করোনার টিকার বুস্টার ডোজ নিয়ে কোটি কোটি ডলার মুনাফার স্বপ্ন দেখছে টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বুস্টার ডোজ বিক্রি করে আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্পোন্নত আর উন্নয়নশীল দেশে টিকার সুষম বণ্টন না করে উন্নত দেশের বুস্টার ডোজ দেওয়া হলে বিশ্বজুড়ে করোনার মৃত্যহার বাড়বে।
করোনা মহামারির ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করছে করোনাপ্রতিরোধী টিকাগুলো। শুরুতে এক আর দুই ডোজের টিকার প্রাধান্য দেয় সংস্থাগুলো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টিকার কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ায় এখন বুস্টার ডোজের কথা ভাবতে হচ্ছে।
এ বুস্টার ডোজ নিয়ে কোটি কোটি ডলার মুনাফার স্বপ্ন দেখছে টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, বায়োএনটেক আর মডার্না এখন দেখছে মুনাফার স্বপ্ন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকার সুষম বণ্টন না হলে শুধু পশ্চিমা দেশগুলোতে বুস্টার ডোজ প্রয়োগের উদ্যোগ নিলে বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃত্যুহার আরও বাড়বে। কারণ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য এখনো করোনার টিকার প্রথম ডোজই নিশ্চিত করতে পারেনি। এ জন্য সেপ্টেম্বরের শেষদিকে বুস্টার ডোজ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
কয়েক মাস ধরেই টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা আশা করছে দুই ডোজ টিকা নেওয়া মানুষ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধব্যবস্থা বজায় রাখতে এবং করোনার নতুন ধরনগুলো প্রতিরোধ করতে নিয়মিত অতিরিক্ত ডোজের প্রয়োজন পড়বে।
বয়স্ক নাগরিক আর দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থার মানুষের জন্য বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া দেশের তালিকা দিন দিনই বড় হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ব্রিটিশ সরকার বুস্টার ডোজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। দেশটির স্বাস্থ্য সচিবের পরামর্শ, ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ফ্লু টিকার সঙ্গে করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়া যেতে পারে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল প্রতিরোধব্যবস্থার ব্যক্তিদের জন্য বুস্টার ডোজের অনুমোদন দিয়েছে। ফ্রান্স ও জার্মানিও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে ইসরায়েল ও চিলি তাদের বয়স্ক নাগরিকদের বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করেছে।
গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা মডার্না, ফাইজার ও তার জার্মান অংশীদার বায়োএনটেক শুধু চলতি বছরের জন্য বুস্টার ডোজ সরবরাহে ৭২০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট কোম্পানি ফাইজার ও তার জার্মান অংশীদার বায়োএনটেক এবং মডার্না ২০২১ ও ২০২২ সালে করোনাপ্রতিরোধী টিকা বিক্রিতে ৬ হাজার কোটি ডলারের চুক্তি করেছে। এসব চুক্তির মধ্যে আছে টিকার প্রাথমিক দুই ডোজ সরবরাহ এবং ধনী দেশগুলোকে বুস্টার ডোজ সরবরাহ করা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কোভিড-১৯ টিকা বিক্রি করে ২০২৩ সালে ফাইজার ও বায়োনটেক ৬৬০ কোটি ডলার ও মডার্না ৭৬০ কোটি ডলার আয় করবে। এ আয়ের বেশির ভাগই আসবে টিকার বুস্টার ডোজ থেকে। এরপর এ টিকার বার্ষিক বাজার হবে প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের বেশি। যদি সাধারণ মানুষের যদি নিয়মিত করোনা টিকার বুস্টার ডোজের প্রয়োজন পড়ে, তাহলে বাজারটি সাধারণ ফ্লু টিকার সমান হবে। প্রতি বছর ৬০ কোটিরও বেশি ডোজ ফ্লু টিকা সরবরাহ করা হয়।
মার্কিন সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ফ্লু টিকার প্রতি ডোজের দাম ১৮-২৫ ডলার। চলতি বছর টিকা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো ৪ থেকে ৫ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে ফ্লু টিকার। আর ফাইজার যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ ডলার ৫০ সেন্ট এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ১৯ ইউরো ৫০ সেন্ট মূল্যে প্রতি ডোজ করোনা টিকা সরবরাহ করছে। তবে পরবর্তী সরবরাহ চুক্তিতে এরই মধ্যে সংস্থাটি ২৪ ও ২৫ শতাংশ বাড়িয়েছে টিকার দাম।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা আর জনসন অ্যান্ড জনসন তাদের টিকার বুস্টার ডোজ নিয়ে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি নোভাভ্যাক্স, কিউরভ্যাক ও সানোফিও বুস্টার ডোজ ব্যবহারের পক্ষে। যদিও সংস্থাগুলোর টিকাগুলো এখনো কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পায়নি।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।