মিতু হত্যার আসামি বাবুল আক্তার ঝিনাইদহে এসআই হত্যার সঙ্গেও জড়িত!
জেলা প্রতিনিধিঃ চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা ছাড়াও পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকরাম হোসেনের হত্যাকান্ডের সঙ্গেও সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার জড়িত বলে নিহত’র স্বজনরা অভিযোগ করেছেন।
আকরাম ঝিনাইদহ শহরের হামদহ পুর্বপাড়ার আবুল হোসেন মাষ্টারের ছেলে। ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর স্ত্রীর কথামতো যমুনা সেতু হয়ে ঝিনাইদহে ফিরছিলেন। শৈলকুপার সড়কে অচেতন হয়ে তিনি পড়ে ছিলেন। সে সময় পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়।
২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারী এসআই আকরাম ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এদিকে পিবিআই অভিযোগের সত্যতা প্রমানে তদন্ত শুরু করেছেন। এসআই আকরামের পরিবার অভিযোগ করেছেন, আকরামের স্ত্রী বনানী বিনতে বশির ওরফে বহ্নির সঙ্গে পরকীয়া প্রেম ছিল বাবুল আক্তারের।
পরকীয়া নিয়ে স্ত্রী বহ্নি ও আকরামের মধ্যে প্রায় ঝগড়া ঝাটি হতো। এক পর্যায়ে বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় আকরাম হোসেনকে হত্যা করা হয়। আকরাম হত্যাকান্ডেরও তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই। অন্যদিকে ঝিনাইদহের একটি আদালতে করা মামলাটি আবার চালু করার কথা জানান এসআই আকরামের দুলাভাই জে এম রশিদুল আলম। বুধবার বিকালে তিনি মুঠোফোনে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
এসআই আকরামের বোন জান্নাত আরা পারভিন বলেন, খুলনায় বাবুল আক্তারের বাবা পুলিশে এবং তার নিহত ভাইয়ের স্ত্রী বনানী বিনতে বহ্নির বাবা বসির উদ্দিন বিআরডিবিতে চাকরি করতেন। তারা পাশাপাশি বাসায় থাকতেন। সেই সুবাদে বাবুল আর বহ্নির মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি তার ভাই আকরামের সঙ্গে বহ্নির বিয়ে হয়।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে খুন হওয়া মাহমুদা খানম ওরফে মিতুকে বিয়ে করেন বাবুল আক্তার। জান্নাত দাবি করেন, বিয়ের পরও বাবুল আর বহ্নির মধ্যে যোগাযোগ ছিল। জান্নাত আরা পারভিন অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর আকরামকে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেন বহ্নি। তিনি আর বাবুল আক্তার পথে সন্ত্রাসী ভাড়া করে রাখেন। এরপর ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় মহাসড়কে মুমূর্ষু অবস্থায় আকরামকে উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎ্সাধীন অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি মারা যান সুদর্শন আকরাম। লাশ বুঝে নেওয়ার পর ঝিনাইদহ শহরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জান্নাত আরার অভিযোগ, আকরামের শ্বশুর একমাত্র জামাইয়ের জানাজায় অংশ না নিয়ে মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাবুল আক্তারের মাগুরার বাড়িতে ওঠেন।
পরে আদালতের নির্দেশে কবর থেকে এসআই আকরামের লাশ উত্তোলন করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তে কাজ সম্পন্ন হয়। ঐ সময় বাবুল আক্তার আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা মিশনে একটি দেশে ছিলেন। ময়নাতদন্তের খবর পেয়ে তিনি জরুরি ভিত্তিতে এক মাসের ছুটিতে দেশে ফিরে আসেন। বাবুল আক্তার দেশে ফিরে প্রভাব খাটিয়ে এসআই আকরামের ময়না তদন্তের রিপোর্ট ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেন বলে তার (এসআই আকরাম) পরিবারের দাবি। এসআই আকরাম হোসেনের দুলাভাই জে এম রাশিদুল আলম অভিযোগ করেন, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকেরা আকরামের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা বললেও পুলিশ মামলা নেয়নি।
ঝিনাইদহের তখনকার পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এসআই আকরাম হোসেনের পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে বলেন, বাবুল আক্তারের সঙ্গে এসআই আকরামের স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্কটি উভয় পরিবারের সবাই জানেন। অনেকটা ঠান্ডা মাথায় এসআই আকরামকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর এসআই আকরামের দুলাভাই জে এম রশিদ কোর্টে মামলা করেন।
আদালত শৈলকুপা থাকায় এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু শৈলকুপা থানা ৬ বছরেও মামলা গ্রহণ করেনি। বাবুল আক্তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের বিনিময়ে থানা ম্যানেজ করেন। যার ফলে আদালতের আদেশের পরও মামলা নেওয়া হয়নি। বাবুল আক্তারের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার মদন গোপালপুর গ্রামে। তাদের মাগুরা শহরেও একটি চার তলা বাড়ি আছে। তার পরিবার মাগুরার বাড়িতে থাকেন। মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসেন। তার বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মদন গোপালপুর গ্রামে একটি তিন তলা বাড়ি তৈরি করছেন।
এজন্য বেশির ভাগ সময় তিনি মদন গোপালপুর থেকে বাড়ি নির্মাণের তদারক করছেন। ১৯৭৪ সালের দিকে বাবুল আক্তারের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। তার তিন ছেলে এক মেয়ে। সবার বড় বাবুল আক্তার। পিতার কর্মস্থলে থেকে তারা বড় হন। ১৯৯০ সালে বাবুল আক্তার খুলনার বটিয়াঘাটা হাইস্কুল থেকে এএসসি পাশ করেন। ১৯৯২ সালে এইচএসসি পাশ করে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন।
২০০১ সালে পাশ করেন। বাবুল আক্তারের বাবা প্রমোশন পেয়ে এসআই পদে উন্নীত হন। নিহত মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি থানার ওসি ছিলেন। আব্দুল ওয়াদুদ মোশারফ হোসেনের অধীনে এসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিতু তখন উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্রী।
২০০১ সালে মোশারফ হোসেন মেয়ে মিতুকে বাবুল আক্তারের সঙ্গে বিয়ে দেন। এর মধ্যে বাবুল আক্তার বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পে চাকরি নেন। রাজশাহীতে পোস্টিং হয়।
বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে যান বাবুল আক্তার। এরপর বিশ্বব্যাংকের চাকরি ছেড়ে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন বাবুল আক্তার। বিসিএস পাশ করে ২০০৪ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন।