DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাসোমবার ২৫শে নভেম্বর ২০২৪
ঢাকাসোমবার ২৫শে নভেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

রংপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, হাসপাতালে নেই আলাদা ওয়ার্ড

Ellias Hossain
জুলাই ১০, ২০২৩ ৭:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রংপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, হাসপাতালে নেই আলাদা ওয়ার্ড

রিয়াজুল হক সাগর/রংপুর প্রতিনিধিঃ

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। সাধারণত রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকলেও এখন তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। গত মঙ্গলবার (৪ জুলাই) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হলে নড়েচড়ে বসে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন।

এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে সব রোগীকে একসঙ্গে রাখা হলেও এখন কিছুটা তৎপর হয়েছে প্রশাসন। নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের ৩ নম্বর এবং ৬ নম্বর ইউনিটে রাখা হয়েছে ডেঙ্গু রোগীদের। তবে এখনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে আলাদা কোনো ওয়ার্ড নির্ধারণ করা হয়নি। বর্তমানে সেখানে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে।

আজ সোমবার (১০ জুলাই) সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চিকিৎসায় কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়া ও আলাদা ব্যবস্থায় চিকিৎসার কথা বলছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। তবে আলাদা ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন।

এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড না করায় আতঙ্কে আছেন চিকিৎসা নিতে আসা অন্য রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতালে আসা খন্দকার রিয়াজুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সামান্য একটা মশারি দিয়ে রোগীদের রাখা হয়েছে। খুব বেশি নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। ডেঙ্গু জ্বর যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে তৎপরতা নেই বললেই চলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদেরকে আলাদা জায়গায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হোক। না হলে তো আমরা রোগী নিয়ে এসে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে যাবো। পুরো হাসপাতালে মশা-মাছির উৎপাত বেড়েছে। দিনে রাতে সমানতালে মশা কামড়ায়, কয়েল জ্বালিয়ে কিংবা মশারি টানিয়েও নিরাপদ নয়।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া বুলেট লাল নগরীর পুরাতন সদর হাসপাতাল কলোনীর বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ঢাকার একটি সরকারি দপ্তরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেই জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু জ্বর নিশ্চিত হলেও হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা না পেয়ে তার অকাল মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রেহেনা পারভীন নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, যেহেতু আমার রোগীর ডেঙ্গু হয়েছে, তাকে যদি আলাদা করে রাখা হতো তাহলে ভালো হতো। কারণ সে ঘুমাতে পারছে না। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছে। এখানে তো আরও রোগী ভর্তি আছে। আলাদা ওয়ার্ড হলে চিকিৎসাটাও আরও ভালো হতো।

সুমন ইসলাম নামে আরেক স্বজন জানান, এখানে তো সব কিনে আনতে হয়। হাসপাতাল থেকে ২ দিনে শুধু একটা স্যালাইন দিছে। আর প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ছাড়া বাকি সব কিনে আনতে হচ্ছে। গরিব মানুষ খরচ কমাতে হাসপাতালে আসে। কিন্তু এখানে এসে সব কিছু কিনতে হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পুরো চিকিৎসা খরচ ব্যয় করা উচিত।

কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও নীলফামারীসহ রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা চিকিৎসারত ডেঙ্গু রোগীদের অভিযোগ- এখানে চিকিৎসা মিললেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না তারা।

সুরুজ্জামাল নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রোগী বলেন, ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে এসেছিলাম। এখন ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছি। কয়েকদিন ধরে কিছু খেতে পারছি না, পুরো শরীরে ব্যথা। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে একটু ভালো আছি। তবে চিকিৎসাসেবা আরও উন্নত হওয়া দরকার ছিল।

কুড়িগ্রাম থেকে আসা ডেঙ্গু আক্রান্ত আরেক রোগী বলেন, আমি ঢাকার মালিবাগের এক কোম্পানিতে চাকরি করি। ঈদের পরের দিন প্রচণ্ড জ্বর আসে। বন্ধুদের সেবায়ও যখন কাজ হচ্ছিল না তখন বাড়ি চলে আসি। এরপর ভূরুঙ্গামারীতে টেস্ট করাই সেখানে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সেখান থেকে মঙ্গলবার রংপুরে রেফার্ড করে। এখানে এসে তো কোনো সেবা পাচ্ছি না। সব কিছু বাহির থেকে কিনে আনতে হয়। হাসপাতাল থেকে শুধুমাত্র দুইটা গ্যাসের ট্যাবলেট আর নাপা দিয়েছে। গত ছয় দিনে মাত্র ১টা স্যালাইন পেয়েছি। অথচ প্রতিদিন আমাকে দুইটা স্যালাইন দেওয়া লাগছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মোট ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে এসেছেন। বাড়িতে আসার পর থেকে অনেকে জ্বরে ভুগছেন। পরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানান, এখন পর্যন্ত যারা ভর্তি রয়েছে, তাদের যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। কিছু দিন আগে একজন মারা গেছেন। আমরা চেষ্টা করছি। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করার। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সাধারণ রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ইউনিট এবং বেডের সমস্যা রয়েছে।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগের বিষয়েু তিনি বলেন, মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ শুধু রংপুর অঞ্চলে না সাড়া দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। যদি কেউ অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এছাড়াও ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ নজরে রাখারও আশ্বাস দেন এই পরিচালক।

এদিকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শ্যামাসুন্দরী খাল পরিষ্কার করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকার বর্জ্য খুব দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ফগার মেশিন দিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংস করাসহ ডেঙ্গু রোগের বিস্তার রোধে বিভিন্ন কাজ চলমান রয়েছে। তবে বর্ষা মৌসুমের কারণে কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনর মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, মশার উপদ্রব কমাতে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশকনিধন স্প্রে ছিটানোর কার্যক্রম বর্ষার কারণে কিছু কিছু জায়গায় বন্ধ রয়েছে। তবে ঢাকার মতো রংপুরে যেহেতু ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে, আমরা দ্রুত সব জায়গায় মশা নিধন স্প্রে দেওয়া শুরু করবো।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০০
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০৫
  • ১১:৪৯
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩১
  • ৬:২০