মুরাদনগরে নদী দখল করে আ.লীগের কার্যালয়
কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার চাপিতলায় নিমাইজুড়ি নদীর ওপর ২০টি অবৈধ (১৬টি বাঁশ-কাঠের এবং চারটি ভবন) স্থাপনা রয়েছে। নতুন করে গত ১৫ দিন ধরে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এর পাশে টাঙানো সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন/৮ নম্বর চাপিতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অফিস’। এতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নাম ও ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ব ঘোড়াশাল থেকে প্রবাহিত হওয়া নদী চাপিতলা গ্রাম হয়ে রামচন্দ্রপুর তিতাস নদীতে গিয়ে মিলেছে। এটি বুড়ি নদীর একটি শাখা। নাম নিমাইজুড়ি। একসময় এই নদী দিয়ে যাত্রী ও মালবাহী নৌকা চলাচল করত।
কিন্তু দুই পাড় দখল হয়ে যাওয়ায় এখন খালে পরিণত হয়েছে। নদীর চাপিতলা-বিষ্ণুপুর সড়ক ও কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের দুই পাড় অবৈধভাবে দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে দোকান ঘর। অন্যদিকে চাপিতলা-বিষ্ণুপুর সড়কের দক্ষিণ দিকে নদীর পাড়ে বিভিন্ন অংশে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা দোকান।
এ ছাড়া নির্মাণাধীন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে রয়েছে চাপিতলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদ উদ্দিন ভান্ডারীর বিশাল দোকান।
সেতুর উত্তর পাশে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আরিফের বড় ভাই স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোকসেদুর রহমান আবিরের দোকান। সেতুর দক্ষিণ পাশে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও চাপিতলা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার রয়েছে দুটি দোকান। তাঁরা বেশ কয়েক বছর ধরে নদী দখল করে ভবন নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন।
বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাঁরা উত্তর না দিয়ে সংযোগ কেটে দেন।
চাপিতলা গ্রামের বাসিন্দা বাদল মিয়া বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে এই নদীতে জাল ফেলে বড় বড় মাছ ধরতাম। শুকনো মৌসুমেও এ নদীতে পানি থাকত। তখন কনিজাল দিয়ে ছোট মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতাম। সেতুর চারপাশে দোকানঘর নির্মাণ করায় নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। আগের মতো নৌকা চলে না। মাছও পড়ে না।’
এ বিষয়ে চাপিতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘এটি দোকানঘর নয়, চাপিতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস করা হচ্ছে। চাপিতলা বাজারের পাশে কমপক্ষে ২০টি দোকান তৈরি করে অনেকে টাকা খাচ্ছে, সেটা কোনো অপরাধ না? আজ আমি আওয়ামী লীগের অফিস করতেছি, তাতে আপনাদের অনেকের সমস্যা?’
চাপিতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাঙ্গরা বাজার থানা কৃষক লীগের সভাপতি আবু মুছা আল কবির বলেন, ‘আমি জানি এখানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু দোকানঘর নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা নেই।’
মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার হাসান চিনু বলেন, ‘নিমাইজুড়ি নদীর উপর আওয়ামী লীগের কার্যালয় নির্মাণ করার বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগ কিছুই জানে না। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত।’
মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ নাজমুল হুদা বলেন, ‘সরকারি স্থানে কেউ স্থাপনা নির্মাণ করতে পারে না। বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়ে খবর নিচ্ছি। বিষয়টি সত্য হলে ওই স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’