DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাসোমবার ২৫শে নভেম্বর ২০২৪
ঢাকাসোমবার ২৫শে নভেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিভিন্ন জনের দ্বারে গিয়েছেন এডিসি হারুন

Ellias Hossain
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩ ৪:২৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ছাত্রলীগ নেতাদের পিটিয়ে কক্সবাজারে বদলির বিষয়টি সামনে আসলেও আসে ঘোর আপত্তি, পরে পুলিশের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়িতে বদলির আলোচনা আসলেও হলো সাময়িক বরখাস্ত। হারুনের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতিরও দাবি জানিয়েছেন পরিবার। মামলা করতে পারে পরিবার। বিভিন্ন জনের দ্বারে গিয়েছেন এডিসি হারুন-অর-রশীদ। সমাপ্তির পথে এডিসি হারুন অধ্যায়।

আস্থা ডেস্কঃ

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম ও বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিমকে পিটিয়ে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিভিন্ন জনের দ্বারে গিয়েছেন এডিসি হারুন-অর-রশীদ। বারডেম হাসপাতালে তার ওপর আঘাত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন। তবে কোথাও গিয়ে তিনি ইতিবাচক সাড়া পাননি। বরং বারবার বিতর্কিত হওয়ায় অনেকেই তাকে ভর্ৎসনা করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে থেকে তার একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তাকে নিজের পক্ষে সাফাই গাওয়া বন্ধ করে ‘‘চাকরি বাঁচানোর চিন্তা’’ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার তার বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় কথা বলেছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় থেকেও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। এ অবস্থায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের এডিসির পদ থেকে প্রত্যাহার ও বদলির পর সোমবার হারুনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ডিএমপির ডিসি (অপারেশন্স) মোঃ আবু ইউসুফকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার গঠিত এই তদন্ত কমিটিকে দুই দিনের মধ্যে ডিএমপি কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া সোমবার দুপুরে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল এডিসি হারুনের বিষয়ে কথা বলতে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে দুই ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (এডমিন) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ছাত্রলীগ নেতারা পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে আমাদের জানিয়ে কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। এ ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের কমিটি পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নারী কর্মকর্তার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ সময় পুলিশের পক্ষে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকসহ হেডকোয়ার্টার্স ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শক্তভাবে বার্তা দেওয়া হয়, যদি হারুনকে বরখাস্ত না করে কেবল বদলির সিদ্ধান্তই বহাল থাকে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে। ছাত্রলীগ নেতারা যুক্তি হিসাবে তুলে ধরেন, চাকরিকালীন সময়ে বদলি একটি ‘রুটিন ওয়ার্ক’। এটি কখনোই অপরাধের শাস্তি হতে পারে না। তাও আবার বদলি করা হয়েছে এপিবিএন কক্সবাজারে। প্রকৃত অর্থে এটি কোনো শাস্তির পর্যায়েই পড়ে না।

সূত্র আরও জানায়, সেখানে হারুনের অতীত কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলোও সামনে আনেন ছাত্রলীগ নেতারা। এ সময় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন অন্তত দুজন কর্মকর্তা তার বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড কোনো স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না বলেও তারা উল্লেখ করেন। এ সময় বৈঠকের আলোচনার সারাংশ নিয়েও পুলিশ প্রধানের সঙ্গে আলোচনা হয় কমিশনারের।

ছাত্রলীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন, সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন ও তাহসান আহমেদ রাসেল, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সবুর খান কলিন্স ও ঘটনার ভুক্তভোগী বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম।

বৈঠক সূত্র জানায়, সবার উপস্থিতিতে পুরো ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে শরীফ আহমেদ মুনিম বলেন, আমার এলাকার বড় ভাই রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক খান মামুনের ফোন পেয়ে শুরুতে ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে যাই। পরে সেখান থেকে বারডেম হাসপাতালে গিয়েছি। তখন বারডেম হাসপাতালে এডিসি হারুন ও মামুন ভাইয়ের স্ত্রী একসঙ্গে অবস্থান করছিলেন। এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। পরে আমাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় ওসি তদন্তের রুমে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। এডিসি হারুন অত্যন্ত আগ্রাসী ভূমিকায় ছিলেন। তার পাশাপাশি শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ গোলাম মোস্তফা খুবই মারমুখী ছিলেন। নেমপ্লেট খুলে দাড়িওয়ালা এক এসআই এবং সম্ভবত এসআই আব্বাস নামের আরেকজন খুব মারধর করেন। বন্দুকের বাঁট দিয়ে তাদের মারধর করা হয়। নাঈমকে ওসি তদন্তের রুমের ফ্লোরে ফেলে পায়ের বুট দিয়ে আঘাত করা হয়।

আরো পড়ুন :  বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএ সন্ত্রাসী নিহত

সূত্র আরও জানান, মুনিমের এই আলোচনার সময় ডিএমপি কমিশনার তার কাছে জানতে চান নাঈমকে এভাবে মারা হলেও আপনাকে কেন মারেনি। উত্তরে মুনিম বলেন, নাঈমকে মারধরের আগে থানায় নেওয়ার পথে আমার মাথায় জোরে একটি আঘাত করা হয়। এতে আমার মাথা ঝিম দিয়ে থাকে। পরে নাঈমকে বেধড়ক মারতে দেখে আমি অজ্ঞান হওয়ার ভান করে থাকি। এজন্য আমাকে সেভাবে মারতে পারেনি

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ঘটনার বর্ণনা শুনে হতবাক হন ডিএমপি কমিশনার। ডিএমপির এক অতিরিক্ত কমিশনার ও এক যুগ্ম-কমিশনার উষ্মা প্রকাশ করেন। এডিসি হারুন পুরো ঘটনায় বিভিন্ন জায়গায় নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এমন বিষয়ও উঠে আসে। এ সময় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাকে কক্সবাজারে বদলির বিষয়টি সামনে এনে ঘোর আপত্তি জানানো হয়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়িতে বদলির আলোচনা আসে। পরে অবশ্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্তের আদেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। ততক্ষণে ছাত্রলীগ নেতারা ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে বের হয়ে যান।

বৈঠক শেষে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন,, অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনায় সব শ্রেণির নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যুগে যুগে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই করেছে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় ছাত্রলীগ যে দায়িত্বশীলতা ও সুবিবেচনার পরিচয় দিয়েছে, এর ওপরই ভিত্তি করে বলতে পারি ছাত্রলীগ এ বিষয়ে একটি নিয়মতান্ত্রিক সুস্পষ্ট সমাধান পাবে। ভুক্তভোগীদের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা মামলা দায়ের করবে কিন্তু ছাত্রলীগ নিষেধ করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, দাবিটি মিথ্যা। পুলিশের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে-জানতে চাইলে সাদ্দাম বলেন, তারা এ বিষয়ে বিব্রতবোধ করছেন। ছাত্রদলের বিবৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের ফাঁদে ছাত্রলীগ পা দেবে না

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে সরাসরি একজন ভুক্তভোগীও এসেছিলেন। ডিএমপি কমিশনার ছাত্রলীগকে জানিয়েছেন, ব্যক্তির দায় বাংলাদেশ পুলিশ বহন করবে না। এটি একদম পরিষ্কার কথা।

তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিকে একেবারেই নিরপেক্ষ এবং কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করে পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে পুলিশের সর্বোচ্চ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন পর্যায়ের যেই জড়িত থাকুক, যার যতটুকু দায়-দায়িত্ব রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যুগ্ম কমিশনার আরও বলেন, এ ধরনের অপরাধে দুই ধরনের দণ্ড রয়েছে। একটি লঘু দণ্ড, অন্যটি গুরুদণ্ড। লঘুদণ্ডের মধ্যে চারটি বিষয় রয়েছে, গুরুদণ্ডের মধ্যেও চারটি বিষয় রয়েছে। তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে কাকে কতটুকু দায়ী করবে তার ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ চাকরিচ্যুত হতে পারে, কেউ বা তিরস্কারও হতে পারে।

নাঈমের মা নাজমুন নাহার বলেন, আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে মারধর করা হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতারা, সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সবাই আমাদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। এডিসি হারুনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু আমরা তার স্থায়ী চাকরিচ্যুতি চাই। সরকার ও পুলিশ তাদের কাজ করেছে। আমরা আমাদের মতো আইনের আশ্রয় নেব।

অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি আছেন আনোয়ার হোসেন নাঈম। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। শরীর এপাশ-ওপাশ করতেও কষ্ট হচ্ছে তার। এ অবস্থায় তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে।

বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, নাঈমের চিকিৎসা মুখ ও নাকের সঙ্গে বিষয়টি সম্পর্কিত সে কারণে নাক-কান-গলা বিভাগকে যুক্ত করা হয়েছে। ব্রেনের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে সেজন্য নিউরো সার্জারি বিভাগকে সংযুক্ত করেছি। এদেরসহ সার্জারি বিভাগ, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সমন্বয়ে আমরা একটা বোর্ড করে দিয়েছি। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী চিকিৎসা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, পুলিশের কোনো একজন সদস্যের এ ধরনের অপকর্ম, অপকীর্তি এবং অপেশাদারসুলভ আচারণের জন্য সমগ্র বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে-আশা করি সেটা সরকারও চাইবে না। সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই ঘটনার বিচার হওয়া জরুরি।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০০
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০৫
  • ১১:৪৯
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩১
  • ৬:২০