বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর প্রথম সাক্ষাতে করণীয় সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই। কেউ কেউ মনে করেন বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে একত্রে নামাজ পড়তে হয়। এ নামাজ পড়া আবশ্যক। আসলেই কি বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রীর একত্রে নামাজ পড়া আবশ্যক? এ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী?
প্রাপ্ত বয়স্ক ও সক্ষম ব্যক্তির ওপর বিয়ে করা আবশ্যক। কিন্তু বিয়ের পর প্রথম সাক্ষাতে বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের একত্রে নামাজ পড়া আবশ্যক নয়। প্রথম সাক্ষাতে বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একত্রে দুই রাকাআত নামাজ পড়া উত্তম। এ নামাজ নবদম্পতির জন্য মোস্তাহাব আমল।
তবে বিয়ের পর প্রথম সাক্ষাতে স্বামী-স্ত্রীর জন্য উত্তম একটি আমল হলো- একে অপরের জন্য দোয়া করা। আবার স্বামী তার স্ত্রীর কপালে হাত রেখে দোয়া করার ব্যাপারে হাদিসের নির্দেশনা রয়েছে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় পরস্পরের জন্য একটি দোয়া পড়ার কথা এসেছে। তাহলো-
اَللّهُمَّ بَارِكْ لِىْ فِىْ أَهْلِىْ وَبَارِكْ لَهُمْ فِىَّ، اَللّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ بِخَيْرٍ و فَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিক লি ফি আহলি ওয়া বারিক লাহুম ফিইয়্যা, আল্লাহুম্মাঝ্মা বাইনানা মা জামা’তা বিখাইরিন ওয়া ফাররিক্ব বাইনানা ইজা ফাররাক্বতা ইলা খাইরিন। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দান কর এবং তাদের স্বার্থে আমার মাঝে বরকত দাও। হে আল্লাহ! তুমি যা ভালো একত্রিত করেছ তা আমাদের মাঝে একত্রিত কর। আর যখন কল্যাণের দিকে বিচ্ছেদ কর তখন আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ কর।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো নারীকে বিয়ে করবে, সে যেন তার কপাল ধরে এবং আল্লাহ তাআলার নাম পড়ে এবং বরকতের দোয়া করে। আর সে যেন বলে-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরিহা ওয়া খাইরিমা ঝাবালতাহা আ’লাইহি; ওয়া আউজুবিকা মিন সাররিহা ওয়া সাররিমা ঝাবালতাহা আলাইহি।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে তার কল্যাণ ও যে কল্যাণের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, তা প্রার্থনা করছি। আর তার অমঙ্গল ও যে অমঙ্গলের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন -তা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
স্বামী-স্ত্রীর প্রথম সাক্ষাতে করণীয়
মুমিন মুসলমানের বিয়ের পর প্রথম সাক্ষাতে স্বামী-স্ত্রীর বেশকিছু করণীয় রয়েছে, যা পালন করা খুবই জরুরি। এতে রয়েছে বরকত ও কল্যাণ। তাহলো-
> পরস্পরের জন্য দোয়া করা।
> দোয়ার পর একে অপরকে দুধ বা মিষ্টি জাতীয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা।
> পরস্পর ভালোবাসা ও হৃদ্যতাপূর্ণ কথাবার্তা বিনিময় করা।
> পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হওয়া।
> মনের অসংকোচ, ভয়ভীতি, হতাশা ও বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে খোশ গল্প করা।
> আন্তরিকতা ও ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশ কিছু সময় অতিবাহিত করা।
অনেকেরই প্রশ্ন-
বিয়ের পর প্রথম সাক্ষাতেই কি স্বামী-স্ত্রী পরস্পর মিলিত হতে পারবে?
‘হ্যাঁ’, ইসলাম বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশাসহ সব সম্পর্কের বৈধতা দিয়েছে। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী ইচ্ছা করলে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হতে পারবে। এতে ইসলামের কোনো বাধা নেই। কেননা বিয়ের মাধ্যমে তারা উভয়ে একে অপরের জন্য হালাল হয়েছেন।
তবে অনেকের মধ্যেই নতুন অবস্থায় কিছু জড়তা, দ্বিধা কিংবা হতাশা কাজ করে। সে কারণে পারস্পরিক ভালোবাসাপূর্ণ ভাববিনিময়ের মাধ্যমে উভয়ের জন্য স্বাভাবিক হওয়া জরুরি। তাতে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও হৃদ্যতাপূর্ণ সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়।
তবে যারা স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হবে, তখন তারা উভয়ে মহান আল্লাহর কাছে কল্যাণ, নেক সন্তান লাভে সাহায্য প্রার্থনা করবে। শয়তানের প্ররোচনা ও আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য প্রার্থনা করবে। তখন এ দোয়াটি পড়া সুন্নাত। তাহলো-
ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺟَﻨِّﺒْﻨَﺎ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ، ﻭَﺟَﻨِّﺐْ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻣَﺎ ﺭَﺯَﻗْﺘَﻨَﺎ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাক্বতানা।’ (বুখারি, মুসলিম)
অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদের উভয়কে শয়তানের হাত (কুনজর-আক্রমণ) থেকে রক্ষা করুন। আমাদের (এ মিলনে) যদি কোনো সন্তান দান করেন তাকেও শয়তানের হাত (কুনজর-আক্রমণ) থেকে রক্ষা করুন।’
সুতরাং বিয়ের পর প্রথম সাক্ষাতে কিংবা বাসর রাতে নামাজ পড়তেই হবে, না পড়লে গোনাহ হবে বা বিয়ে হবে না; বিষয়টি এমন নয়। তবে নামাজ পড়া উত্তম এবং মোস্তাহাব আমল।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব নবদম্পতি স্বামী-স্ত্রীকে নামাজ পড়ার ও পরস্পরের জন্য দোয়া করার এবং ভালোবাসাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।