চীনের রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান এভারগ্র্যান্ড। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এটি মূলত উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের কাছে অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে থাকে।২০১৮ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি।
সেপ্টেম্বরের শুরুতেই অ্যাপার্টমেন্ট তৈরির কাজে যুক্ত প্রতিষ্ঠানটি নতুন একটি ঘোষণা আনে।তাদের ওই ঘোষণায় চমকে যায় সবাই। কারণ এ ধরনের ঘোষণা সাধারণত কাপড়-চোপড় বা প্রসাধন সামগ্রী বিক্রির ক্ষেত্রেই দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানটি তাদের সব ধরনের সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ ছাড় ঘোষণা করে। এর মেয়াদ ছিল এক মাস।
তাদের এ ধরনের বিজ্ঞাপন নিয়েও হয়েছে বিতর্ক। কেউ বলেছেন, এটা ক্রেতা ধরার নতুন ফন্দি আবার কেউ বলছে হয়তো সত্যিই এমন ছাড় দিচ্ছে তারা। তবে তাদের এ ধরনের কাজের উদ্দেশ পরিষ্কার। প্রতিষ্ঠানটি আসলে প্রচুর দেনায় ডুবে গিয়েছে। সে কারণে তাদের হাতে নগদ টাকা প্রয়োজন এবং সেটা খুব দ্রুতই।
আরও পড়ুন : ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একজন মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়
তাই বড় ধরনের ছাড় নিয়ে ঋণের বোঝা কমাতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। এভারগ্র্যান্ডের বর্তমান ঋণের বোঝা প্রায় ১২০ বিলিয়ন ডলার। চীনের যে কোনো তালিকাভূক্ত কোম্পানির চেয়ে এই সংখ্যা অনেক বেশি। প্রতি বছর তারা প্রায় ৬ লাখ বাড়ি তৈরি করে থাকে।
গত কয়েক বছরে মূল ব্যবসা থেকে সরে এসে প্রতিষ্ঠানটি একটি ফুটবল অ্যাকাডেমি, একটি বোতলজাত পানি (পরবর্তীতে এটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে) এবং একটি ইলেক্ট্রিক গাড়ির কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর অনলাইনে একটি চিঠি ছড়িয়ে পড়ে। সে সময়ই এভারগ্র্যান্ডের ঋণে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামনে আসে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের নগদ অর্থের সংকটের বিষয়ে সতর্ক করে এবং গুয়াংডং সরকারের কাছে সহযোগিতার আবেদন জানায়।
পূর্ববর্তী একটি চুক্তি অনুসারে, শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত না করতে পারলে এভারগ্রান্ডে বিনিয়োগকারীদের ১৩০ বিলিয়ন ইউয়ান দেবে। তবে এভারগ্র্যান্ডে বলছে, রয়টার্স এবং ব্লুমবার্গের সাংবাদিকরা যে চিঠির কথা বলেছেন তা মনগড়া।
ওই চিঠির যে অংশটি সবচেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল তা ছিল প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি ভবিষ্যদ্বাণী। সেখানে বলা হয়েছে যে, এভারগ্রান্ডের ব্যর্থতা কৌশলগত আর্থিক ঝুঁকির দিকে পরিচালিত করবে।
এটা কি সত্যিই ব্যর্থতার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব নয়? এমন প্রশ্নই এখন ঘুরেফিরে আসছে। তবে ওই চিঠির সত্যতা থাকুক বা না থাকুক, একটি বিষয় একেবারেই পরিষ্কার। তা হচ্ছে, এভারগ্র্যান্ডে ধসের মুখে রয়েছে। এর ফলে অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পরতে পারে। তারা এই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারে কিনা সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
ওই চিঠিতে ধারণা প্রকাশ করা হয়েছিল যে, ২২৯টি শহরে নিজেদের প্রকল্প পরিচালনা করছে এই ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটি। এসব প্রকল্পে ৩০ লাখের বেশি মানুষ কাজ করছে। চীনের ১৭১টি ব্যাংক এবং আরও ১২১টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে এভারগ্র্যান্ডে। তারা ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে এসব প্রতিষ্ঠানও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে।