ঢাকা ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo ভারতে আবারও যুক্ত হতে পারে সিন্ধু: রাজনাথ সিং Logo পানছড়িতে বিজিবি কর্তৃক অসহায় দুঃস্থ ও গরীবদের মাঝে সহায়তা প্রদান Logo খাগড়াছড়িতে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo মানবতাবিরোধী অপরাধ : ট্রাইব্যুনালে ১৩ সেনা কর্মকর্তা Logo ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এনসিপি নেতাদের সাক্ষাৎ Logo প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তাইজুলের ২৫০ Logo যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত ২৪ Logo কিশোরগঞ্জে মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কুরআন বিতরণ Logo মূকাভিনয়ে কৃতিত্ব রাখায় রিফাত ইসলামকে সম্মাননা প্রদান Logo বাজিতপুরে সৈয়দ এহসানুল হুদার কর্মী-সমর্থকদের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলা

বাঙালি মুসলিম মহিলা চিকিৎসকে ছবি সম্বলিত একটি ডুডল

News Editor
  • আপডেট সময় : ১২:১৯:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০
  • / ১১৩৩ বার পড়া হয়েছে

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) গুগল নিজেদের হোমপেজে প্রকাশ করেছে অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী’র ছবি সম্বলিত একটি ডুডল। এতে জোহরা বেগম কাজীর গলায় স্টেথসস্কোপ ও মাথার ওপর গাছের ছায়া। গায়ে জড়ানো হলুদ রঙের একটি পোশাক।

অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী প্রথম আধুনিক বাঙালি মুসলিম মহিলা চিকিৎসক। বাঙালি নারী চিকিৎসকদের জন্য পথ প্রদর্শক তিনি। একটা সময় বাঙালি মুসলিম নারীদের শুধু মাত্র ‘দু-চারটি’ উপন্যাস পড়তে পারলেই আর বেশি পড়া লেখা করার প্রয়োজন নেই বলে প্রচলন ছিল। সে সময় তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। একই সঙ্গে বাঙালি নারীদের জন্য তৈরি করে গেছেন এগিয়ে চলার এক সমৃণ পথ। সেই পথ প্রদর্শকের জন্মদিনে তার কথাই বিশ্বকে মনে করিয়ে দিলো সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল।

মেট্রোরেল প্রকল্পে করোনা সামলাতে হাসপাতাল স্থাপন

অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী ভারতের যুক্ত প্রদেশের রঞ্জনগাঁওয়ে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। একজন রাজনীতিক হিসেবে সুপরিচিত তাঁর পিতা ডা. কাজী আব্দুস সাত্তার ছিলেন বর্তমান মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার গোপালপুর গ্রামের কাজী পরিবারের সদস্য। একজন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে জোহরা বেগম বাল্যকাল থেকেই প্রথম স্থান অধিকার করে সকল পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন। ১৯৩৫ সালে দিল্লির হার্ডিং মহিলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে শীর্ষ স্থান অধিকার করে তিনি এম.বি.বি.এস ডিগ্রি লাভ করেন এবং ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় কর্তৃক প্রদত্ত পদকে ভূষিত হন।

জনসেবা ও সমাজকল্যাণমূলক আদর্শকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে ডা. জোহরা কাজী মহাত্মা গান্ধীর ‘সেবাশ্রমে’ তার চাকরিজীবন শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বে তিনি ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেশ বিভাগের পর তিনি পূর্ববাংলায় চলে আসেন। নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলার হাতিরদিয়ার জমিদার পুত্র রাজুউদ্দিন ভূঁইয়ার (এম.পি) সাথে তিনি পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।

ডা. জোহরা বেগম কাজীর বর্ণাঢ্যজীবনের পরবর্তী অধ্যায়ের শুরু ১৯৪৮ সালে যখন তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। তৎকালীন মেডিক্যাল কলেজে পৃথক ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ বিভাগ না থাকায় অনগ্রসর সমাজের গর্ভবতী মহিলারা হাসপাতালে এসে পুরুষ ডাক্তারদের নিকট চিকিৎসা নিতে অনাগ্রহী ছিলেন। ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুদের যথাযথ চিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটতো এবং অকাল মৃত্যুর ঘটনাও ছিল অনেক বেশি।

ডাঃ জোহরা কাজীর ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ খোলা হয়। ডা. জোহরা কাজী ১৯৫৫ সালে সরকারি বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ইংল্যান্ডে যান এবং সেখান থেকে অন্যান্য প্রশিক্ষণসহ DRCOG, FCPS, FRCOG এবং MRCOG ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে তাঁর পূর্বতন কর্মস্থলে প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তিনি হলি ফ্যামিলি রেডক্রস হাসপাতাল এবং কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।

পৈতৃক নিবাসসূত্রে জোহরা বেগমের জন্ম এবং কর্মজীবনের বেশ কয়েক বছর বাংলার বাইরে অতিবাহিত করেন। তিনি বাংলা, হিন্দি, উর্দু ও আরবি ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে ও লিখতে পারতেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। দীর্ঘকাল মানবতার সেবায় নিঃস্বার্থ কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ ডা. জোহরা কাজীকে তমঘা-ই-পাকিস্তান (১৯৬৪), বেগম রোকেয়া পদক (২০০২) এবং একুশে পদক (২০০৮) প্রদান করা হয়। ২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর জোহরা কাজীর মৃত্যু হয়।

বাঙালি মুসলিম মহিলা চিকিৎসকে ছবি সম্বলিত একটি ডুডল

আপডেট সময় : ১২:১৯:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) গুগল নিজেদের হোমপেজে প্রকাশ করেছে অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী’র ছবি সম্বলিত একটি ডুডল। এতে জোহরা বেগম কাজীর গলায় স্টেথসস্কোপ ও মাথার ওপর গাছের ছায়া। গায়ে জড়ানো হলুদ রঙের একটি পোশাক।

অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী প্রথম আধুনিক বাঙালি মুসলিম মহিলা চিকিৎসক। বাঙালি নারী চিকিৎসকদের জন্য পথ প্রদর্শক তিনি। একটা সময় বাঙালি মুসলিম নারীদের শুধু মাত্র ‘দু-চারটি’ উপন্যাস পড়তে পারলেই আর বেশি পড়া লেখা করার প্রয়োজন নেই বলে প্রচলন ছিল। সে সময় তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। একই সঙ্গে বাঙালি নারীদের জন্য তৈরি করে গেছেন এগিয়ে চলার এক সমৃণ পথ। সেই পথ প্রদর্শকের জন্মদিনে তার কথাই বিশ্বকে মনে করিয়ে দিলো সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল।

মেট্রোরেল প্রকল্পে করোনা সামলাতে হাসপাতাল স্থাপন

অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী ভারতের যুক্ত প্রদেশের রঞ্জনগাঁওয়ে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। একজন রাজনীতিক হিসেবে সুপরিচিত তাঁর পিতা ডা. কাজী আব্দুস সাত্তার ছিলেন বর্তমান মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার গোপালপুর গ্রামের কাজী পরিবারের সদস্য। একজন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে জোহরা বেগম বাল্যকাল থেকেই প্রথম স্থান অধিকার করে সকল পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন। ১৯৩৫ সালে দিল্লির হার্ডিং মহিলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে শীর্ষ স্থান অধিকার করে তিনি এম.বি.বি.এস ডিগ্রি লাভ করেন এবং ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় কর্তৃক প্রদত্ত পদকে ভূষিত হন।

জনসেবা ও সমাজকল্যাণমূলক আদর্শকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে ডা. জোহরা কাজী মহাত্মা গান্ধীর ‘সেবাশ্রমে’ তার চাকরিজীবন শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বে তিনি ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেশ বিভাগের পর তিনি পূর্ববাংলায় চলে আসেন। নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলার হাতিরদিয়ার জমিদার পুত্র রাজুউদ্দিন ভূঁইয়ার (এম.পি) সাথে তিনি পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।

ডা. জোহরা বেগম কাজীর বর্ণাঢ্যজীবনের পরবর্তী অধ্যায়ের শুরু ১৯৪৮ সালে যখন তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। তৎকালীন মেডিক্যাল কলেজে পৃথক ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ বিভাগ না থাকায় অনগ্রসর সমাজের গর্ভবতী মহিলারা হাসপাতালে এসে পুরুষ ডাক্তারদের নিকট চিকিৎসা নিতে অনাগ্রহী ছিলেন। ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুদের যথাযথ চিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটতো এবং অকাল মৃত্যুর ঘটনাও ছিল অনেক বেশি।

ডাঃ জোহরা কাজীর ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ খোলা হয়। ডা. জোহরা কাজী ১৯৫৫ সালে সরকারি বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ইংল্যান্ডে যান এবং সেখান থেকে অন্যান্য প্রশিক্ষণসহ DRCOG, FCPS, FRCOG এবং MRCOG ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে তাঁর পূর্বতন কর্মস্থলে প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তিনি হলি ফ্যামিলি রেডক্রস হাসপাতাল এবং কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।

পৈতৃক নিবাসসূত্রে জোহরা বেগমের জন্ম এবং কর্মজীবনের বেশ কয়েক বছর বাংলার বাইরে অতিবাহিত করেন। তিনি বাংলা, হিন্দি, উর্দু ও আরবি ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে ও লিখতে পারতেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। দীর্ঘকাল মানবতার সেবায় নিঃস্বার্থ কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ ডা. জোহরা কাজীকে তমঘা-ই-পাকিস্তান (১৯৬৪), বেগম রোকেয়া পদক (২০০২) এবং একুশে পদক (২০০৮) প্রদান করা হয়। ২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর জোহরা কাজীর মৃত্যু হয়।