন করে এবং রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় করা বন্ধ করার জন্য চাকরি করে। কিন্তু ভারত কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার না করায় যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র ভারতের উপর ট্রাম্প শুল্কনীতি আরোপ করে। এতে ভারতীয় পণ্যের উপর চাপ তৈরি হওয়ায় নয়া দিল্লি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
এই শুল্কনীতির সূত্র ধরে চির প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ভারতের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর কারণে ভারত সেই হাতকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার কৌশল অবলম্বন করেছে। তাই দীর্ঘ সাত বছর পর প্রথমবার চীন সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শি তাঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন করে স্বস্তি ফেরানোর চেষ্টা করেছেন।
অপর দিকে ট্রাম্প নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তিনি দাবি করছেন যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন, আলাস্কায় পুতিনকে নিয়ে ইউক্রেন শান্তি সম্মেলন করেছেন এবং এ বছরই কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য নতুন সামরিক শক্তির জোট গঠন করে বিশ্বকে শাসন করা। কিন্তু চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও ভারত তা বুঝেই পেরে একত্রিত হচ্ছে। এই শক্তিগুলোর নেতৃত্বে যদি নতুন সামরিক শক্তির জোট গড়ে ওঠে, যেখানে এক যুদ্ধ আগ্রাসীও যুক্ত থাকে, তাহলে তা পশ্চিমা দুনিয়ার জন্য বড় সতর্ক সংকেত হয়ে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল ব্যুরো অব এশিয়ান রিসার্চের বিশ্লেষক ইয়ংজুন কিম মার্চ মাসে লিখেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ মস্কো ও পিয়ংইয়ংকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে। রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া এখন প্রায় অবশ্যম্ভাবী।
ইয়ংজুন আরও বলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কারণে
কয়েক বছর আগেও চীন ও রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিল। কিম জং উন ইউক্রেন যুদ্ধেও রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন। এখন তারা উত্তর কোরিয়ার সামরিক মিত্র হয়ে উঠছে।
উত্তর কোরিয়ার নেতা ইউরোপের দোরগোড়ায় পুতিনের পক্ষে লড়াই করতে ১৫ হাজারের বেশি সেনা পাঠিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, কুরস্ক অঞ্চলে লড়াই করতে যাওয়া উত্তর কোরিয়ার সেনাদের মধ্যে প্রায় ৬শ জন ইতিমধ্যেই নিহত হয়েছে। তারা আশঙ্কা করছে, পিয়ংইয়ং আরও সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২৪ সালে তিনিই পিয়ংইয়ংয়ে পুতিনকে স্বাগত জানান, ২৪ বছরের মধ্যে এটিই ছিল প্রথম শীর্ষ সম্মেলন।
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, কুরস্ক অঞ্চলে লড়াই করতে যাওয়া উত্তর কোরিয়ার সেনাদের মধ্যে প্রায় ৬শ জন ইতিমধ্যেই নিহত হয়েছে। তারা আশঙ্কা করছে, পিয়ংইয়ং আরও সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পুতিন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে বলেন, নিরাপত্তা ক্ষেত্রে একটি ন্যায্য ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা জরুরি। এটি হলে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিরাপদ। তাঁর এই বেইজিং সফর চীন, উত্তর কোরিয়া, ভারত এবং ইরানের সঙ্গে বৈঠক পুতিনের পরবর্তী কৌশলের ইঙ্গিত। আগামীকাল বুধবারের সামরিক কুচকাওয়াজে ইরানের প্রেসিডেন্টও যোগ দিচ্ছেন। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা এটিকে বলছেন ‘’অশান্তির অক্ষ” বলে মন্তব্য করেছে।
এই মন্তব্যের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর অশান্তির কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন চীনা বিশ্লেষকরা। উদাহরণ টানতে গিয়ে তারা বলেন, আমেরিকা কোন কারন ছাড়াই নিজেদের কার জন্য ইরাক, আফগানিস্তান, ইরান আক্রমণ করে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে দৈত্য নীতি গ্রহণ করে অশান্ত করে তুলেছে, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলে হামলার সমর্থন দিয়ে অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে।