বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নারী পুলিশকে ধর্ষণের অভিযোগে ওসি আবু নাসের রায়হানের বিরুদ্ধে তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নীলফামারীর সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ভিকটিমের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
জানা গেছে, ওই নারী পুলিশ প্রশিক্ষণ শেষে বিগত ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর পুলিশ কনস্টেবল পদে নীলফামারী পুলিশ লাইনে যোগদান করেন। এরপর থেকেই নীলফামারী রিজার্ভ অফিস ইন্সপেক্টর (বর্তমানে বরিশাল ডিআইজি অফিসে ওসি তদন্ত হিসেবে কর্মরত) আবু নাসের রায়হান প্রায়ই তাকে উত্যক্ত করতো এবং বিভিন্ন ধরণের কুপ্রস্তাব দিতো।
ভিকটিম তার অধস্তন কর্মচারী হওয়ায় মুখ বুঝে তা সহ্য করে যাচ্ছিল। এদিকে আবু নাসের রায়হানের স্ত্রী নীলফামারী জর্জ কোর্টের পেশকার হওয়ায় তিনি কর্মস্থলে গেলে বিভিন্ন অজুহাতে ভিকটিমকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে অশ্লীল পর্ণ ছবি দেখিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দিতো।
এরই এক পর্যায়ে ২০১৬ সাল থেকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাদের এ সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে পূর্বের স্বামীকে তালাক প্রদানে বাধ্য করেন। স্বামীকে তালাক দেয়ার পরও দীর্ঘদিনেও বিয়ে না করায় চাপ দিলে একদিন হুজুর প্রকৃতির একজন লোক ডেকে এনে সুরা কালাম পড়ে বিয়ে করেন।
কিন্তু কাজীর মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করার কথা বললে আবু রায়হান বলেন, আমরা তো আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে বিয়ে করেছি, রেজিষ্ট্রির প্রয়োজন নেই। এভাবে বিয়ের নামে দীর্ঘদিন থেকে ধর্ষণ করে আসছিল।
বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন রেজিষ্ট্রি বিয়ের চাপ দিলে আবু রায়হান কালক্ষেপন করতে থাকেন এবং উল্টো তাদের শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন।
পরে কৌশল করে ভিকটিমকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পুলিশ লাইনে বদলী করায় এবং নিজেও বরিশাল ডিআইজি অফিসে বদলী হয়ে যান।
এখন সে তাদের সম্পর্ক সম্পূর্ণরুপে অস্বীকার করেন। এতে ভিকটিম চরম বিপাকে পরে উপায়ন্তর না পেয়ে প্রথমে বরিশাল ডিআইজি বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন এবং নিজ জেলা ঠাকুরগাঁয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৮৮/২০২০ ইং।
এরই প্রেক্ষিতে বরিশাল ডিআইজি তদন্তের নির্দেশ দিলে গতকাল মঙ্গলবার সৈয়দপুর সার্কেল কার্যালয়ে ভিকটিমকে ডেকে নিয়ে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল জানান, এ সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত চলছে।