ছোট জায়গা এবং অল্প অবকাঠামো ব্যবহার করে মাছ ও সবজি চাষের একটি নতুন পদ্ধতি বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তরুণ উদ্যোক্তাদের অনেকেই এখন পদ্ধতিটি ব্যবহার করছেন।
এই পদ্ধতিটি ‘অ্যাকোয়াপনিকস’ হিসেবে পরিচিত, যেখানে মাটি ছাড়াই সবজি উৎপাদন হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, অ্যাকোয়াপনিকস হলো মাছ ও সবজি চাষের একটি সমন্বিত পদ্ধতি।
আর বাংলাদেশে অ্যাকোয়াপনিকস পদ্ধতির অগ্রদূত ও প্রবর্তক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য চাষ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এম এ সালামকে মনে করা হয়।
বিশ্বের অনেক দেশেই আগে থেকেই অ্যাকোয়াপনিকস পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। অধ্যাপক সালাম এর মতে, বাংলাদেশে যেহেতু চাষযোগ্য জমির পরিমান ক্রমশই কমে আসছে, তাই এ দেশে অ্যাকোয়াপনিকস এর একটি সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে মাছ চাষ ও সবজি আবাদের ক্ষেত্রে।
তিনি বলেন, “যারা ছাদ বাগান করেন বা অল্প জায়গায় মাছ চাষ বা সবজি আবাদ করেন, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ বিষয়। একই জায়গায় মাছ ও সবজির ফলন করা সম্ভব এবং তাও একেবারে কম খরচে।’’
সেই ২০১০ সালে অধ্যাপক সালাম নিজের বাড়ির ছাদে সবজি চাষ শুরু করেছিলেন, আর পরে এর সাথে ২০১১ সালে যোগ করেন মাছ। অ্যাকোয়াপনিকস পদ্ধতি যেমন তাকে যে সাফল্য এনে দিয়েছে, তেমনই তাকে কৃষিক্ষেত্রে পদকও এনে দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে যে, অ্যাকোয়াপনিকস আসলে কী? বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস এর মতে, অ্যাকোয়াপনিকস হলো টেকসই এবং পরিবেশ বান্ধব একটি খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা।
এতে মাছ চাষ থেকে আসা ময়লা এবং দূষিত পানি ফেলে না দিয়ে বরং গাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং সেখান থেকে স্বচ্ছ পরিষ্কার পানি ‘রিসাইকেল’ হয়ে মাছের ট্যাংকে ফিরে আসে।
এখানে লক্ষণীয় এবং উল্লেখযগ্য বিষয় এই যে, এ পদ্ধতিতে মাটি ছাড়াই সবজি উৎপাদন করা যায় এবং ব্যাকটেরিয়া পানির যাবতীয় বর্জ্য, ময়লা ইত্যাদি তাৎক্ষণিকভাবে দূর করে – অনেকটা প্রাণীর কিডনি ও লিভার এর মতো কাজটি সম্পন্ন হয়ে থাকে। অধ্যাপক সালাম বলছেন, “এটি পুরোপুরি একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি।
মাটির ব্যবহার ছাড়াই পানিতে গাছপালা ও শাক-সবজি উৎপাদন করার একটি কার্যকরী কৌশল হলো অ্যাকোয়াপনিকস। এখানে প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়ারা অনুঘটক হিসাবে কাজ করে এবং মাছের বর্জ্য থেকে গাছকে নিজের খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করে।’’