ঢাকা ০২:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo চট্টগ্রাম ইপিজেডে আগুন নেভাতে সেনা ও নৌবাহিনীর সহায়তা Logo পানছড়ির মধ্যনগরে ভোট ফর ওয়াদুদ ভূইয়া-ভোট ফর ধানের শীষ ক্যাম্পেইন অনুষ্টিত Logo ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা ও অনুভূতিহীন কর্তৃপক্ষ Logo চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাঁচ কলেজে পাস করেনি কেউ! Logo গরমছড়িতে জমি দখল নিয়ে তাণ্ডব, ফটিকছড়িতে বসতবাড়িতে হামলা! Logo চাকসুতে ভিপি-জিএস শিবিরের, এজিএস ছাত্রদলের Logo এইচএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাসের সংখ্যায় বিপর্যয় — মাত্র ৩৪৫ প্রতিষ্ঠান Logo কিশোরগঞ্জে শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ হামলা ও লুটপাট Logo নিজের যোগ্যতায় আসতে হবে: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর Logo শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল শুরু যেহেতু শিক্ষকগণ কেন্দ্রিয় শহীদাঙ্গনে জড়ো।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও উন্নয়নে সেনাবাহিনী-৪

Astha DESK
  • আপডেট সময় : ০১:৫১:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১১৮৩ বার পড়া হয়েছে

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও উন্নয়নে সেনাবাহিনী-৪

মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ

পার্বত্যাঞ্চলে সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনী স্থানীয়দের সমবায় সমিতির মাধ্যমে গভীর নলকূপ স্থাপনে সহায়তা করছে। এতে বিভিন্ন এলাকা একদিকে যেমন সেচের আওতায় আসছে, অন্যদিকে স্থানীয়দের খাবার পানির অভাব দূর করছে।

পার্বত্যাঞ্চলের পানি ও বিদ্যুৎ আসার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে কৃষিকাজ। বেড়েছে চাষাবাদ। প্রান্তিক চাষিগণ প্রত্যন্ত এলাকা হতে বিভিন্ন উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও ফলফলাদি পরিবহনে সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নে অবদান রাখছে। এছাড়াও বনসম্পদ রক্ষাকল্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজ ব্যবস্থাপনায়, আবার কখনো বিভিন্ন এনজিও ও স্থানীয় জনসাধারণের সমন্বয়ের মাধ্যমে পর্যাপ্ত বনায়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।

পর্যটনের জন্য পার্বত্য ভূখ- বরাবরই আকর্ষণীয় হওয়া সত্ত্বেও যোগাযোগ ও আবাসন সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকায় তিন পার্বত্য জেলায় এ সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছিল না। সরকারের আহ্বানে তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোর লক্ষ্যে সেনাবাহিনী কর্তৃক যোগাযোগ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও রাত্রিযাপনের সুবিধা তৈরি হওয়ায় এখন হাজার হাজার সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন দুর্গম স্থানে ভ্রমণ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

সাজেক, নীলগিরি, কাপ্তাই লেকের পাশে রিসোর্ট নির্মাণ এসব পদক্ষেপের উল্লেখযোগ্য দিক। আলুটিলা, বগা লেক, স্বর্ণ মন্দির, চিম্বুক হিল, শুভলং জলপ্রপাত প্রভৃতি পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী পর্যটন শিল্প বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার ফলে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে, যা পরোক্ষভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

পার্বত্য অঞ্চলের হতদরিদ্র পাহাড়ি-বাঙালি মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে সেনাবাহিনী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে কম্পিউটার ও সেলাই মেশিন বিতরণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। এতে পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি-বাঙালি নারীরা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

সেনা ক্যাম্পের সন্নিকটে অথবা উপজেলার সুবিধাজনক স্থানে সেনাবাহিনী হতদরিদ্র পাহাড়ি-বাঙালি মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার প্রয়াসে কম্বল ও ব্যাগ ফ্যাক্টরি, কুটির শিল্প ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে অনেক পাহাড়ি-বাঙালি মহিলাকে চাদর, থামি, লুঙ্গি ও গামছা তৈরির প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে।

এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন তাঁত তৈরি ও কাঁচামাল ক্রয় বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করা হয়। বিভিন্ন গুচ্ছগ্রামে মহিলাদের কর্মসংস্থান তৈরিতে উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে মুরগির ফার্ম পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান, মাশরুম, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফল চাষের প্রশিক্ষণ ও প্রত্যক্ষ সহায়তা প্রদান করায় তাদের পারিবারিক ভরণপোষণ ক্ষমতা ও সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পাহাড়ে সন্ত্রাস দমনে ও শান্তি রক্ষায় সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর। এক সময় তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ি সন্ত্রাসী দলগুলোর পাল্টাপাল্টি হামলা ও খুনোখুনির কারণে ভয় নেমে আসত সেখানকার বসবাসরত সাধারণ মানুষের ভেতর। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এবং বাঙালিদের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ে সরকার ও সেখানকার আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কমে এসেছে চাঁদাবাজি।

বেড়েছে পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি। আগে যেখানে দিনেদুপুরে গাড়ি থামিয়ে, ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে, অপহরণ করে বিরাট অঙ্কের চাঁদাবাজি হতো. সেখানে তা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। অন্যদিকে, আগে সন্ত্রাসীদের ভয়ে পাহাড়ি সড়কে বিকাল ৫টার পর কোনো যানবাহন চলাচল না করলেও বর্তমানে ২৪ ঘণ্টাই বিলাসবহুল গাড়ি চলাচল করছে, যা শান্তি চুক্তির অভাবনীয় সাফল্য। এসব অপকর্ম থেকে পাহাড়ের পাহাড়ি-বাঙালি মানুষকে শান্তিতে রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকতার সঙ্গে দিনরাত অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি সেনাবাহিনী পাহাড়ে বসবাসরত লোকজনের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়নমূলক নানা প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে। নানাবিধ ভৌত ও কাঠামোগত উন্নয়ন, সচেতনতামূলক কার্যধারা ও কল্যাণময় কার্যক্রমের মাধ্যমে সেনাবাহিনী সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালিদের হৃদয় ও মন জয় করে নিয়েছে।
সেনাবাহিনীর ৪টি জোনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারিগরি প্রতিষ্ঠান, অসংখ্য হতদরিদ্র পাহাড়ি-বাঙালিকে ঘর নির্মাণে সহায়তা প্রদান করেছে। মসজিদ ও কিয়াংঘর নির্মাণসামগ্রী প্রদান, মাইক প্রদান, মেঝে পাকা করা, বিভিন্ন পূজা-পার্বণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের নিমিত্তে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থাকরণের মাধ্যমে নিকট বন্ধুতে পরিণত হয়েছে সেনাবাহিনী।

সম্প্রীতি বজায় ও সামাজিক উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব ধর্মের মানুষের কাছে সেনাবাহিনী একটি নির্ভরতার প্রতীক। পার্বত্য চট্টগ্রামে সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি এখন নিতনৈমিত্তিক ঘটনা। ২০১৭ সালের ১৩ জুন অতিবৃষ্টির ফলে রাঙ্গামাটির মানিকছড়িতে ভয়াবহ পাহাড়ধসে উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের ওপর ধসে পড়ে।
এতে ঘটনাস্থলেই মেজর মোহাম্মদ মাহফুজ ও ক্যাপ্টেন তানভীরসহ ৩ সেনাসদস্য নিহত এবং ১০ সেনাসদস্য গুরুতর আহত হন। দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর বেশকিছু সদস্য পাহাড়ের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে সশস্ত্র আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেক সেনাসদস্য। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফেরাতে এসে আজ অবধি অনেক সেনাসদস্য মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়ে, সাপের কামড়ে কিংবা বন্য জন্তুর আক্রমণে নিহত হয়েছেন। কেউ কেউ আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।

শান্তি চুক্তির পর বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনী তাদের সীমিত সম্পদ ও জনবল দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই উন্নয়নের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বেসামরিক প্রশাসন ও জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সেনাবাহিনী যে ভূমিকা রাখছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতি এবং যথাযথ ভূমিকার কারণে পর্যায়ক্রমে নিরাপত্তা পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েনের পর হতে পাহাড়ি জনপদে এসেছে উন্নয়ন ও প্রাণের স্পন্দন। শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে, বাজার অর্থনীতি এবং বিপণন সফলতার মুখ দেখেছে, স্বাস্থ্যসেবায় সূচক উন্নত হয়েছে, চাষাবাদ বেড়েছে, জীবনধারায় পরিবর্তন এসেছে এবং কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার কমেছে। সর্বোপরি, সামাজিক সকল সূচকই ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি পাহাড়ি জনপদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

ট্যাগস :

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও উন্নয়নে সেনাবাহিনী-৪

আপডেট সময় : ০১:৫১:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও উন্নয়নে সেনাবাহিনী-৪

মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ

পার্বত্যাঞ্চলে সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনী স্থানীয়দের সমবায় সমিতির মাধ্যমে গভীর নলকূপ স্থাপনে সহায়তা করছে। এতে বিভিন্ন এলাকা একদিকে যেমন সেচের আওতায় আসছে, অন্যদিকে স্থানীয়দের খাবার পানির অভাব দূর করছে।

পার্বত্যাঞ্চলের পানি ও বিদ্যুৎ আসার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে কৃষিকাজ। বেড়েছে চাষাবাদ। প্রান্তিক চাষিগণ প্রত্যন্ত এলাকা হতে বিভিন্ন উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও ফলফলাদি পরিবহনে সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নে অবদান রাখছে। এছাড়াও বনসম্পদ রক্ষাকল্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজ ব্যবস্থাপনায়, আবার কখনো বিভিন্ন এনজিও ও স্থানীয় জনসাধারণের সমন্বয়ের মাধ্যমে পর্যাপ্ত বনায়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।

পর্যটনের জন্য পার্বত্য ভূখ- বরাবরই আকর্ষণীয় হওয়া সত্ত্বেও যোগাযোগ ও আবাসন সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকায় তিন পার্বত্য জেলায় এ সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছিল না। সরকারের আহ্বানে তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোর লক্ষ্যে সেনাবাহিনী কর্তৃক যোগাযোগ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও রাত্রিযাপনের সুবিধা তৈরি হওয়ায় এখন হাজার হাজার সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন দুর্গম স্থানে ভ্রমণ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

সাজেক, নীলগিরি, কাপ্তাই লেকের পাশে রিসোর্ট নির্মাণ এসব পদক্ষেপের উল্লেখযোগ্য দিক। আলুটিলা, বগা লেক, স্বর্ণ মন্দির, চিম্বুক হিল, শুভলং জলপ্রপাত প্রভৃতি পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী পর্যটন শিল্প বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার ফলে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে, যা পরোক্ষভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

পার্বত্য অঞ্চলের হতদরিদ্র পাহাড়ি-বাঙালি মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে সেনাবাহিনী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে কম্পিউটার ও সেলাই মেশিন বিতরণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। এতে পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি-বাঙালি নারীরা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

সেনা ক্যাম্পের সন্নিকটে অথবা উপজেলার সুবিধাজনক স্থানে সেনাবাহিনী হতদরিদ্র পাহাড়ি-বাঙালি মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার প্রয়াসে কম্বল ও ব্যাগ ফ্যাক্টরি, কুটির শিল্প ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে অনেক পাহাড়ি-বাঙালি মহিলাকে চাদর, থামি, লুঙ্গি ও গামছা তৈরির প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে।

এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন তাঁত তৈরি ও কাঁচামাল ক্রয় বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করা হয়। বিভিন্ন গুচ্ছগ্রামে মহিলাদের কর্মসংস্থান তৈরিতে উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে মুরগির ফার্ম পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান, মাশরুম, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফল চাষের প্রশিক্ষণ ও প্রত্যক্ষ সহায়তা প্রদান করায় তাদের পারিবারিক ভরণপোষণ ক্ষমতা ও সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পাহাড়ে সন্ত্রাস দমনে ও শান্তি রক্ষায় সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর। এক সময় তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ি সন্ত্রাসী দলগুলোর পাল্টাপাল্টি হামলা ও খুনোখুনির কারণে ভয় নেমে আসত সেখানকার বসবাসরত সাধারণ মানুষের ভেতর। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এবং বাঙালিদের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ে সরকার ও সেখানকার আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কমে এসেছে চাঁদাবাজি।

বেড়েছে পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি। আগে যেখানে দিনেদুপুরে গাড়ি থামিয়ে, ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে, অপহরণ করে বিরাট অঙ্কের চাঁদাবাজি হতো. সেখানে তা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। অন্যদিকে, আগে সন্ত্রাসীদের ভয়ে পাহাড়ি সড়কে বিকাল ৫টার পর কোনো যানবাহন চলাচল না করলেও বর্তমানে ২৪ ঘণ্টাই বিলাসবহুল গাড়ি চলাচল করছে, যা শান্তি চুক্তির অভাবনীয় সাফল্য। এসব অপকর্ম থেকে পাহাড়ের পাহাড়ি-বাঙালি মানুষকে শান্তিতে রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকতার সঙ্গে দিনরাত অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি সেনাবাহিনী পাহাড়ে বসবাসরত লোকজনের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়নমূলক নানা প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে। নানাবিধ ভৌত ও কাঠামোগত উন্নয়ন, সচেতনতামূলক কার্যধারা ও কল্যাণময় কার্যক্রমের মাধ্যমে সেনাবাহিনী সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালিদের হৃদয় ও মন জয় করে নিয়েছে।
সেনাবাহিনীর ৪টি জোনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারিগরি প্রতিষ্ঠান, অসংখ্য হতদরিদ্র পাহাড়ি-বাঙালিকে ঘর নির্মাণে সহায়তা প্রদান করেছে। মসজিদ ও কিয়াংঘর নির্মাণসামগ্রী প্রদান, মাইক প্রদান, মেঝে পাকা করা, বিভিন্ন পূজা-পার্বণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের নিমিত্তে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থাকরণের মাধ্যমে নিকট বন্ধুতে পরিণত হয়েছে সেনাবাহিনী।

সম্প্রীতি বজায় ও সামাজিক উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব ধর্মের মানুষের কাছে সেনাবাহিনী একটি নির্ভরতার প্রতীক। পার্বত্য চট্টগ্রামে সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি এখন নিতনৈমিত্তিক ঘটনা। ২০১৭ সালের ১৩ জুন অতিবৃষ্টির ফলে রাঙ্গামাটির মানিকছড়িতে ভয়াবহ পাহাড়ধসে উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের ওপর ধসে পড়ে।
এতে ঘটনাস্থলেই মেজর মোহাম্মদ মাহফুজ ও ক্যাপ্টেন তানভীরসহ ৩ সেনাসদস্য নিহত এবং ১০ সেনাসদস্য গুরুতর আহত হন। দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর বেশকিছু সদস্য পাহাড়ের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে সশস্ত্র আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেক সেনাসদস্য। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফেরাতে এসে আজ অবধি অনেক সেনাসদস্য মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়ে, সাপের কামড়ে কিংবা বন্য জন্তুর আক্রমণে নিহত হয়েছেন। কেউ কেউ আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।

শান্তি চুক্তির পর বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনী তাদের সীমিত সম্পদ ও জনবল দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই উন্নয়নের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বেসামরিক প্রশাসন ও জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সেনাবাহিনী যে ভূমিকা রাখছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতি এবং যথাযথ ভূমিকার কারণে পর্যায়ক্রমে নিরাপত্তা পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েনের পর হতে পাহাড়ি জনপদে এসেছে উন্নয়ন ও প্রাণের স্পন্দন। শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে, বাজার অর্থনীতি এবং বিপণন সফলতার মুখ দেখেছে, স্বাস্থ্যসেবায় সূচক উন্নত হয়েছে, চাষাবাদ বেড়েছে, জীবনধারায় পরিবর্তন এসেছে এবং কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার কমেছে। সর্বোপরি, সামাজিক সকল সূচকই ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি পাহাড়ি জনপদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।