পুতিনের সঙ্গে বিরোধে ছাড় পায়নি কেউ
আস্থা ডেস্কঃ
ইয়ভেজেনি প্রিগোজিন। ছবি: রয়টার্স
রাশিয়ায় ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন দেশটির ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনারের প্রধান ইয়ভেজেনি প্রিগোজিন। ধারণা করা হচ্ছে, গত জুনে অভ্যুত্থানচেষ্টার কারণেই তাঁকে হত্যা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শুধু প্রিগোজিন নয় এর আগেও পুতিনের সঙ্গে বিরোধ করে মূল্য চোকাতে হয়েছে অনেককে।
পুতিনের সঙ্গে বিরোধে মূল্য দিয়েছে ব্লগার ও আইনজীবী আলেক্সি নাভালনি। ছবি: রয়টার্স
ব্লগার ও আইনজীবী আলেক্সি নাভালনি পুতিনের অনুগত অভিজাত শ্রেণির দুর্নীতির তদন্ত করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। ২০১১ সালের শেষের দিকে রাজপথে আন্দোলনে অংশ নেন। তখন তাঁকে পুতিনবিরোধীদের প্রধান আশা হিসেবে দেখা হতো। এর পর থেকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে থাকেন। ২০২০ সালে নাভালনির ওপর বিষ প্রয়োগ করার পর তিনি চিকিৎসা নিতে জার্মানি যান। পরে স্বেচ্ছায় দেশে এসে ২০২১ সাল গ্রেপ্তার হন তিনি। বর্তমানে নাভালনির সাড়ে ১১ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। এছাড়া সম্প্রতি নাভালনিকে আরও ১৯ বছরের জেল দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার সাবেক গোয়েন্দা সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর কন্যা ইউলিয়া। ছবি: রয়টার্স
রাশিয়ার সাবেক গোয়েন্দা সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর কন্যা ইউলিয়াকে ২০১৮ সালের গত ৪ মার্চ যুক্তরাজ্যের সলসব্যারি শহরে একটি রেস্তোরাঁর বাইরে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, তাঁরা বিষাক্ত রাসায়নিকে আক্রান্ত। এ ঘটনার দায় ওই সময় অস্বীকার করে রাশিয়া। সের্গেই স্ক্রিপাল যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাদের কাছে রাশিয়ার গোপন তথ্য বিক্রি করে দিয়ে নিজ দেশের সঙ্গে প্রতারণা করেন । দ্বৈত প্রতিনিধি (ডাবল এজেন্ট) হিসেবে কাজ করার দায়ে ২০০৬ সালে রাশিয়ায় তাঁর সাজা হয়। ২০১০ সালে গোয়েন্দা বিনিময়ের মাধ্যমে ছাড়া পেয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেন সের্গেই স্ক্রিপাল।
রাশিয়ার প্রখ্যাত বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক ভ্লাদিমির কারা-মুর্জা
রাশিয়ার প্রখ্যাত বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক ভ্লাদিমির কারা-মুর্জাকে গত বছর তাঁর মস্কোর বাড়ির বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধারনা করা হয়, তাঁকেও ২০১৫ ও ২০১৭ সালে বিষ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। জার্মানির একটি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে জানা গিয়েছিল যেন, কারা-মুর্জার দেহে অতিরিক্ত পরিমাণের পারদ, তামা, ম্যাঙ্গানিজ এবং দস্তা প্রয়োগ করা হয়েছিল। এর দায়ও অস্বীকার করেছিল মস্কো।
রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির সাবেক সদস্য পুতিনবিরোধী লিটভিনেঙ্কো
রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির সাবেক সদস্য পুতিনবিরোধী লিটভিনেঙ্কো ২০০৬ সালে গ্রিন টি খেয়ে মারা যান। যুক্তরাজ্যের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিনের অনুমতিতেই তাঁর চায়ে বিষ মেশানো হয়েছিল। পরে এ ঘটনার দায় অস্বীকার করে ক্রেমলিন। লিটভিনেঙ্কো রাশিয়া থেকে পালিয়ে ছয় বছর যুক্তরাজ্যে ছিলেন।
ইউক্রেনের বিরোধী নেতা ভিক্টর ইউশচেঙ্কো। ছবি: রয়টার্স
ভিক্টর ইউশচেঙ্কো ছিলেন একজন ইউক্রেনের বিরোধী নেতা। ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় তাঁর ওপর বিষ প্রয়োগ করা হয়। ইউশচেঙ্কো পশ্চিমাঘেঁষা ছিলেন। কিয়েভের বাইরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ইউশচেঙ্কো। এ ঘটনার দায়ও অস্বীকার করে মস্কো।
আলেক্সান্ডার পেরেপিলিচনি। ছবি: রয়টার্স
রুশ ব্যবসায়ী আলেক্সান্ডার পেরেপিলিচনি সেদেশের একাধিক দুর্নীতি ও মৃত্যুর ঘটনার ব্যাপারে সাক্ষ্য ও তথ্য দিয়েছিলেন। তিনি নিজেও অর্থ পাচারের ঘটনায় সন্দেহভাজন ছিলেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে পেরেপিলিচনি রাশিয়া থেকে সুইস ব্যাংক একাউন্টে লক্ষ লক্ষ ইউরো স্থানান্তরের এক মামলার ব্যাপারে সুইস কৌঁসুলিদের সহায়তা করছিলেন।
কী করতে চলেছেন পুতিনকী করতে চলেছেন পুতিন
পেরেপিলিচনির মৃতদেহ পাওয়া যায় ২০১২ সালের নভেম্বরে ব্রিটেনের সারে-তে, তার ভাড়া করা বাড়ির কাছে। জগিং করতে বেরিয়ে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করেন এবং মারা যান তিনি।
প্রথম দিকে স্বাভাবিক মৃত্যু মনে করা হলেও ২০১৭ সালে বিশেষজ্ঞরা আরেক তদন্তের সময় বলেন, হয়তো তাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, তারা মৃতের দেহে জেলেসেমিয়াম এলিজেন্স এক ধরণের গাছ থেকে তৈরি বিরল বিষের আভাস পান যা চীন ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জন্মায়। এ মৃত্যুর ঘটনাতেও দায় স্বীকার করেনি রাশিয়া।