বিএনপির ২৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চলছে রাজনৈতিক মামলা
আস্থা ডেস্কঃ
১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে শ্বাসরোধ করা হয়েছে। অপর দিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৫০ লাখ সদস্যের প্রায় অর্ধেক (২৫ লাখ) নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। নির্বাচনের আগে এসব নেতাকর্মীকে আন্দোলনের চেয়ে কোর্টে হাজিরা ও মামলা চালানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস বিষয়টি নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় প্রতিদিন বিরোধীদলের হাজারো নেতাকর্মী, সদস্য ও সমর্থকদের আদালতে বিচারকের সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে। তাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগই ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং দুর্বল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কয়েক মাস আগে এ অচলাবস্থার প্রভাব স্পষ্ট।
প্রধান বিরোধীশক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রায় ৫০ লাখ কর্মীর অর্ধেকই (প্রায়২৫ লাখ) রাজনৈতিক মামলার শিকার। সবচেয়ে সচল নেতা ও সংগঠকরা ডজন এমনকি শত শত মামলার শিকার হয়েছেন। যাদের এখন মিছিলে থাকা অথবা মধ্যরাত অবধি বিভিন্ন রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে চিন্তাভাবনার কথা ছিল, তাদের উকিলের চেম্বার, কোর্টরুমের চার কোনা খাঁচা এবং এ দুটি জায়গার মধ্যে তীব্র যানজটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এভাবেই তাদের দমিয়ে রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি এক সকালে বিএনপির নেতা সাইফুল আলম নিরবকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাতকড়া পরিয়ে তোলা হয়।নিরবের নামে ৩১৭ থেকে ৩৯৪টি মামলা রয়েছে। তার উকিলরাও মামলার সংখ্যা নিয়ে নিশ্চিত নন। আদালতের বাইরে আরও ডজনখানেক সমর্থক ছিলেন যাদের বিরুদ্ধে ৪০০টি পর্যন্ত মামলা রয়েছে। তারা একটি গলিতে অপেক্ষা করছিল যেটি বৃষ্টিতে স্যাঁতসেঁতে হয়েছিল। নতুন রাজনৈতিক বন্দিদের জায়গা দিতে সেখান থেকে পুলিশ বারবার বাঁশি বাজিয়ে তাদের সরিয়ে দিচ্ছিল।
আবদুল সাত্তার নামের এক সমর্থকের নামে ৬০টি মামলা রয়েছে। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন কোর্টেই সময় কাটে তার। তিনি বলেন, ‘একটা থেকে আরেকটা মামলার কাজে দৌড়ানো আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে উঠছে না।
সম্প্রতি বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের কথা আমরা জানি। গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির কারণে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। আমেরিকান কর্মকর্তারা যে দেশটিকে দুর্ভিক্ষ আর রোগের ঝুড়ি হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং কয়েক দশক ধরে ক্যু এবং পালটা ক্যু চলেছে। হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে প্রত্যাশিত নির্বাচনের আগে আরেকটি বিস্ফোরণের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। বিএনপি আগামী নির্বাচনকে তাদের শেষ লড়াই হিসেবে দেখছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, আমরা কোনোভাবেই বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দিতে পারি না। তারা ক্ষমতায় আসলে আমাদের মেরে ফেলবে।
বিএনপি নেতারা দাবি করেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রায় ৮০০ নেতাকর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং ৪০০ জন গুম হয়েছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে অনুরূপ কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এ সময় তিনি হাজারো নেতাকর্মীদের জেল এবং হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এটা তারা শুরু করেছে।
৭৫ বয়সী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার এবং পাকিস্তানের কাছ থেকে ১৯৭১ সালে তিনি স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হলে জিয়া ক্ষমতায় এসেছিলেন। ১৯৮১ সালে তিনি বিদ্রোহী সেনাদের হাতে নিহত হন। বলা চলে তখন থেকেই দুই নেত্রী লড়াইয়ের চক্রে আবদ্ধ হয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার লক্ষ্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। খালেদা জিয়ার স্বামীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সেনা ছাউনি থেকে সৃষ্টি হয়েছে।’ খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের পর থেকে জেলে রয়েছেন। বর্তমানে তিনি গৃহবন্দি এবং তার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটছে। তিনি বর্তমানে টেলিভিশন ও পত্রিকা পড়ে সময় কাটান।
২০০৪ সালে শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার অভিযোগ রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে রয়েছেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৯৩টি মামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি যতটা পারেন দলকে টেনে নিচ্ছেন।
করোনা মহামারি ও ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের অর্থনীতিতে এটা বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। সূত্র-নিউইয়র্ক টাইমস।