পাংশায় জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা
স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজবাড়ীর পাংশার প্রতিটি ইউনিয়নে চলছে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর নামে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক দের কাছে থেকে মোট অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মহা উৎসব।
শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধনে জন্ম তারিখ সংশোধন, পিতা-মাতার নাম সংশোধন, পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডিতে নাম সংশোধন এরকম বিভিন্ন সমস্যার কারণে জন্ম নিবন্ধন উত্তোলন করতে দিতে হচ্ছে ৫০০-২০০০ টাকা। এটি জাতীয় সমস্যা। এ নিয়ে সংশোধন করতে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে সঠিকভাবে সেবা না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী ও নাগরিক।
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন এর ব্যাপারে জনগণের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কথামতো গুনতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে সর্বচ্চ ২০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন নিতে জমা দিতে হচ্ছে মা, বাবার জন্ম নিবন্ধনের কপি। এতে করে শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধনের সাথে অনেক সময় মিল পাওয়া যাচ্ছেনা মা, বাবার নাম। আর তা সংশোধনের জন্য নেওয়া হচ্ছে ভোটার আইডি কার্ড। সেখানেও দেখা দিচ্ছে নামের জটিলতা এতে করে ভোটার আইডি কার্ডও করতে হচ্ছে সংশোধন। আর এই সুযোগে সরিষা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও চেয়ারম্যান ফায়দা লুটছে। নিবন্ধন সংশোধনের জন্য নিবন্ধন প্রতি নিচ্ছেন ৫০০-২০০০ টাকা।
ইউনিয়ন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ১০ দিনে সংশোধনের জন্য আবেদন কারীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এর মধ্যে সম্পর্কের খাতিরে শতকরা দশ জনের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা। বাকি নব্বই শতাংশরই গুনতে হচ্ছে ১০০০-২০০০ টাকা। এতে করে হিসেবে দেখা যাচ্ছে প্রায় মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরিষা ইউনিয়নে কর্মরত কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।
যেখানে সরকার নির্ধারিত সংশোধন লিপিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে জন্ম নিবন্ধনে জন্ম তারিখ সংশোধন ফি ১০০ টাকা আর জন্ম তারিখ ব্যতীত নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা সংশোধনের জন্য ফি ৫০ টাকা। এছাড়া এই বিষয়ক অন্যান্য সেবা নিতে লাগবে না কোনো প্রকার ফি কিংবা অর্থ।
একই অবস্থা পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়ন সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে। এ ব্যাপারে অর্থ নিয়ে জনগণকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা নানারকম সমস্যার কথা বলে সেবাদানে অনিয়ম করছেন যত্রতত্র নিজেদের ইচ্ছে মতো অর্থ দাবি করছে। কসবামাজাইল ইউনিয়নে ব্রান্ডের পণ্যের মতো এক রেট। আর তা হলো ৩০০ টাকা। তবে একাধিক ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত সচিব শিকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া ২০০ টাকার ফি আদায়ের কথা।
জাতীয় সেবা এখন আপনার হাতের নাগালে। জাতীয় পরিচয়পত্র-সমাধান কেন্দ্র নামের একটি সূত্র জানায়, আইডি কার্ড উত্তোলন, সংশোধন, নিবন্ধন, সকল কাজ খুব দ্রুত সময়ে নির্ভুল ভাবে করার জন্য নির্বাচন কমিশন সবসময় চেষ্টা করে আসছে। মূলতঃ জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি কার্ডটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সম্পত্তি। এই বিষয়ে দায়িত্বে থাকা যদি কেউ অনিয়ম করে আর জনগণের সেবা না দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করেন, নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ নেন তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে উক্ত ব্যাপারে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর জনসাধারণের হয়রানি কতোটা কমবে সেটাই দেখার বিষয় বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।
এব্যাপারে সরিষা ও কসবামাজাইল ইউনিয়ন সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ফি হিসেবে ১০০ টাকা আর উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ টাকা মোট ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে হয়তোবা উদ্যোক্তারা না বুঝে ১০০-২০০ টাকা অতিরিক্ত নিয়েছিল। কিন্তু হাজার টাকার অভিযোগের ব্যাপারে কেও কোনো প্রকার কথা বলেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ইউপি সচিব অভিযোগ করে বলেন, আমরা এমন একটা অবস্থার মধ্যে চাকরি করি যেখানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কথা মান্য করে আমাদের চলতে হয়। তাদের কথার বাইরে গিয়ে কোনো ন্যায় কাজ করলে কিংবা তাদের কথামতো কোনো অন্যায় কাজ না করলে আমাদের অনেকটা হেনস্তা হতে হয়। ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়।
এব্যাপারে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি আমলে নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি বরং এর ধারাকে উল্টো পথে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন।