বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায়ের অপেক্ষায় তার পরিবার। করোনার সংক্রমণে আদালত বন্ধ থাকাসহ দীর্ঘ এক বছরের বিচারিক কার্যক্রম শেষে আগামীকাল বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামানের আদালত এ রায় ঘোষণা করবেন।
১৬ সেপ্টেম্বর রায়ের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত। আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ এ মামলার সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় রিফাতের পরিবার। রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশা, ১০ আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা দেবেন আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রীকে হত্যা করে প্রবাসীর আত্মহত্যা
রিফাতের বোন ইসরাত জাহান মৌ বলেন, আমরা ভাইয়াকে তো আর ফিরে পাব না। মিন্নিসহ সব খুনির দৃষ্টান্তমূলক সাজা হলে কিছুটা শান্তি পাব। ভাইয়ার আত্মাও শান্তি পাবে।
ইসরাত জাহান মৌ বলেন, আমরা দুই ভাই-বোন। ভাই ছিল কলিজার টুকরা। ভাই ছিল আমার সাহস ও ভরসা। ভাইকে হারিয়ে আজ আমরা নিঃস্ব। ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
মামলার বাদী রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন; এটাই প্রমাণ হোক। রাষ্ট্র বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে দেশবাসীকে জানিয়ে দিক, অপরাধ করে কেউ বাঁচতে পারে না। মিন্নিসহ সব আসামির শাস্তি চাই আমরা।
তিনি বলেন, দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর আমাদের আস্থা আছে। আদালত রিফাতের খুনের সঙ্গে জড়িতদের এমন শাস্তি দিক যাতে আমরা স্বস্তি পাই।
রিফাতের মা ডেইজি আক্তার বলেন, ‘আমি সব আসামির ফাঁসি চাই। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড যেন আর না হয়। আমার মতো আর কোনও মায়ের বুক যেন খালি না হয়।’
এ হত্যাকাণ্ডের কঠিন বিচার চেয়ে রিফাতের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম জন বলেন, গত এক বছর ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠে রিফাতের মুখ। রিফাতকে নিয়ে আমি বরিশাল পর্যন্ত গেছি। নিস্তেজ শরীরে আমি রিফাতের বেঁচে থাকার আকুতি দেখেছি। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
বরগুনার নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, বন্ড বাহিনী একটি নৃশংস খুনের মাধ্যমে বরগুনাকে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত করেছে। তারা এক মায়ের বুক খালি করেছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়।
ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক।
রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন। তার আগে ২১ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালত মিন্নির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর মিন্নির জামিনের বিষয়টি হাইকোর্টে আসে। এ অবস্থায় মিন্নির জামিন কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত ২০ আগস্ট রুল জারি করেন হাইকোর্ট। অবশেষে ২৯ আগস্ট দুই শর্তে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। বর্তমানে জামিনে মিন্নি।