DoinikAstha Epaper Version
ঢাকারবিবার ১৫ই জুন ২০২৫
ঢাকারবিবার ১৫ই জুন ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

মনোনয়ন পেতে তৎপর বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা

Astha Desk
জুন ১৫, ২০২৫ ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মনোনয়ন পেতে তৎপর বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা

মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছ/সাজ্জাদ রায়হান/শেখ শাওন হোসেন শ্রাবণঃ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর মাঝে লন্ডন সফল বৈঠকে নির্বাচনি সময়সীমা স্থির হওয়ায় সংসদীয় ৩শ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।

তারা নির্বাচনি এলাকার ভোটারদের মাঝে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণে তৎপরতা শুরু করেছেন। অবশ্য মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে থাকা প্রার্থীরা ইতোমধ্যে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ, উঠান বৈঠকসহ নির্বাচনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে, নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত করার পাশাপাশি শরিকদের আসন ছাড়ার বিষয়ে বিএনপি চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। কয়েকটি দলের সঙ্গে বিএনপি প্রাথমিক আলোচনাও শুরু করেছে।

গত শুক্রবার লন্ডনে তারেক রহমান ও ড. ইউনূস এর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ভোটের সুনির্দিষ্ট তারিখসহ এ বিষয়ে বিস্তারিত রোডম্যাপ ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বারবার বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার না করে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তার দল আগামী নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

যে কোনো সময়ই নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত জানিয়ে তিনি বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ হয়েছে। এর ফলে আমরা দীর্ঘদিন পর গণতন্ত্রে উত্তরণের একটি সুযোগ পাচ্ছি। এখন অতীতের সব ভুলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাচ্ছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগে থেকেই নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন। এর অংশ হিসেবে কোরবানির ঈদের সময় নির্বাচনি এলাকায় ঈদ উদযাপন করেছেন। এ সময় তারা পাড়া-মহল্লা ও বাজারঘাটে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কোনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী বাড়ি বাড়ি গিয়েও নিজে প্রার্থী ঘোষণা করে ভোট চাইতে শুরু করেছেন। তৃণমূলের সমর্থন পেতে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ বৃদ্ধি করছেন।

এদিকে, লন্ডন বৈঠকের পর বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা আরো জোরালো হয়েছে। কেউ কেউ ঈদ শেষ করে ঢাকায় ফিরলেও ভোটের তারিখ নির্ধারিত হওয়ার খবর পেয়ে অনেকে নির্বাচনি এলাকায় চলে গেছেন।

বিএনপি ও তার শরিক রাজনৈতিক দলের সূত্রে জানা গেছে, ৩শ আসনের প্রার্থীদের হিসাব-নিকাশ এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। সংসদীয় আসন গুলোর মধ্যে কতগুলো নিজের দলের জন্য রাখবেন এবং কত আসন শরিকদের ছাড় দেবেন, সে হিসাবও কষছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

বেশ কয়েকজন নেতাকে তিনি নির্বাচনি এলাকায় কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শরিকদের কিছু সম্ভাব্য প্রার্থীর ক্ষেত্রেও তিনি একই বার্তা দিয়েছেন। শরিক দলগুলোও সর্বোচ্চসংখ্যক আসনে ছাড় পেতে তারেক রহমানের ঘনিষ্টজনসহ বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি শুরু করেছে।

জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ত্যাগী, অভিজ্ঞ ও নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রার্থীরা নির্বাচনি এলাকার জনগণ, ভোটারসহ তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে কতটা জনপ্রিয় ও তার জয়লাভের সম্ভাবনার বিষয়টি জরিপ করা হচ্ছে।

এদিকে বিগত দিনে বিশেষ করে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরে যেসব দল ও জোট তাদের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, এমন রাজপথের সঙ্গীদের নির্বাচনি সঙ্গী হিসেবে রাখতে চাচ্ছে বিএনপি।

আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে একসঙ্গে নির্বাচনি মাঠে থাকার চিন্তা করছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলটি। এজন্য কোন আসনে কোন দলকে ছাড় দেওয়া যেতে পারে, মাঠপর্যায় থেকে সে তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে নিজ দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি জোটের প্রার্থীর জনপ্রিয়তাও যাচাই করা হচ্ছে।

এর আগে গত বছরের ২২ অক্টোবর প্রাথমিকভাবে সমমনা শরিক জোটের ছয় নেতাকে নিজ এলাকায় জনসংযোগে সহযোগিতা করার জন্য দলের সংশ্লিষ্ট জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ‘অতীব জরুরি’ নির্দেশনাসংবলিত চিঠি দেয় বিএনপি।

আরো পড়ুন :  চট্টগ্রাম বন্দরে অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ দিয়েছে মার্কিন সেনা

জানা গেছে, তারেক রহমানের নির্দেশেই ওই চিঠি পাঠানো হয়েছিল। অবশ্য ওই চিঠির প্রেক্ষাপটে তৃণমূলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে তার ব্যাখ্যা দিয়ে জানানো হয়, ওই চিঠি ধানের শীষের চূড়ান্ত মনোনয়ন নয়।

যে বিবেচনায় প্রার্থী মনোনয়নঃ

জানা গেছে, বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ে এবার সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ত্যাগী নেতারা মূল্যায়িত হবে। পাশাপাশি দলের পোর্টফোলিওধারী ও অভিজ্ঞদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। ১৯৯১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদেরও বিবেচনায় রাখা হবে বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, ডিসেম্বরে নির্বাচন মাথায় রেখে ৩শ আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের একটি তালিকা তারেক রহমানের হাতে রয়েছে। পাশাপাশি সারা দেশে সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে মাঠ গোছাচ্ছে বিএনপি। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনি আসনে এখন সক্রিয়। জনসংযোগের পাশাপাশি তারা যোগ দিচ্ছেন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোয়।

দলটির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এজন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সৎ, যোগ্য ও সর্বোপরি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী পেতে এখন থেকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকবেন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নেতাকর্মীর নামে অভিযোগ, গণমাধ্যমের খবর, দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া, মাঠের গ্রহণযোগ্যতা, দলের প্রতি আনুগত্য ও জনগণের সঙ্গে কার কতটুকু সম্পর্ক রয়েছে, তা বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

যা বলেছেন দলটির নেতারাঃ

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকা-১৬ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভাষা বুঝতে তারা নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা তাদের দলের ৩১ দফার আলোকে দেশবাসীকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন।

প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাড. ফজলুর রহমান বলেন, মানুষ বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি, তাদের সমস্যার কথা শুনছি।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ময়মনসিংহ-৬ আসনের প্রার্থী মোঃ ওমর ফারুক বলেন, ফ্য্যাসিস্টমুক্ত পরিবেশে ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের কথা শুনে আরো বেশি উচ্ছ্বাস বেড়েছে। আমরাও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এমন টার্গেট ধরে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া বুঝতে চেষ্টা করছি।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দলটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম নিজ এলাকা শরীয়তপুর থেকে নির্বাচন করতে চান উল্লেখ করে বলেন, দল যেখানে চাইবে সেখান থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। বিএনপি জনগণের দল, জনগণের সঙ্গে মিলেমিশেই আমাদের রাজনীতি করতে হয়।

বিএনপির কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। সেক্ষেত্রে অনেকে প্রার্থী হতে চান। এক্ষেত্রে দল প্রথমে যেসব প্রার্থীর জনগণের সঙ্গে বেশি সম্পর্ক থাকবে তাকে মূল্যায়ন করবে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন, দলের দুর্দিনে ত্যাগ ও দলের প্রতি যাদের আনুগত্য রয়েছে, তাদের মূল্যায়ন করবে। একই সঙ্গে যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট মোকাবিলায় বিচক্ষণ তাদের বিবেচনা করবে দল।

দেশের সব জেলায় সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখন নির্বাচনমুখী। এরমধ্যে বিগত ১৫ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থাকা নেতাদের পাশাপাশি নির্বাচনি মাঠে জায়গা করতে উঠেপড়ে লেগেছেন নিষ্ক্রিয়রাও। বিএনপিকে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনের বাইরে রাখে। তরুণ-প্রবীণের সমন্বয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৩:৪১
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৮:৫১
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৩:৪৬
  • ১২:০২
  • ১৬:৩৮
  • ১৮:৫১
  • ২০:১৭
  • ৫:১০