প্রতি বিষয়ে পাঁচ ঘণ্টার ফাইনাল পরীক্ষা!
মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছ:
নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত মূল্যায়ন নিয়ে তুমুল সমালোচনার পর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার খসড়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে এই খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
খসড়া মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অনুযায়ী, প্রতিটি বিষয়ে মিডটার্ম ও বার্ষিক চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে পাঁচ ঘণ্টার। পাঁচ ঘণ্টায় হবে এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষাও। পাবলিক পরীক্ষা হবে অন্য কেন্দ্রে আর চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির এই পরীক্ষা হবে নিজ নিজ স্কুলে। সকাল ১০টা থেকে এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বা পরীক্ষা শুরু হয়ে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। মাঝখানে এক ঘণ্টার বিরতি থাকবে।
প্রতিটি শিক্ষার্থীর পাঁচ ঘণ্টায় ছয়টি সেশন হবে। চার ঘণ্টা ব্যবহারিক। প্রথমে ওরিয়েন্টেশন দেওয়া হবে। এই সেশনে একজন শিক্ষার্থীর দলগতভাবে কাজ করতে হবে, আবার প্রত্যেককে এককভাবে ব্যবহারিক কাজ করতে হবে। মূল্যায়নকারী/শিক্ষকদের কাছে তাদের পারদর্শিতা দেখাতে হবে। শেষ ১ ঘণ্টা তত্ত্বীয় পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত হবে। তত্ত্বীয় পরীক্ষার উত্তরপত্র মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এবং উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার মতো পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বোর্ডে পাঠানো হবে।
মিডটার্ম ও বার্ষিক চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলোর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। এছাড়া ধারাবাহিক মূল্যায়ন নতুন কারিকুলামের আলোকে চলবে।
পুরোনো কারিকুলাম অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের তিন ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা হয়।পৃথক দিনে ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী মূল্যায়ন প্রক্রিয়াও ভিন্ন হচ্ছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: ফরহাদুল ইসলাম দৈনিক আস্থাকে বলেন, বিভিন্ন মহল কাগজ কলম দিয়ে’ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি আসছে।
অভিভাবকরা বলছেন, নইলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনযোগী হচ্ছে না। বিষয়টি আমিও বিভিন্ন সভা তুলে ধরেছি। মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রবিবার সভা হয়েছে। আগামীতে আরও সভা হবে। সেখানেই খসড়া চূড়ান্ত হতে পারে।
এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মো: মশিউজ্জামান দৈনিক আস্থাকে বলেন, আমরা ঘণ্টা বাজিয়ে পরীক্ষা শুরু আবার ঘণ্টা বাজিয়ে শেষ এমন গতানুগতিক কোনো পরীক্ষায় যাচ্ছি না। আর এটাকে ‘পরীক্ষা’ও বলতে চাইছি না। এটাকে আমরা মূল্যায়ন বলছি।
তিনি বলেন, পরীক্ষার জন্য মার্কিং সিস্টেম থাকবে না। মূল্যায়নকারীরা ফলাফলকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করবে (রিপোর্টিং ভালো, অর্জনের পথে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে)। চতুর্থ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছরের জন্য মিডটার্ম এবং ফাইনাল পরীক্ষা হবে। এসএসসি এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীদের শুধু চূড়ান্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। তিনি বলেন, আগামী জুন মাস থেকেই স্কুলগুলো এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবে। এর আগেই সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে। পাঁচ ঘণ্টায় প্রতিটি বিষয়ের ওপর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। এছাড়া কারিকুলাম অনুযায়ী ধারাবাহিক মূল্যায়ন তো থাকবেই।
মো: মশিউজ্জামান বলেন, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন নিয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ নিয়ে আমরা এই খসড়া তৈরি করেছি। এটি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে আমরা উত্থাপন করেছি। তারা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
চলতি মাসের শুরুতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে সমন্বয় কমিটি গঠন করে সরকার। সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। সমন্বয় কমিটিতে সদস্য হিসেবে কাজ করবেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মহাপরিচালক।
এছাড়া আরো বিভিন্ন দপ্তরের ৯ জন কর্মকর্তাদের সদস্য হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি সাধারণ বিষয় অধ্যয়ন করতে হবে। এসএসসি পরীক্ষা শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমের উপর ভিত্তি করে হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। প্রতি বছরের শেষে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
২০২৩ সালে প্রথম ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম শুরু হয়েছে। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবমে এবং ২০২৫ সালে নতুন কারিকুলাম চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে। নতুন কারিকুলামে এসএসসি পরীক্ষা হবে ২০২৬ সালে।