জেলা প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীতে ডোবায় পড়ে থাকা ড্রামের ভেতর থেকে তরুণীর পায়ের কয়েকটি আঙুল বের হয়েছিল। এ দৃশ্য দেখে এক পথচারী পুলিশকে খবর দিয়েছিল। ঘটনার তিন দিনের মাথায় আঙুলের মাধ্যমেই তরুণীর পরিচয় মিলেছে।
রাজশাহীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্রবিহীন এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে। খুনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে এক পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিহত তরুণীর নাম ননিকা রানী বর্মণ (২৩)। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদরের মিলনপুর গ্রামে। তার বাবার নাম নৃপেন চন্দ্র বর্মণ। ননিকা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে সদ্য পাস করেছেন। তিনি একটি ক্লিনিকে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি নগরের পাঠানপাড়া এলাকার একটি মেসে থেকে চাকরির পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করছিলেন। ১৮ এপ্রিল রাতে তার লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারকে (৪৩) গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি রাজশাহী মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। নারী কেলেঙ্কারির কারণে তিনি বরখাস্ত হয়েছিলেন। তার বাড়ি পাবনার আতাইকুলা উপজেলার চরাডাঙ্গা গ্রামে। বর্তমানে তিনি রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) রাজশাহী থানায় কর্মরত। রাজশাহী পিবিআইয়ের একটি দল গতকাল রবিবার ভোররাতে নাটোরের লালপুরে বোনের বাড়ি থেকে নিমাইকে গ্রেফতার করে।
নগরের শাহমখদুম থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, হত্যাকাণ্ডটি সূত্রহীন ছিল। তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পিবিআই তার আঙুলের ছাপ নেয়। আঙুলের ছাপ থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে তার জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। সেখান থেকে তার ঠিকানা বের করে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আর পুলিশ ননিকার হত্যাকারী হিসেবে নিমাইকে শনাক্ত করে। তাকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সহযোগী হিসেবে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার আদারীপাড়ার কবির আহম্মেদ (৩০), রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকার সুমন আলী (৩৪) এবং মাইক্রোবাসের চালক নগরের বিলশিমলা এলাকার আবদুর রহমানকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়। যে মাইক্রোবাসে লাশ নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়া হয়, সেটিও জব্দ করা হয়েছে।
শাহমখদুম থানার ওসি আরো বলেন, গ্রেফতার আসামিরা সবাই পিবিআইয়ের হেফাজতে আছেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করবে।
পুলিশ জানায়, নগরের তেরখাদিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ননিকাকে হত্যা করা হয়। বাড়িটি নিমাই চন্দ্র ৬ এপ্রিল ভাড়া নেন। তার স্ত্রীও পুলিশ কনস্টেবল। তিনি বগুড়ায় কর্মরত। কনস্টেবল নিমাই তরুণীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ছয় থেকে সাত বছর ধরে ননিকা রানীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক। সম্প্রতি তিনি বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এ কারণে তাকে হত্যার পর লাশ ড্রামে ভরে মাইক্রোবাসে করে ফেলে দেয়া হয়।
পুলিশ আরো জানায়, ড্রামটি পড়ে ছিল রাজশাহী নগরের সিটিহাট এলাকার একটি ডোবায়। ১৬ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে একজন পথচারী ড্রামের মুখে একটি পা দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ড্রামের ভেতর থেকে তরুণীর লাশটি উদ্ধার করে। সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় শাহমখদুম থানায় একটি হত্যা মামলা হয়।