ঢাকা ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo চট্টগ্রাম ইপিজেডে আগুন নেভাতে সেনা ও নৌবাহিনীর সহায়তা Logo পানছড়ির মধ্যনগরে ভোট ফর ওয়াদুদ ভূইয়া-ভোট ফর ধানের শীষ ক্যাম্পেইন অনুষ্টিত Logo ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা ও অনুভূতিহীন কর্তৃপক্ষ Logo চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাঁচ কলেজে পাস করেনি কেউ! Logo গরমছড়িতে জমি দখল নিয়ে তাণ্ডব, ফটিকছড়িতে বসতবাড়িতে হামলা! Logo চাকসুতে ভিপি-জিএস শিবিরের, এজিএস ছাত্রদলের Logo এইচএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাসের সংখ্যায় বিপর্যয় — মাত্র ৩৪৫ প্রতিষ্ঠান Logo কিশোরগঞ্জে শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ হামলা ও লুটপাট Logo নিজের যোগ্যতায় আসতে হবে: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর Logo শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল শুরু যেহেতু শিক্ষকগণ কেন্দ্রিয় শহীদাঙ্গনে জড়ো।

মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে অশ্লীল স্লোগান

Astha DESK
  • আপডেট সময় : ০৫:২১:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১২০৪ বার পড়া হয়েছে

মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে অশ্লীল স্লোগান

মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ

২০১৮ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত নিরাপদ সড়ক চাই শীর্ষক আন্দোলনে প্রথম অশ্লীল স্লোগানের প্রয়োগ হয়। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় স্কুল ও কলেজ লেভেলের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে অশ্লীল স্লোগানের প্রয়োগ হয়নি।
প্রয়োগ হয়েছে এরপর থেকে। যা আজ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে মানুষকে সুন্দর ও উত্তম কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা মানুষের সঙ্গে উত্তম ও সুন্দর কথা বলো। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ৮৩)।

যা এখন এতটাই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে রাজনীতিকবিদ সম্মানী ব্যক্তিদের কেউ অশ্লীল ভাষায় দোকানে কষ্ট করা হচ্ছে দেশের রাজনীতিক ব্যবস্থায় শুভ লক্ষণ নয় বলে মনে করছে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।

শেখ হাসিনা পতনের পর মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই অশ্লীল স্লোগান। হাসিনা পতন আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র ও তরুণরা সে যে দলের হোক অথবা নির্দলীয়, যেকোনো আন্দোলনেই, যেকোন মিছিলেই ব্যাপকভাবে অশ্লীল স্লোগান ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বর্তমানের তরুণরা ও ছাত্ররা যেন সুন্দর ও শালীন স্লোগান দিতেই ভুলে গেছে। অনেকে বক্তৃতাতেও এই অশ্লীল শব্দের ব্যবহার করছেন। তরুণ ও ছাত্রদের কাছ থেকে এই ধরনের অশ্লীল শব্দের ব্যাপক ব্যবহার মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সমাজে শিশুদের মাঝে এবং বিভিন্ন স্তরে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুমিনকে গালি দেয়া ফাসেকি এবং তার সঙ্গে ঝগড়া বা লড়াই করা কুফরি। (বুখারি)।

কেবল অশ্লীল স্লোগান বা গালিগালাজ নয়, অশ্লীল বা অশালীন দেহভঙ্গি ও সাইন ব্যবহার করতেও তারা দ্বিধা করছে না। তরুণ ও ছাত্রদের এ ধরনের অধঃগতি ও অধঃপতন অত্যন্ত দুঃখজনক।

কেবল শ্লোগানই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন কনটেন্ট, পোস্ট এবং কমেন্টেও ভয়াবহভাবে অশ্লীল শব্দের ব্যবহার, গালিগালাজ ছড়িয়ে পড়েছে। কারো পোস্ট, কনটেন্ট কারো পছন্দ না হলে বা বিপক্ষে গেলেই কমেন্টে মুহুর্তের মধ্যে হাজার হাজার গালিগালাজ করা হচ্ছে। এটা এতটাই অশ্লীল যে, পড়তেও রুচিত বাধে।

সাধারণভাবে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের বটবাহিনী বা কর্মীদেরকে এজন্য দায়ী করা হয়। বলা হয়, তাদের কর্মীরা অসংখ্য ফেক আইডি তৈরি করে এই গালিগালাজে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। এতে সত্যতা থাকলেও, কেবল ওই নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠন নয়, অন্যান্য প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ তরুণরা বর্তমানে দেখাদেখি এই অশ্লীল গালিগালাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে।

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গালিগালাজকারী, অশালীনভাষী এবং অভিশাপকারী ছিলেন না। আমাদের কারো প্রতি নারাজ হলে তিনি কেবল এটুকু বলতেন যে, ‘তার কি হলো! তার কপাল ধূলিময় হোক।’ (বুখারি) শুধু তাই নয়, তিনি আরো বলেছেন, ‘তুমি রূঢ় (কঠিন ও কর্কশ) ব্যবহার এবং অশালীন আচরণ বা কথাবার্তা ছেড়ে দিবে। (বুখারি)।

এগুলো ফেক আইডি দিয়ে করা হয় বলে সনাক্ত করা খুব কঠিন যে, কোন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন এ ব্যাপারে এগিয়ে এবং কোনটি পিছিয়ে। তবে যেই এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকুন, অশ্লীল শব্দ একটিও কাম্য নয়। এছাড়াও ওটিটি প্লাটফর্মে তৈরি নাটক এবং সাম্প্রতিক নির্মিত কিছু সিনেমাতে ব্যাপকভাবে গালিগালাজ ও অশ্লীল শব্দের ব্যবহার দৃশ্যমান। সেন্সর বোর্ড কিভাবে এ ধরনের শব্দকে বৈধতা দিয়েছে সেটাই বিস্ময়কর।

এই জুলাই আন্দোলনে বিপুল পরিমাণ নারী অংশগ্রহণ করেছে। তারা নির্যাতিত হয়েছে আহত হয়েছে। আজ এই নারীদেরকেই টার্গেট করে ব্যাপকভাবে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় তাদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও, কখনো এআই দিয়ে তৈরি ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে তাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে।

এনসিপি নেত্রী তাসনিম জারা, নীলা ইসরাফিল, তাসনুভা, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানাসহ অসংখ্য নারী রাজনৈতিক নেতাকর্মী জুলাই পরবর্তী সময়ে ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল বুলিং এর শিকার হয়েছেন। অনেক সময় নিজ দলের কর্মীদের দ্বারাও তারা সাইবার বুলিং এর শিকার হয়েছেন।

ট্যাগস :

মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে অশ্লীল স্লোগান

আপডেট সময় : ০৫:২১:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে অশ্লীল স্লোগান

মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ

২০১৮ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত নিরাপদ সড়ক চাই শীর্ষক আন্দোলনে প্রথম অশ্লীল স্লোগানের প্রয়োগ হয়। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় স্কুল ও কলেজ লেভেলের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে অশ্লীল স্লোগানের প্রয়োগ হয়নি।
প্রয়োগ হয়েছে এরপর থেকে। যা আজ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে মানুষকে সুন্দর ও উত্তম কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা মানুষের সঙ্গে উত্তম ও সুন্দর কথা বলো। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ৮৩)।

যা এখন এতটাই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে রাজনীতিকবিদ সম্মানী ব্যক্তিদের কেউ অশ্লীল ভাষায় দোকানে কষ্ট করা হচ্ছে দেশের রাজনীতিক ব্যবস্থায় শুভ লক্ষণ নয় বলে মনে করছে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।

শেখ হাসিনা পতনের পর মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই অশ্লীল স্লোগান। হাসিনা পতন আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র ও তরুণরা সে যে দলের হোক অথবা নির্দলীয়, যেকোনো আন্দোলনেই, যেকোন মিছিলেই ব্যাপকভাবে অশ্লীল স্লোগান ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বর্তমানের তরুণরা ও ছাত্ররা যেন সুন্দর ও শালীন স্লোগান দিতেই ভুলে গেছে। অনেকে বক্তৃতাতেও এই অশ্লীল শব্দের ব্যবহার করছেন। তরুণ ও ছাত্রদের কাছ থেকে এই ধরনের অশ্লীল শব্দের ব্যাপক ব্যবহার মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সমাজে শিশুদের মাঝে এবং বিভিন্ন স্তরে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুমিনকে গালি দেয়া ফাসেকি এবং তার সঙ্গে ঝগড়া বা লড়াই করা কুফরি। (বুখারি)।

কেবল অশ্লীল স্লোগান বা গালিগালাজ নয়, অশ্লীল বা অশালীন দেহভঙ্গি ও সাইন ব্যবহার করতেও তারা দ্বিধা করছে না। তরুণ ও ছাত্রদের এ ধরনের অধঃগতি ও অধঃপতন অত্যন্ত দুঃখজনক।

কেবল শ্লোগানই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন কনটেন্ট, পোস্ট এবং কমেন্টেও ভয়াবহভাবে অশ্লীল শব্দের ব্যবহার, গালিগালাজ ছড়িয়ে পড়েছে। কারো পোস্ট, কনটেন্ট কারো পছন্দ না হলে বা বিপক্ষে গেলেই কমেন্টে মুহুর্তের মধ্যে হাজার হাজার গালিগালাজ করা হচ্ছে। এটা এতটাই অশ্লীল যে, পড়তেও রুচিত বাধে।

সাধারণভাবে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের বটবাহিনী বা কর্মীদেরকে এজন্য দায়ী করা হয়। বলা হয়, তাদের কর্মীরা অসংখ্য ফেক আইডি তৈরি করে এই গালিগালাজে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। এতে সত্যতা থাকলেও, কেবল ওই নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠন নয়, অন্যান্য প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ তরুণরা বর্তমানে দেখাদেখি এই অশ্লীল গালিগালাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে।

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গালিগালাজকারী, অশালীনভাষী এবং অভিশাপকারী ছিলেন না। আমাদের কারো প্রতি নারাজ হলে তিনি কেবল এটুকু বলতেন যে, ‘তার কি হলো! তার কপাল ধূলিময় হোক।’ (বুখারি) শুধু তাই নয়, তিনি আরো বলেছেন, ‘তুমি রূঢ় (কঠিন ও কর্কশ) ব্যবহার এবং অশালীন আচরণ বা কথাবার্তা ছেড়ে দিবে। (বুখারি)।

এগুলো ফেক আইডি দিয়ে করা হয় বলে সনাক্ত করা খুব কঠিন যে, কোন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন এ ব্যাপারে এগিয়ে এবং কোনটি পিছিয়ে। তবে যেই এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকুন, অশ্লীল শব্দ একটিও কাম্য নয়। এছাড়াও ওটিটি প্লাটফর্মে তৈরি নাটক এবং সাম্প্রতিক নির্মিত কিছু সিনেমাতে ব্যাপকভাবে গালিগালাজ ও অশ্লীল শব্দের ব্যবহার দৃশ্যমান। সেন্সর বোর্ড কিভাবে এ ধরনের শব্দকে বৈধতা দিয়েছে সেটাই বিস্ময়কর।

এই জুলাই আন্দোলনে বিপুল পরিমাণ নারী অংশগ্রহণ করেছে। তারা নির্যাতিত হয়েছে আহত হয়েছে। আজ এই নারীদেরকেই টার্গেট করে ব্যাপকভাবে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় তাদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও, কখনো এআই দিয়ে তৈরি ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে তাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে।

এনসিপি নেত্রী তাসনিম জারা, নীলা ইসরাফিল, তাসনুভা, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানাসহ অসংখ্য নারী রাজনৈতিক নেতাকর্মী জুলাই পরবর্তী সময়ে ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল বুলিং এর শিকার হয়েছেন। অনেক সময় নিজ দলের কর্মীদের দ্বারাও তারা সাইবার বুলিং এর শিকার হয়েছেন।