অনলাইন ডেস্কঃ
মজান মাস সামনে রেখে দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। বাজারে এরই মধ্যে ভোজ্যতেল, ছোলা, মটর ডাল ও চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, রমজান আসার দুই-তিন মাস আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে দেশে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তদার এবং ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আল মদিনা ট্রেডার্সের মালিক আহসান উল্লাহ জায়েদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েকদিনে মটর ডাল কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। অর্থাৎ মণপ্রতি বেড়েছে প্রায় ৪০০ টাকা। মসুর ডাল কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। মুগডাল মানভেদে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকায়।
রমজানের অন্যতম প্রয়োজনীয় পণ্য ছোলা। খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ (৩৭.৩ কেজি) ছোলা মানভেদে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই মাসে পণ্যটির দাম মণপ্রতি বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
সরেজমিনে আল মদিনা ট্রেডার্সে গিয়ে দেখা যায়, ছোলার মণ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ১০০ থেকে দুই হাজার ৩৫০ টাকায়। অপরদিকে, মেসার্স লোকনাথ ভাণ্ডারে ভালোমানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫৫০ টাকায়।
দাম বাড়ার বিষয়ে আহসান উল্লাহ বলেন, আমদানিপর্যায়ে দাম বাড়ার কারণেই মূলত বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এছাড়া একসঙ্গে বেশি পণ্য কেনার কারণেও দাম বাড়ে। তিনি জানান, খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি চিনির দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৩৫০ টাকায়।
এছাড়া দফায় দফায় বেড়ে বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি মণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) পাম অয়েলের দাম ঠেকেছে তিন হাজার ৮৫০ থেকে তিন হাজার ৯৪০ টাকায়। যা এক মাস আগেও তিন হাজার ৪০০ টাকার নিচে বিক্রি হয়েছে। সরেজমিনে আরও দেখা যায়, মেসার্স এম কে ট্রেডার্সে পাম ওয়েল বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ তিন হাজার ৯৪০ টাকায়। গত মাসে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে চার হাজার ১০০ টাকার মধ্যে। বর্তমানে একই সয়াবিন চার হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারের এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি নাজির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রমজান আসার আগে প্রতি বছর ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। রমজানের দুই-তিন মাস আগে থেকেই প্রয়োজনীয় পণ্য ছোলা, চিনি, ডাল, ভোজ্যতেলের দাম থাকে ঊর্ধ্বমুখী। এখানে আসলে সরকারের কোনো তদারকি নেই। আগে দেখতাম, কোনোরকম ক্রাইসিস হলে টিসিবির মাধ্যমে ওএমএস চালু হতো। এখন সেটাও দেখা যায় না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সবসময় আছে। সিন্ডিকেটের কারণে সব জায়গায় একসঙ্গে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেন।’
চট্টগ্রাম কাস্টমের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) ছোলা আমদানি হয়েছিল দুই লাখ ৮২৬ টন। আর চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ছোলা আমদানি হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার ৮৮১ টন। মসুর ডাল আমদানি হয়েছে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৯ টন। যা গত অর্থবছরে ছিল দুই লাখ ৫৪ হাজার ২৪২ টন।
গত অর্থবছরের আট মাসে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে তিন লাখ ৯৫ হাজার তিন টন এবং চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ চার লাখ ৩৩ হাজার ৯৯১ টন।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রমজানের জন্য যেসব ভোগ্যপণ্যের প্রয়োজন, তার সবই চলে এসেছে। আমাদের প্রতিটি আড়ত পণ্যে পরিপূর্ণ। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে রমজানের পণ্য বিক্রি শুরু হবে। পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই, প্রচুর সরবরাহ আছে।’
পণ্যের ঘাটতি নেই কিন্তু রমজানের অনেক আগেই দাম বাড়ানো হচ্ছে— এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। এ কারণে আমাদের এখানে পণ্যের দামও বাড়তি। বিদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত আমাদের বাজার। বিদেশে দাম বাড়লে এখানেও বাড়ে। সেখানে কমলে আমাদের এখানেও কমে।’
‘রমজানের আগে সবাই একসঙ্গে পণ্য কেনার চেষ্টা করেন। এ কারণে চাহিদা বেড়ে যায়, দামও বেড়ে যায়। আবার রমজানের মধ্যে দাম কমে যায়। বড় বড় মিলাররা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করেন’— বলেন মহিউদ্দিন।
রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা বছরই আমরা বাজার তদারকি করি। রমজান উপলক্ষে আগামী ২৬ মার্চ বৈঠক আছে। এরপর থেকে বাজার মনিটরিং জোরদার হবে।