তীব্র শীতের সঙ্গে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে কলেরা স্যালাইনের সঙ্কট
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:
চুয়াডাঙ্গায় শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদর হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বছরের প্রথম ৬ দিনেই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ১২শ’র অধিক রোগী। এদের মধ্যে পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুর সংখ্যায় বেশি। গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, অন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ২১৭ জন শিশুসহ ২৭০ জনের অধিক রোগী। গত ৬ দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ শিশু। এদিকে, গত কয়েক দিনের শীতের তীব্রতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বেড নম্বর ৭-এর একটি বেডে ১৪ মাস বয়সী সন্তানের সেবায় ব্যস্ত মা। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিন দিন যাবত সন্তানকে নিয়ে আছেন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছে তাঁর সন্তান। হাসপাতালের বহির্বিভাগে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ৪৫ দিন বয়সী সন্তান সুরাইয়াকে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন আল মামুন ও তাঁর স্ত্রী। আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জ থেকে এসেছেন তাঁরা। সুরাইয়া প্রায় ১০ দিন ধরে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছেন বলে জানালেন আল মামুন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৯ মাসের শিশু ইয়াছিনকে নিয়ে এসেছেন সীমা আক্তার। তিনি জানালেন, কয়েকদিন থেকেই তাঁর ছেলের সর্দি-কাশি ও হালকা জ্বর আছে। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতালের এসেছেন সন্তানকে নিয়ে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সরেজমিনে এমন চিত্রই দেখা গেছে। জেলায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিভিন্ন রোগ। জ্বর-ঠাণ্ডা, নিউমোনিয়া ও কোল্ড ডায়রিয়ার পাশাপাশি শ্বাসতন্ত্রজনিত নানা রোগ বেড়ে গেছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা যায়, অপেক্ষমাণ রোগীর ীর্ঘ লাইন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও খো যায় রোগী নিয়ে অপেক্ষা করছে স্বজনেরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাবুবুর রহমান মিলন বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যত শীত বাড়ছে, রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগের পাশাপাশি নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে রোগীরা আসছেন হাসপাতালে। এছাড়াও নাক, কান ও গলার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যাও কম নয়। প্রতিদিন প্রায় ১২০টির অধিক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে শুধুমাত্র বহির্বিভাগেই। শিশুদের ঠাণ্ডা থেকে ূরে রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ার শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। শীতকালে বাতাসের আদ্রতা কম থাকায় জীবাণু মুক্ত বাতাসেই উড়ে বেড়ায়। এই জীবাণু খুব সহজেই শিশুরে আক্রমণ করে। এই জীবাণুর শিশুদের শরীরে প্রবেশ করলে নানা রোগের সৃষ্টি হয়। ঠাণ্ডা বাতাস শিশুদের শরীরে লাগতে দেওয়া যাবে না, শিশুদের পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরাতে হবে। খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গেলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বাড়তে পারে। এই সময় ফুলের রেণু থেকে ূরে থাকতে হবে। ফুলের রেণু অ্যাজমা পরিস্থিতি খারাপ করে। তারে গরম কাপড় পড়ানোর পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর রাখতে হবে। ৬ মাসের কম বয়সি শিশুকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খেতে দিতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোল্ড ডাইরিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে গড়ে ২শ’র অধিক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও ডাইরিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি থাকছে ৪০ থেকে ৫০ জন শিশু। তাঁদের সর্বাত্মক চিকিৎসা দিয়ে চলেছেন হাসপাতালের অভিজ্ঞ নার্স। শীতজনিত রোগের ওষুধ হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। তবে সংকট দেখা দিয়েছে কলেরা স্যালাইনে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হয়েছে। অতিদ্রুত এ সংকট মোকাবিলা করতে পারব বলে আশা করছি।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, শীতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যহত রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২০ হাজারের অধিক কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং বিতরণ চলমান আছে। এছাড়াও, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্যেক উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে কম্বল কেনার জন্য ইউএনওদের কাছে, চার পৌরসভায় মোট ৭ লাখ টাকা মেয়রদের কাছে, ৫ লাখ টাকার শীতবস্ত্র ইউএনওদের কাছে ও এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে বাবদ ৫ লাখ টাকা মূল্যের শীতবস্ত্র জাকেট, শাল, সোয়েটার ও কম্বল বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশে মাঝে মাঝে হালকা মেঘ দেখা গেছে। আগামী ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে দেশের রংপুর বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা/গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সেই সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাসহ সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।