মস্তিষ্কে টিউমার হওয়ার কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে। যা আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না। আর এই কারণেই ঘটে বিপদ! সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুও ঘটে।
অনেকই আছেন যারা তীব্র মাথা ব্যথার সমস্যায় ভুগেন। এমনকি তাদের এই ব্যথায় ঘুম পর্যন্ত ভেঙে যায়। এছাড়া কারণ ছাড়াই হাত-পায়ে দুর্বলতা অনুভব কিংবা দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি হ্রাসের মতো সমস্যায় ভুগেন। অবহেলা নয়, জেনে রাখুন- এসবই হতে পারে মস্তিষ্কে টিউমারের লক্ষণ।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটে ‘ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হলো বিস্তারিত-
কথা বলায় পরিবর্তন
রোগীর বাচনভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে। কথা জড়িয়ে যায়, তোতলামি দেখা দেয়। এসব লক্ষণ দেখা দিলে সাবধান হওয়া জরুরি। এবং সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
হাঁটতে অসুবিধা
হাঁটতে গিয়ে ভারসাম্য হারানো, পা ফেলার সময় তাল হারিয়ে যাচ্ছে এমন মনে হওয়া, পায়ে দুর্বলতা কিংবা অবশভাব অনুভব করা এসবই মস্তিষ্কের টিউমারের ইঙ্গিত দেয়।
ডা. কেসারি বলেন, “ফ্রন্টাল লোব’, যেখানে থাকে ‘মোটর ফাইবার’ কিংবা ‘সেরেবুলাম’য়ে টিউমার হলে এমনটি দেখা যায় রোগীর মাঝে”।
শ্রবণশক্তি পরিবর্তন
হুট করেই কানে কম শুনতে পাওয়াকে কখনই অবহেলা করা উচিত নয়। টিউমার যদি মস্তিষ্কের অষ্টম ‘ক্রেনিয়াল নার্ভ’য়ের ক্ষতি করতে থাকে তবে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে থাকে।
মাথাব্যথায় ঘুম ভাঙা
‘ক্যালিফোর্নিয়া ইনিস্টিটিউট অফ নিউরোসাইন্স’য়ের ‘চেয়ারম্যান’ ও ‘নিউরোসার্জন’ মার্টিন মোর্তাজাভি বলেন, মাথাব্যথা যদি আপনার ঘুম ভাঙাতে পারে সেই মাথাব্যথ্যাকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না।
ভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা
মাথাব্যথার মতো অতিপরিচিত সমস্যাতেও ভিন্নতা আছে। প্রশ্ন হলো- কোন মাথাব্যথা আসলে টিউমার কিংবা ক্যান্সারের ইঙ্গিত দিচ্ছে?
ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকাতে অবস্থিত ‘প্রভিডেন্স সেইন্ট জন’স হেল্থ সেন্টার’য়ের ‘সেইন্ট জন’স ক্যান্সার ইনস্টিটিউট’য়ের ‘নিউরো-অনকোলজিস্ট’ ড. সান্তোস কেসারি বলেন, ঘন ঘন মাথা ব্যথা হওয়া, ব্যথার ধরন ও তীব্রতা একেক সময় একেক রকম হলে স্নায়বিক পরীক্ষা করানো উচিত।
লস অ্যাঞ্জেলেস’য়ের সনদ স্বীকৃত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ জশুয়া মন্সুর বলছেন, সাধারণ মাথাব্যথায় যারা ভোগেন, তাদের জন্য মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার ইঙ্গিত দেয়া মাথাব্যথা হবে তার জীবনের সবচাইতে তীব্র। যার ইতোমধ্যেই ‘মাইগ্রেন’ আছে তার কাছে এই মাথাব্যথা হবে দীর্ঘতম।
স্মৃতি হারানো
ডা. কেসারি বলেন, ভুলো মন কিংবা সাময়িক স্মৃতিভ্রম মস্তিষ্কের ‘টেম্পোরাল’ অথবা ‘ফ্রন্টাল লোব’য়ে টিউমারের ইঙ্গিত দেয়। আর এই দুটো অংশই স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। অনেকসময় দেখা যায় টিউমার ধরা পড়ার কয়েক মাস কিংবা কয়েক বছর আগে থেকেই রোগী এই সমস্যা অনুভব করেছেন। আর তাকে স্মৃতিভ্রংশ মনে করে অবহেলা করে গেছেন।
অস্বাভাবিক বমিভাব ও বমি
ডা. মোর্তাজাভি বলেন, বমিভাব কিংবা বমি হওয়া এমন একটা বিষয় যা হঠাৎ করে বিনা কারণে হয় না। আর কেউ যদি তার হঠাৎ বমিভাব কিংবা বমি হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে না পায় তবে কারণটা হয়ত মস্তিষ্কে লুকিয়ে থাকা টিউমার।
দুর্বলতা
ডা. কেসারি জানান, হাত পায়ে কোনো কারণ ছাড়াই যদি দুর্বলতা অনুভূত হয় তবে সেটা হতে পারে মস্তিষ্কে টিউমার হওয়ার ইঙ্গিত। বিশেষত ‘ফ্রন্টাল লোব মোটর করটেক্স’, ‘নিউরন’ এবং মস্তিষ্কের পেশি নিয়ন্ত্রক ‘পাথওয়ে’তে সেই টিউমারের দেখা পাওয়া আশঙ্কা বেশি থাকে।
ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন
ডা. কেসারি’য়ের মতে, মস্তিষ্কের টিউমার আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণ বদলে যেতে পারে। যে কাজে সে একসময় পটু ছিল, সেই কাজই তার করতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সারাজীবন করে আসা ঘরোয়া কাজগুলোতেও রোগী দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আর এমন ইঙ্গিতের প্রেক্ষিতে টিউমার অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘ফ্রন্টাল লোব’য়ে খুঁজে পাওয়া যায়।
দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন
ডা. কেসারি বলছেন, মস্তিষ্কে টিউমারের কারণে হওয়া দৃষ্টিশক্তির সমস্যা বেশ সুক্ষ্ম হয়। দেখা গেছে, বিভিন্ন জিনিসে ধাক্কা খাওয়ার কারণে শরীরের একপাশে ক্রমাগত তারা আঘাত পাচ্ছেন। আবার প্রায়শই যানবাহন চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন।