রংপুর অঞ্চলে ভারী শিল্প কলকারখানা নেই-রংপুরে বাণিজ্যমন্ত্রী
রিয়াজুল হক সাগর/রংপুর প্রতিনিধিঃ
লালফিতার দৌরাত্বে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুন্সি। তিনি বলেছেন, ‘লালফিতার দৌরাত্ম্য বড় বেশি। আমি নিজেও কিছুটা কাবু হয়ে গেছি। আমি নিজেও খুব হ্যাপি না। কারণ সারাটা জীবন কাজ করেছি। সরকারের এই চেয়ারে বসে মনে হয় এটা কবে বদলাবে? তবে চেষ্টা করা হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করছি।
আজ শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আরডিআরএস’র বেগম রোকেয়া মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা’ শীর্ষক রংপুর সংলাপ অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে সিপিডি, সুজন ও ইউএনডিইএফ।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়াতে রংপুর অঞ্চল পিছিয়ে পড়ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, রংপুর অঞ্চলে ভারী শিল্প কলকারখানা নেই। বড় বড় কোম্পানীগুলো এখানে আসতে চায় না। কারণ উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে। এর পেছনে যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবহন খরচ, গ্যাস সংযোগ না থাকাসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে এ অঞ্চলের শ্রমিকরা অনেক পরিশ্রমী ও সুশৃঙ্খল। জাতীয় পর্যায়েও এর সুনাম রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এক সময় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অর্ধেক মানুষও আসত না। যাতায়াতে অনেক কষ্ট হত, যাত্রী পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দিনে ১৩-১৭টি ফ্লাইট উঠানামা করছে। ঈদের সময়ে ২২টিরও বেশি হয়ে থাকে। আগামী এক বছরের মধ্যে সেখান থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩০টি ফ্লাইট উঠানামা করবে। ইতোমধ্যে সাড়ে ৬শ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বিমানবন্দরের মূলভবনটা হয়ে গেছে। লাউন্স, ব্যাংক বুথসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও বেড়েছে। এখন এটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। তবে নেপাল ও ভুটানের ফ্লাইট নিয়ে কথা চলছে, এটিও চালু করা সম্ভব হবে।
চিনিকল প্রসঙ্গে টিপু মুনশি বলেন, একটি চিনিকলও লাভজনক নয়। এই দেশে যে আখ হয়, তা দিয়ে চিনিকল চালু রাখা সম্ভব নয়। এই খাতে শুধু লোকসান হচ্ছে। এ অবস্থায় চিনিকল শ্রমিকদের বাঁচাতে বিকল্প নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে চিনিকলগুলোকে প্রয়োজনে বেসরকারিখাতে চিনি ছাড়া অন্যকিছু উৎপাদন নিয়ে ভাবতে হবে। এতে শ্রমিকরা বেকার থাকবে না, লোকসান বন্ধ হবে। কিন্তু লালফিতার দৌরাত্বে অনেক কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিস্তা নদীর দুপাশে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট নিয়ে রংপুর অঞ্চলের মানুষকে হতাশ না হতে আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী খুব সিরিয়াস। আন্তর্জাতিক একটা ছোট ঝামেলা আছে, একারণে বিলম্ব হচ্ছে। তবে এটা হলে নদীর দুইপাড়ে বিশাল অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এ জন্য আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। সবকিছু ব্যালেন্স করেই এটা করা হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই চাইছেন তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন হোক। এছাড়াও রংপুর অঞ্চলের উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে বাণিজ্যমন্ত্রী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, সুশাসন না থাকলে উন্নয়ন যতই হোক, তা দৃষ্টিগোচর হয় না। এ জন্য উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের কাছে সুশাসনের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় বাজেটে রংপুর বিভাগের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দে বরাবরই বৈষম্য হয়ে আসছে। নদীর এপার-ওপারের এই বৈষম্যের কারণে রংপুর অঞ্চল শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বৈদেশিক আয়সহ সবদিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এই অঞ্চলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জাতীয় সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ। এসময় তিনি রংপুর বিভাগে একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডাযলগ-সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার জনগণের সাথে একটি লিখিত চুক্তি। এটি বরখেলাপ করলে রাজনৈতিক দলের ওপর এর প্রভাব পড়ে। সাধারণ জনগণ ইশতেহার দেখে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেন। রংপুর অঞ্চল বহুদিক থেকে বঞ্চিত। এর অবসান হওয়া দরকার। এই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘসময় ধরে ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন; সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক ভিপি ও দৈনিক পরিবেশের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আলাউদ্দিন মিয়া, নারী সংগঠক ও উন্নয়নকর্মী মোশফেকা রাজ্জাক, আরডিআরএস বাংলাদেশের হেড অব ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের ইশতেহার ও নির্বাচন পরবর্তী বাস্তবতা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনায় দারিদ্রসীমার নিচে থাকা রংপুর অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে অঞ্চল ভিত্তিক বাজেট প্রণয়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতার উপর গুরুত্ব তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারীরা। রংপুর জেলা ছাড়াও পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সংলাপে অংশ নেন।