প্রধানমন্ত্রীর নজরে সোহেল-রওশন দম্পতি
আস্থা ডেস্কঃ
সোহেল-রওশনের নজিরবিহীন ভালোবাসার গল্পটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় তা নজর কেড়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাদের অবস্থার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে দেওয়া হয়েছে নির্দেশনা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ময়মনসিংহের ত্রিশালের গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামে তাদের বাড়িতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আক্তারুজ্জামান।
এর আগে বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে বলা হয়। এরপর সরেজমিনে তাদের বর্তমান অবস্থা জানতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হকের নির্দেশে ওই বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
শুরুতেই রওশন ও সোহেলকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও মেয়ে স্মরণীকে চকলেট উপহার দেন ইউএনও আক্তারুজ্জামান। পরে পরিবারটির নানা সমস্যা ও কষ্টের কথা শোনেন এবং সেগুলো দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানিয়ে সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ভালোবাসার যে নিদর্শন তৈরি করেছেন সোহেল-রওশন, সে বিষয়টি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে আসে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় সরেজমিনে তাদের বাড়িতে এসেছি।
এখানে সোহেল ও রওশনের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে যে কারও জীবনকে অর্থবহ ও সুন্দর করতে গেলে অত্যন্ত ধনী, মেধাবী, সুন্দর কিংবা পারফেক্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু ভালোবাসার। চলমান নানা সংকটের সমাজে এই দম্পতি এটিই প্রমাণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, রওশনের স্বামী সোহেল স্ট্রোক করেছেন ২০২০ সালে। তাই ভারী কাজ করতে পারেন না তিনিও। তারা বসবাস করেন একটি মাটির ঘরে। পাশে রয়েছে টং, যেখানে সোহেল তার স্ত্রীর মানসিক প্রশান্তির জন্য এটি করে দিয়েছেন যেন তিনি মানুষের সঙ্গে কন্ট্রাক্টে থাকতে পারেন। এখানেও কিন্তু সোহেল মিয়ার ভালোবাসার নিদর্শন ফুটে উঠেছে।
পরিবারটির চাহিদার কথা উল্লেখ করে ইউএনও বলেন, দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত পরিবারটি। তাদের এখন প্রয়োজন গোসলখানা-টয়লেট একসঙ্গে রেখে একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া, পুঁজিসহ স্থায়ী দোকানের ব্যবস্থা করা, চলাচলের জন্য হুইলচেয়ার। তাদের মেয়ে স্মরণী এখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে উচ্চ শিক্ষিত করার মাধ্যমে রওশন তার স্বপ্ন পূরণ করতে চান। দারিদ্রের কারণে যেন তার পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায়, এটিও সোহেল মিয়া ও রওশন আক্তারের চাওয়া।
এসব বিষয় সরেজমিনে এসে আমরা দেখলাম ও জানতে পেলাম এবং একটি প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাব। আমরা প্রত্যাশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে খোঁজখবর নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সোহেল-রওশন দম্পতি।
সোহেল মিয়া বলেন, প্রধানন্ত্রীর কার্যালয়ে নির্দেশে বাড়িতে ইউএনও স্যার আসছিলেন। আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। আমাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জেনে গেছেন। সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস তিনি দিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী যে আমাদের পাশে আছেন, এতেই আমার বুক ভরে গেছে।