ভাঙ্গায় এম্বুলেন্সে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিচয় মিলেছে “ফলোআপ”
মামুনুর রশীদ/ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের মালিগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের উপর শনিবার বেলা ১১টায় অজ্ঞাত একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুনে ধরে ভস্মীভূত হওয়ায় ৭ যাত্রীসহ অ্যাম্বুলেন্স চালকের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা হলো ৮ জন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন, বোয়ালমারীর গুনবাহা ইউনিয়নের ফেলানগর গ্রামের আজিজার স্ত্রী তসলিমা বেগম (৫০), তাঁদের মেয়ে বোয়ালমারীর শেখর ইউনিয়নে মাইট কুমড়া গ্রামের বাসিন্দা আলমগীরের স্ত্রী কমলা (৩০), কমলার তিন সন্তান আরিফ (১২), হাসিব (১০) ও আফসা (১) এবং সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট মাহমুদের স্ত্রী বিউটি (২৬) ও বিউটির ছেলে মেহেদী (১০)। বিউটির স্বামী মাহমুদ রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসের সার্জেন্ট পদে কর্মরত। অ্যাম্বুলেন্সের চালক মৃদুল মালো (২৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন।
এতথ্য নিশ্চিত করেছেন ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবু জাফর। অ্যাম্বুলেন্সে আগুনে পুড়ে মৃত্যুর খবরে স্থানীয় জনগণ সেখানে ভীর জমিয়ে উঠায় ঘটনাস্থল মালিগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে এলাকায় নিস্তব্ধ শোকাহত একটি পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী যুবক অভি দৈনিক আস্থাকে জানান, আনুমানিক সকাল ১১টার দিকে তিনি এক্সপ্রেসওয়ের পাশে দাড়িয়ে ছিলেন। এসময় ঢাকার দিক থেকে ভাঙ্গার পথে অজ্ঞাতনামা অ্যাম্বুলেন্সটি এক্সপ্রেসওয়ের উপরে উঠামাত্র আগুন ধরে যায়। এসময় অ্যাম্বুলেন্স এর ভিতরে থাকা যাত্রীরা দরজা খোলার চেষ্টা করেন। কিন্ত অতক্ষণে অ্যাম্বুলেন্সটি এক্সপ্রেসওয়ের রেলিঙ্গের সাথে জড়সড়ে টক্কর খেয়ে অ্যাম্বুলেন্স গাড়িটির চারপাশে আগুন ধাউ ধাউ করে আমিসহ আমাদের অনেকের সামনে জ্বলতে দেখা যায়। ওই যুবক আরও জানায় শুরু থেকে ৯৯৯ একাধীকবার আমরা কল করে কোন উত্তর না পাওয়ায় স্থানীয় থানা ও হাইওয়ে থানা পুলিশের নাম্বারে কল করলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনা স্থলে ছুটে আসেন। কিন্ত ততক্ষনে গাড়িতে থাকা সকল যাত্রীরা আগুনে পুড়ে একের পর একটি প্রাণ ভস্মীভূত হয়ে পড়ে জানিয়ে যুবক আরও জানায়, আমরা পথচারীরা মিলে অ্যাম্বুলেন্স চালককে উদ্ধার করার পর চিকিৎসার জন্য দ্রুত একটি অটো রিক্সায় তুলে দেয় জানান।
প্রত্যক্ষদর্শী অপর একজন শফিকুল ইসলাম নাহিদ জানান, ঘটনার সময় আমি ওই রাস্তায় বাইক চালিয়ে আসছিলাম। আচমকা গাড়িটি রেলিং এর সাথে ধাক্কা খেয়ে একটি শব্দ হয়। তাকিয়ে দেখি অ্যাম্বুলেন্সটি আগুন ধরে ধাউ ধাউ করে জ্বলছে । আগুনের তীব্রতা দেখে মনে হচ্ছিলো গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন ধরেছে বিধায় আমরা কেউ কাছে যেতে সাহস করিনি। পোড়ার দৃশ্য দূর থেকে দাঁড়িয়ে আমরা অনেকেই নীরবে দেখছিলাম। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা এসেছিল কিন্ত ততোক্ষনে পুড়ে শেষ গাড়িতে থাকা যাত্রীরা।
এদিকে এক্সপ্রেসওয়ের উপর দুর্ঘটনার ঘটনায় সেখানে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার যানজটের কবলে পড়েন দূরপাল্লার যানবাহনের যাত্রীরা। পরে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ও ভাঙ্গা শিবচরের হাইওয়ে থানার যৌথ সমন্বয়ে যানজটের নিরসনের পাশাপাশি নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠায় পুলিশ।
ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে যতদূর জানা গেছে ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি খুলনার পথে যাচ্ছিল। হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়ের উপর আসার পরে গাড়িতে আগুন ধরে অ্যাম্বুলেন্সের সাতজন যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। নিহতের পরিচয় পাওয়া গেছে।
হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে যায়। চালকের পাশের জানালাটি খোলা ছিল। এছাড়া সব জানালা আটকানো ছিল। চালক রক্তাক্ত অবস্থায় প্রাণ নিয়ে বের হয়ে এলেও তাকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। গাড়ির ভিতরে থাকা অন্যরা কেউ বের হতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। গাড়িটির সামনের অংশে বিস্ফোরণ হয়েছিল তবে গাড়ির পেছনের দুইটি গ্যাস সিলিন্ডার অক্ষত রয়েছে। ভেতরে যারা ছিলেন তারা সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছেন। যেহেতু এটা অ্যাম্বুলেন্স ছিল ভিতরে যারা ছিলেন তারা রোগী ও তাদের স্বজনরা কেউ হবেন বলে মনে করছেন প্রশাসন।
অ্যাম্বুলেন্সের চালক মৃদুল মালো (২৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন, সেখানে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা এলে তাঁদের হাতে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান তালুকদার জানান, এ ঘটনায় তদন্তে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বোয়ালমারী উপজেলা থেকে ভাড়া নিয়ে গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এসেছিলেন অ্যাম্বুলেন্সচালক মৃদুল মালো। আজ ফেরার সময় ঢাকার কদমতলী থেকে তিনি ওই যাত্রীদের অ্যাম্বুলেন্সে তুলেছিলেন। এরপর রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে যান। সেখানে চিকিৎসা শেষে যাত্রীদের নিয়ে বোয়ালমারী ফিরছিলেন।
চালক মৃদুল মালো এক্সপ্রেসওয়েতে বেপরোয়া গতিতে আকাবাকাভাবে চার-পাঁচটি মোটরসাইকেল আসতে দেখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সেটি এক্সপ্রেসওয়ের সড়ক বিভাজকের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তবে নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণেই নাকি পেছন থেকে অন্য কোনো গাড়ির ধাক্কায় রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে কিনা তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।