‘প্রজাপতি! প্রজাপতি! কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা’—দুই বেণি ঝুলিয়ে মেয়েশিশুগুলো এমন গান গায়। ফুলে ফুলে নেচে বেড়ায়। প্রত্যেক মা-বাবারই স্বপ্ন, তাদের মেয়ে প্রজাপতি হোক, উড়ে বেড়াক মুক্ত বিহঙ্গের মতো। কিন্তু হুট করেই তো তাদের পাখা ভেঙে দেয় কিছু কালো মেঘের মতো কিছু মানুষ। অতঃপর শুঁয়োপোকা হয়েই কাটাতে হয় প্রজাপতির জীবন।
ছোট ছোট প্রজাপতি মেয়েশিশুর মা-বাবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। কালো মেঘ ছাড়া কোনো জায়গা আছে কি? শুঁয়োপোকা না হয়ে বেঁচে থাকার উপায় কী? প্রশ্ন আরো বহু, কিন্তু উত্তর মিলছে না। চারপাশের সমাজটা তো এখন কালো মেঘে ঢাকা আকাশের মতোই। সেখানে একের পর এক ধর্ষণের শিকার হয় শিশু থেকে কিশোরী, তরুণী, নারী।
দেলোয়ারের কত নেতা, আংগোরে মারি হালাইবো: নির্যাতিত নারী বাবা
কোথাও থেমে নেই নারীর প্রতি নির্যাতন, ধর্ষণ, বর্বরতা। শহর কিংবা গ্রাম, সর্বত্র বাড়ছে পাশবিক-নৃংশসতা। সিলেট থেকে বেগমগঞ্জ, উত্তরবঙ্গ থেকে লক্ষ্মীপুর—যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ‘এখনও চলছে মধ্যযুগের বর্বরতা’।
সম্ভ্রম হারানো নারীর জন্য কাঁদছে দেশ। এখন মানুষ মুক্তি চায়। মুক্তির জন্য প্রতিবাদের ভাষাও বদলায়। এমনই বদলে যাওয়া প্রতিবাদ ‘ঘোর অন্ধকার’ বা কালো চিহ্ন ধারণ করা। এর এই প্রতিবাদী চিহ্নই এখন ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে মানুষ শোকের প্রতীক ‘কালো’ ধারণ করে।
সোমবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কালো প্রতীকটি ব্যবহার করে অনেকে ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে থাকে। একদিনের ব্যবধানেই অভিনব এই প্রতিবাদের প্রতীক ভাইরাল হতে দেখা যায়। অনেকে তার ফেসবুকে ওয়ালে প্রতীকটি ব্যবহার করেন। অনেকেই আবার প্রোফাইল করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত লাগাতার বর্বরতার ঘটনাগুলো মানুষের স্বাভাবিক জীবনে এবং সমাজে ফেলেছে নিরাপত্তাহীনতার কালো ছায়া। বাইরে বের হতে এখন নারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। একবিংশ শতাব্দীর উন্নত ও আধুনিক বিশ্বে ‘পাশবিকতার ঘোর অন্ধকার’ যেন দানবীয় থাবায় ঘিরে ফেলেছে নারীদের। তাইতো দেশের লাখ লাখ ফেসবুক অ্যাকাউন্টও ছেয়ে গেছে কালো ছায়ায়। এ যেন এক অভিনব প্রতিবাদ!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়েদের এমনভাবে গড়ে তুলুন, যেন সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। বিপদের মোকাবিলা করতে পারে। যেন সে জোর গলায় বলতে পারে, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা—/ বিপদে আমি না যেন করি ভয়।’