রংপুর অফিসঃ রংপুরে তথ্য মেলায় সরকারি চারটি দপ্তরের স্টলে মুজিববর্ষের লিফলেট ও ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বক্তব্য-সংবলিত লিফলেট বিতরণ নিয়ে তোলাপাড় চলছে। এসব লিফলেট ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
এ সময় তারা জড়িতদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টির হয়েছে। পরে স্টল থেকে লিফলেটগুলো সরিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছে জেলা প্রশাসন। রোববার সন্ধ্যায় রংপুর মহানগরীর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জেলা প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) আয়োজিত দু’দিনের তথ্য মেলায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে এঘটনার প্রতিবাদে আজ (২৩ ডিসেম্বর) সোমবার দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। সেখানে বক্তারা লিফলেট প্রচারের সাথে জড়িত সকল কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেন। অনথ্যায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তারা।এর আগে মেলা উদ্বোধন করেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। উদ্বোধনের পর মেলার আগত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন চারটি স্টলে মুজিববর্ষ ও শেখ হাসিনার বাণী সংবলিত লিফলেট প্রচার করছে। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, জেলা মৎস্য অফিস, জেলা সঞ্চয় অফিস ও পরিবার পরিকল্পনার অফিসের স্টলে এ প্রদর্শনী দেয়।জানা গেছে, বিতরণ করা লিফলেটগুলোতে লেখা ছিল ‘নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, মুজিববর্ষে বাংলাদেশ,বাঙালি জাতি এখন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলছে আগামীতেও মাথা উঁচু করে চলবে, সেটাই হবে আমাদের আজকের দিনের প্রতিজ্ঞা- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’। এবং পতিত সরকারের সময়কার মুজিববর্ষের লোগোও দেখা যায় ওই লিফলেটে।এ ধরনের ফ্যাসিবাদের লিফলেট বিতরণ করার বিষয়টি নিয়ে সেখানে প্রতিবাদ জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ।
এ সময় তারা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করছেন’। এ নিয়ে সেখানে কর্মকর্তাদের সাথে তর্ক শুরুর একপর্যায়ে তারা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন।মেলায় উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালালেও তার দোসররা এখনো সবখানে বিরাজমান। তারা নতুন করে শেখ হাসিনার তত্ত¡কে প্রতিষ্ঠিতি করতে চায়। পতিত হাসিনার ফ্যাসিস্ট কাঠামোগুলো জাগ্রত করতে চাইছে। সরকারি স্টলগুলো থেকে তথ্য মেলার নামে বঙ্গবন্ধুর মুজিববর্ষের ছবিসহ শেখ হাসিনার সেই ফ্যাসিস্ট বাণীর লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এটা আমরা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। এরা কিভাবে এই সাহস পায়। এর মাধ্যমে ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবকে চ্যালেঞ্জ করছে শেখ হাসিনার সরকারি দোসররা। অবিলম্বে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ করতে হবে। না হলে আমরা মাঠে আন্দোলন করে তাদের অপসারণ করতে বাধ্য করব।’ তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসক কেন তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলো না সেটি ভেবে দেখার বিষয়।
জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের স্টলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ও পীরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কাওসার আলী বলেন, ভুলবশত এসব লিফলেট আনা হয়েছে।স্টলে উপস্থিত সহকারী পরিচালক সঞ্জয় ব্যানার্জি জানান, মেলায় আমরা আছি। সব কিছ্ নতুন করা হয়েছে। কিন্তু লিফলেটগুলো করা হয়নি। এটা আমাদের ভুল।বিষয়টিকে অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে রংপুর সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা এনামুল হক বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা সরিয়ে ফেলেছি।এ বিষয়ে রংপুর জেলা কর্মসংস্থান এবং জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মালিক মোহাম্মদ তৈমুর গোফরান জানান, এখানে বঙ্গবন্ধুকে প্রোমোট করা হচ্ছে না। যেটা আগে প্রিন্ট করা ছিল ওইটাই। এরপর আমাদের আর কোনো নতুন কিছু প্রিন্ট করে দেয় নাই। আমাদেরকে হঠাৎ করে মেলায় স্টল দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তাই আমরা সময়ও পাইনি। এজন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাণী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত লিফলেটই আমরা নিয়ে এসেছি। নতুন করে ছাপালে আমাদের ১৫ দিন সময় দেয়া লাগে। তাই যা ছিল তাই নিয়ে এসেছি। আমি বলে দিচ্ছি, এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করলেই ভালো হয়।এদিকে রংপুর আঞ্চলিক তথ্য অফিসের সহকারি তথ্য কর্মকর্তা রুপাল মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি দৈনিক দিনকালকে জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন। তথ্য মেলায় এই ধরণের লিফলেট বিতরণের খবর তার জানা নাই।জাতীয় নাগরিক কমিটি রংপুরের সংগঠক আলমগীর হোসেন নয়ন বলেন, ‘এখনো পতিত হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারি কর্মকর্তারা এ ধরনের সাহস পায় কিভাবে। সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। জেলা প্রশাসন শুধু মৌখিকভাবে তাদের সতর্ক করলো, ব্যাখ্যা চাইলো। এটাও আমরা মানতে পারছি না। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা এসব ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করতে হবে। নইলে আবারো আমরা মাঠে নামতে বাধ্য হব।রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, ‘স্টল পরিদর্শনের সময় প্রথমে আমার নজরে আসেনি। পরে আমি তা দেখতে পাই। দু’টি স্টল থেকে একটি মন্তব্য এবং লোগো সংবলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে যা আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের। এটা জানা মাত্রই জেলা মৎস্য অফিস এবং কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠিয়েছি। তাদের কাছে জানতে চেয়েছি। এটা কিভাবে আসলো? কেন আসলো? তারা দু’জনই আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে।তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম। যদি ফ্যাসিস্ট সরকারের কোনো কিছু বা লিফলেট থাকে সেগুলো নষ্ট করতে। কিন্তু কেন সেগুলো তারা করল না, সব মিলিয়ে আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা চেয়েছি এবং লিখিতভাবে যা যা করণীয় সেটা করব।’ এছাড়াও বিষয়টি স্ব স্ব দপ্তরের সচিব মহোদয়কে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
এমকে/আস্থা