ভারত ও কানাডার দ্বন্দ্বকে পশ্চিমাদের করণীয়
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ। যার অর্থনীতি পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম। চীনের বিরুদ্ধে অবস্থানের ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো কাছে ভারত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভারতকে সমীহ ও গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট।
পশ্চিমা কূটনীতিকদের আশঙ্কা, একজন শিখ নেতা হত্যাকাণ্ডের জের ধরে কানাডা ও ভারতের মধ্যে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে পশ্চিমা দেশগুলো দুই দলে ভাগ হয়ে যেতে পারে। দেশ দুটির মধ্যে বর্তমানে চূড়ান্ত উত্তেজনার পাশাপাশি সম্পর্ক একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। সম্প্রতি পশ্চিম কানাডায় একজন শিখ নেতাকে হত্যার ঘটনায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সরাসরি ভারতকে অভিযুক্ত করলে এই রেষারেষির সূত্রপাত হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গ্লোবাল সাউথ হিসেবে পরিচিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে চাইছে ভারত। এই দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশই ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা জানায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো কূটনৈতিক উপায়ে এই দেশগুলোকে নিজেদের পক্ষে রাখার চেষ্টা করছে এবং এটা বোঝাতে চাইছে যে, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ তাদের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কানাডা ও ভারতের দ্বন্দ্বে এই প্রচেষ্টা নষ্ট হয়ে যাক, এমনটা কিছুতেই চান না পশ্চিমা কূটনীতিকরা।
কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছে শিখ নেতা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কানাডার মিত্র দেশগুলো অনুগত থাকলেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে তারা। হোয়াইট হাউসের বক্তব্য হলো—যুক্তরাষ্ট্র শিখ নেতার হত্যার অভিযোগের বিষয়ে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ‘কানাডার তদন্ত এগিয়ে নেওয়া এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।
শিখ নেতা হত্যাকাণ্ডের জেরে এই ধরনের কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে কারণ এই দেশ দুটিতে বিপুলসংখ্যক শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করছেন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব জেমস ক্লিভারলি জানিয়েছে, গত সোমবার শিখ নেতা হত্যার অভিযোগের বিষয়ে তিনি কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলির সঙ্গে কথা বলেছেন এবং কানাডা যা বলেছে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে যুক্তরাজ্য।
তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্রিটেন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করবে কি-না, সে বিষয়ে কোনো কথা বলেননি ক্লিভারলি। তবে তিনি জানিয়েছেন, অন্যান্য আরও ইস্যুতে যুক্তরাজ্য কী পদক্ষেপ নেবে সেই সিদ্ধান্তের জন্য কানাডার তদন্ত সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
তিনি বলেন, কানাডা ও ভারত উভয়ই যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা কমনওয়েলথের অংশীদার।
কানাডা ও ভারতের চলমান দ্বন্দ্ব নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রও।
অতীতে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া, ইরান কিংবা সৌদি আরবের মতো দেশগুলোর দ্বারা বিদেশের মাটিতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। তারা চাইবে না ভারত সেই তালিকায় যোগ হোক।