ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট পৌনে দুই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা।নড়াইলের কালিয়ায় গ্রাহকদের প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে।
উপজেলার চাচুড়ীতে অবস্থিত ওই ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় টাকা হাতিয়ে নেয়ার এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি জানাজানি হলে তালাবদ্ধ এজেন্ট ব্যাংকিং অফিসের সামনে ভিড় করেন গ্রাহকরা।খায়রুল বাশার উপজেলার ফুলদাহ গ্রামের ইমাদুল খানের ছেলে। ঘটনার পর থেকে তিনি গাঢাকা দিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কালিয়া উপজেলার চাচুড়ী শাখাটি ২০১৯ সালের মাঝামাঝি স্থাপন করা হয়। এজেন্ট খায়রুর বাশার জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা হারে জামানত নিয়ে শাখাটিতে ১০ জন কর্মচারী নিয়োগ দেন। বর্তমানে শাখাটিতে ডিপিএস, মেয়াদি আমানত ও সঞ্চয়ী হিসাব মিলে হাজারের বেশি গ্রাহক নিয়মিত লেনদেন করেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই মেয়াদি আমানতের গ্রাহক রয়েছেন।
প্রতি মাসে দুই হাজারেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন এ শাখার মাধ্যমে। কিন্তু তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের পরও বিল বকেয়া থাকার নোটিশ পাচ্ছেন গ্রাহকরা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, বেশকিছু দিন ধরে হিসাব থেকে টাকা তুলতে পারছেন ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহকরা। মাসিক মুনাফা হিসাবের গ্রাহকরা মুনাফার টাকা তুলতে না পারার কারণে এক সপ্তাহ ধরে এলাকায় এজেন্ট খায়রুল বাশারকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
সর্বশেষ সোমবার উপজেলার চাচুড়ী গ্রামের মফিজুল হক, পুরুরিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, ডহরচাচুড়ী গ্রামের পিটু বিশ্বাস টাকা তুলতে না পেরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাদের হিসাব নম্বরে কোনো টাকা জমা নেই।
গ্রাহকদের হিসাব নম্বর থেকে টাকা উধাও হওয়া ও বিদ্যুৎ বিলের টাকা জমা না করে হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাটি ওই এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তারপর গ্রাহকরা ওই এজেন্ট অফিসে ভিড় জমাতে শুরু করেন। ততক্ষণে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে এজেন্ট খায়রুল বাশার পালিয়ে যেতে সক্ষম হন বলে ব্যাংকের গ্রাহকরা অভিযোগ করেন।
যশোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর কালিয়া আঞ্চলিক অফিসের ডিজিএম মো. মমিনুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ওই এলাকার প্রায় দুই হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করেন। কিন্তু গত মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে ওই গ্রাহকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ওই এজেন্ট গ্রহণ করলেও তা ব্যাংকে জমা দেননি। ওইসব গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। ঘটনাটি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ কনি মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট খায়রুল বাশারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে ব্যাংক এশিয়ার হেড অব মার্কেটিং অনিক হাসান, চাচুড়ী শাখার ম্যানেজার ফারজানা ইয়াছমিন সাথীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তাদের ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।