নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসের নতুন দলিল লেখকরা অফিসে দলিল (জমি রেজিস্ট্রী) করতে গেলে দলিল রেজিস্ট্রী না করার অভিযোগ উঠেছে। দলিল রেজিস্ট্রী না করে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে কৌশলে চলে যান। এ সময় অফিসের ভিতরে রাণীনগর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নতুন দলিল লেখকদের বিভিন্ন হুমকি দেয়। পরে নতুন দলিল লেখকরা রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে অফিসের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। নতুনদের দলিল রেজিষ্ট্রী করতে দেওয়ার জন্যে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তোভোগী নতুন দলিল লেখকরা।
জানা গেছে, রাণীনগর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে প্রায় ৭০-৮০ জন দলিল লেখকের একটি সমিতি রয়েছে। এই সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক হারুনসহ কমিটির কিছু প্রবাভশালীদের নেতৃত্বে রেজিষ্ট্রী অফিস জিম্বি করে রেখেছেন। জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে দলিল খরচ বাবদ সমিতির নামে লাখ লাখ টাকা অবৈধ্য ভাবে সরকারি নিয়মের চেয়ে বেশি হাতিয়ে নেন। আর এই অবৈধ্য টাকার ভাগবাটোয়ার মোটা অংশ টাকা ঘুষ বিভিন্ন জনের পকেটে চলে যায়। এছাড়াও চালিয়ে যান বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কার্যক্রম।
আরো জানা গেছে, কয়েক বছর আগে প্রায় ১৭-১৮ জন দলিল লেখক নতুন লাইসেন্স করেন। এরপর তারা সমিতিতে সদস্য হতে গেলেও সমিতির নেতৃবৃন্দ তাদের নিতে অস্বীকার করেন ও বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করার পাইতারা চালায়। এমত অবস্থায় নতুন লাইসেন্স পাওয়া প্রায় ১৭-১৮ জন দলিল লেখক পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এরপর নতুনরা একটি সমিতি গঠন করে জমির দলিল লেখা শুরু করেন। এরই ধারবাহিকতায় সোমবার দুপুরে নতুন দলিল লেখকরা রাণীনগর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমানের কাছে দলিল (জমি রেজিষ্ট্রী) করার জন্যে গেলে এ সময় সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক হারুন এবং তাদের নেতৃত্বে তার সমিতি কিছু লোকজন রেজিষ্ট্রারের রুমে গিয়ে নতুনদের সাথে বাগবিতান্ড শুরু করেন ও নতুন লেখকদের রেজিষ্ট্রী অফিস থেকে বের করে দেওয়া, মারপিট করাসহ চাঁদাবাজির মামলা করার হুমকি-ধামকি দেন। এসময় সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান নতুন দলিল লেখকদের দলিল (জমি রেজিস্ট্রী) না করেই অফিস থেকে কৈশলে চলে যান। এরপর এদিন দুপুরেই নতুন ১৫-১৬ জন দলিল লেখকরা অফিস থেকে বাহিরে এসে রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে অফিসের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে ইলিয়াস কাঞ্চন, এরশাদ হোসেন, হাসান আলী, সুকুমল, রাব্বী, সেলিম, মতিন, মিরাজুল, জাহাঙ্গীর, জুয়েল, আনোয়ার, আসমাইলসহ অন্যান্য বক্তরা বলেন, সরকারি নিয়মে আমার জনগনকে সেবা দিতে চাই। কিন্তু রাণীনগর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে ৭০-৮০ জন দলিল লেখকের একটি সমিতি আছে। সাব-রেজিস্ট্রী অফিস ওই দলিল লেখক সমিতি তাদের বাপদাদার সম্পত্তি মনে করেন। যার কারনে নতুনদের দলিল রেজিষ্ট্রী করতে দেওয়া হয় না এবং বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। সোমবার দুপুরে নতুন দলিল লেখকরা অফিসে দলিল (জমি রেজিস্ট্রী) করতে গেলে দলিল না করে কৈশলে সাব-রেজিষ্ট্রার মাহবুবুর রহমান দ্রুত তার এজলাস থেকে চলে যান। এছাড়া ওই সমিতির বিভিন্ন লোকজন ক্রেতাদের কাছে থেকে সরকারি নিয়ম বর্হিভূত অবৈধ্য ভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রী অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এই সব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করলেই হয়রানি করা হয়ে থাকে। দ্রুত এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রী অফিস দুর্নীতিমুক্ত করার দাবিসহ নতুন দলিল লেখকদের দলিল রেজিস্ট্রী করতে দেওয়ার জন্যে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তোভোগী নতুন দলিল লেখকরা।
এ ব্যাপারে রাণীনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। যার কারণে তারা জমি রেজিষ্ট্রী করতে পারবেন না।
রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুল আলম বাকবিতান্ডার সময় ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত চলে যাওয়ায় তার সাথে কোন কথা বলা সম্ভব হয়নি।