মুক্তি রানী বিশ্বাস পেশায় লেগুনাচালক
স্টাফ রিপোর্টারঃ
মুক্তি রানী বিশ্বাস পেশায় লেগুনাচালক। স্বামীর নাম তপন চন্দ্র বিশ্বাস, তিনি ঢাকার আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
আশুলিয়ার উত্তর গাজীরচট (তালতলা) এলাকায় এক কক্ষের বাসায় থাকেন এই দম্পতি। এক ছেলে পড়ছে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। আর ছয় বছর বয়সী মেয়ে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। নিজে লেগুনা চালান, স্বামীও পোশাক কারখানার শ্রমিক, তাই ছেলে মেয়ে দাদু ঠাকুরমার সাথে শ্বশুরবাড়িতে থাকে, ওখানেই বড় হচ্ছে ওরা। তাদের খরচ বাবদ মাসে কয়েক হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। মাঝেমধ্যে গিয়ে ছেলেমেয়েদের দেখে আসেন অথবা ছেলেমেয়েরা এসে দুই-এক দিন থাকে মা-বাবার সঙ্গে।
মুক্তি রানীর দিন শুরু হয় ভোর চারটা বা পাঁচটার সময়। দিনের রান্না শেষ করে মুখে কিছু দিয়েই বের হন লেগুনা নিয়ে। দুপুরে মাঝেমধ্যে ঘরে ফিরে দুপুরের খাবার খান। লেগুনা চালিয়ে খুব বেশি খিদে লাগলে একটি ছোট কেক আর এক গ্লাস আখের রস খান। মুক্তি রানীর জীবনে বিলাসিতা বলতে গেলে এইটুকুই। মুক্তি রানীর সাজসজ্জা বলতে সুতির সালোয়ার কামিজ আর ওড়না পরেন। গলায় একটি তুলসীর মালা আর কানে ছোট দুটি দুল। সিঁথিতে সিঁদুর আর কপালে টিপ।
ভাইয়ের কাছ থেকে দুই বছরের ট্রেনিং আর ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাওয়ার পর প্রায় এক বছর ধরে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় লেগুনা চালাচ্ছেন তিনি। চালকের আসনে বসা মুক্তি রানীর গলায় ঝুলছে লেমিনেটিং করা ড্রাইভিং লাইসেন্স। যাত্রী খোঁজা থেকে শুরু করে ভাড়া তোলা সবই করেন লেগুনাচালক মুক্তি রানী বিশ্বাস।
সাভার আশুলিয়া এলাকার যারা নিয়মিত লেগুনা যাত্রী আছেন, আপনারা অনেকেই হয়তো চিনবেন এই মুক্তিকে। ভালোই ড্রাইভিং করে। দিনে যাত্রীভেদে কোনো দিন ৫০০ টাকা আবার কখনো আরও কম বা বেশি টাকা আয় করে ঘরে ফেরেন তিনি। বর্তমান লেগুনাটি অনেকটা লক্করঝক্কর, খুব ইচ্ছা কখনো তিনি একদিন সম্পূর্ণ নতুন একটি লেগুনা কিনবেন। তাঁর আরো একটা স্বপ্ন আছে। অন্য নারীরাও যাতে এ পেশায় আসতে পারেন তাই তিনি নারীদের গাড়ি চালানো শেখাতে চান। তাঁর মতে, নারী চালকের সংখ্যা বাড়লে গণপরিবহনে নারী যাত্রীদের হয়রানিও কমবে।