DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাসোমবার ২৫শে নভেম্বর ২০২৪
ঢাকাসোমবার ২৫শে নভেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

ফরিদপুরে ঘূর্ণিঝড়ে নববধু নিহত

Ellias Hossain
অক্টোবর ৬, ২০২৩ ৯:১০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড, ফরিদপুরে ঘূর্ণিঝড়ে নববধু নিহত, কাচাঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

 

মামুনুর রশীদ/ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ

ফরিদপুরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড সূচিত হয়েছে। প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের মাঝে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়ে জেলার ভাঙ্গা উপজেলার ছোট হামিরদী গ্রামে ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে ঝর্ণা বেগম (২০) নামে এক গৃহবধু ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।

নিহত গৃহবধূর স্বামী শাহাবুদ্দিন শেখ সাংবাদিকদের জানান, প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের মাঝে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়ে তাদের বসত ঘরের উপর একটি গাছ পড়ে। এসময় তার নববধূ গাছের চাপায় ঘরের ভিতরে নিহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা ভাষ্যমতে, মাত্র কয়েক মিনিটের ঝড়ে পুরো এলাকাটি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের পাতরাইল, পুকুরপাড়, কর্নিকান্দাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে বাড়ি ঘর ও পাছপালার ব্যাপক ক্ষতি ও ভাঙ্গা হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়ে সড়কের পুলিয়া বাজার সংলগ্ন দুই পাশের এলাকার গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

অপরদিকে সালথা ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার সাতটি গ্রামের উপর বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে সাধারণ মানুষের কাচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সালথা উপজেলার ওই গ্রামের ১৮টি কাঁচা বসতঘর বিধ্বস্ত ও অসংখ্য গাছপালা ভেঙে উপড়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়ে গোটা গ্রাম অন্ধকারে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের সানেতুদী গ্রামে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।

এদিকে জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মাত্র এক মিনিট স্থায়ী ঘূর্ণিঝড়ে দুইটি ইউনিয়নের অন্তত ছয়টি গ্রামের শতাধিক কাঁচা-পাকা বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এসময় কমপক্ষে তিনশতাধিক গাছপালা ঘূর্ণিঝড়ে উপড়ে পড়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকেই খোলা আকাশের নিচে ও আশপাশের বাড়ি-এলাকায় অবস্থান করছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সদর ইউনিয়ন ও টগরবন্ধ ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড়ের এ ঘটনা ঘটে। পৃথক দুটি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা প্রণয়নের কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয় ও প্রশাসন এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়। দুপুর সোয়া ৩টার দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় মাত্র ১ মিনিটেরও কম সময়ে আলফাডাঙ্গার সদর ইউনিয়নের বিদ্যাধর, ব্রাহ্মণ-জাটিগ্রাম,বেজিডাঙ্গা ও টগরবন্ধ ইউনিয়নের মালা, কৃষ্ণপুর-টগরবন্দ, তিতুরকান্দি গ্রামের উপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেলে কাচা-পাকা বাড়িঘর,গাছপালাসহ গ্রামের মানুষের ফসলি জমির বেশ ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়।

বিদ্যাধর গ্রামের ইউপি সদস্য মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন,সারাদিন ধরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বিকেলের দিকে হঠাৎ করে এক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের ২০ থেকে ৩০টি কাচা-পাকা ঘরবাড়ি গাছপালা ভেঙ্গেচুরে উপড়ে ফেলে। কালমেঘে আকাশ ছেয়ে যেতেই বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়।

সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, ইউনিয়নের তিন গ্রামের বেশকিছু পরিবারের বাড়ি ও ঘর এবং গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমার পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো ও সহায়তার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা ও জেলা প্রশাসন থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানান তিনি।

টগরবন্ধ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বেগম বলেন,খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে গিয়ে সাধ্যমতো সহোযোগিতার চেষ্টা করা হয়। টগরবন্ধ ইউনিয়নে তিনটি গ্রামের ৬০ থেকে ৭০টি কাচাপাকা বাড়িঘর ও কয়েক শ’গাছপালা ভেঙ্গে চুড়ে উপড়ে পড়ে।

আরো পড়ুন :  মাটিরাঙ্গায় লরি ট্রাক উল্টে চালক নিহত, আহত-১

ফরিদপুরের পল্লী বিদ্যুত সমিতির আলফাডাঙ্গা সাব জোনাল অফিসের এজিএম ফাহিম হাসান বলেন, আলফাডাঙ্গার পুরো উপজেলা নয়। ঘুর্ণিঝড় বয়ে যাওয়া দুটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের তিনটি খুঁটি ভেঙে পড়ে গেছে। কয়েকটি খুঁটি আঁকা বাকা হয়ে পড়েছে। অফিসের লোকজন কাজ করছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন,বিকেলের দিকে মাত্র এক মিনিটেরও কম সময়ের একটি ঘূর্ণিঝড়ে দুটি উপজেলার ছয়টি গ্রামের শতাধিক কাচাপাকা বাড়িঘর ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। খবর পেয়ে উদ্ধারকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। বৃষ্টির মধ্যে উদ্ধার কাজ করা হয়েছে। তবে অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়া খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছে। তাদের নিরাপদ স্থান ও আশপাশের এলাকায় অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে।

সালথা উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা কাজী দেলোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছিল। সন্ধ্যার সময় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় প্রচণ্ড বেগে আঘাত হানে। মাত্র তিন মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে গ্রামের লিটু মুন্সী, ফারুক মুন্সী, মুরাদ মুন্সী, দবির মুন্সী, কাইউম মুন্সী, কামাল ঠাকুর, জামাল ঠাকুর, জমিলা বেগম, নিরু বেগম, ছানা কাজী, আতি কাজী ও হাফেজ সগির মুন্সিসহ অন্তত ১৮টি বসতঘর বিধস্ত হয়। এছাড়া গাছপালা ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা প্রায় সবাই কৃষক। ঝড়ের সময় ওই গ্রামের বিধবা লিপি বেগমের একমাত্র সম্বল সেমিপাকা বসতঘরের ওপর বিশাল একটি গাছ পড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। বিদ্যুতের তার ছিড়ে গ্রামে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় বলে তিনি জানান।

বল্লভদী ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহিন ঘূর্ণিঝড়ে গ্রামবাসীর ক্ষয়ক্ষতির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে উপজেলা পরিষদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড়টি রূপ নেয়। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করছে। শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার কাজ শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।

উল্লেখ্য ফরিদপুর জেলায় এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৯ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দিনব্যাপী একটানা মুষলধারে একটানা অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাত এখনও থেমে থেমে রয়েছে। ফরিদপুরের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই ফরিদপুরে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। সর্বশেষ বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ১২৯ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আগামী আরও তিন থেকে চা দিন ধরে কমবেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সারা বছরের মধ্যে এবৃষ্টিপাতের হার সর্বোচ্চ।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০০
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০৫
  • ১১:৪৯
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩১
  • ৬:২০