রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণেই ভারতের উপর ‘রুষ্ট’ ট্রাম্প?
- আপডেট সময় : ০৮:১৫:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
- / ১২৪১ বার পড়া হয়েছে
রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণেই ভারতের উপর ‘রুষ্ট’ ট্রাম্প?
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত-রাশিয়ার অংশীদারিত্বকে ভালো চোখে দেখছেন না যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে ভারতের ওপর ‘রুষ্ট’ হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বাণিজ্য শুল্ক দ্বিগুণ করে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প কি এভাবে চাপ তৈরি করে রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে পারবেন?
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস গত ৯ আগস্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সামনে এই একই প্রশ্ন রেখেছিল। সেই সময় রাশিয়ান নিরাপত্তা পরিষদের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য অ্যান্ড্রু সুশেন্তসভ জানিয়েছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প চাপ তৈরি করলেও ভারত কিন্তু মার্কিন বিদেশ নীতি অনুসরণ করবে না।
কারণ কি শুধুই তেল? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে রাশিয়া থেকে তেল কিনে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে পরোক্ষভাবে জিইয়ে রাখার অভিযোগ তুলেছিলেন। এই কারণ দেখিয়েই বাড়তি বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করেন তিনি।
বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু সুশেন্তসভ বলেছেন, চাপ প্রয়োগ করা মার্কিন কৌশলের একটা অংশ। যখন এই কৌশল ব্যর্থ হয়, তখন প্রেসিডেন্ট নিজেই নিজের জয় ঘোষণা করেন এবং চুপচাপ আগের সিদ্ধান্তগুলো বদলে ফেলেন।
বাণিজ্যকে ঢাল করে এর আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যকে ঢাল করে বিষয়টাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যায়; যা উস্কানির সমান। কিন্তু সেখানে সমঝোতার জন্য খুবই কম জায়গা থাকে।
মার্কিন চাপের মুখে পড়েও এখনও রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে দেখা যায়নি ভারতকে। গত ৬ আগস্ট ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৭ অগাস্ট ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল রাশিয়ায় পৌঁছান। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
সেই সময় অজিত দোভাল বলেছিলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট পুতিন ভারতে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিনের কথা হয় ৮ আগস্ট। মোদিও বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন চলতি বছরে ভারত সফরে আসতে চলেছেন। একই তথ্য প্রকাশিত হয় রাশিয়ার গণ্যমাধ্যমেও। ডোভাল আরও এস-৪০০ সিস্টেম কেনার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। বর্তমানে ভারতের কাছে তিনটি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারত সেগুলোর ব্যবহার করেছিল।
ইউক্রেনে ব্রিটেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত লেই টার্নার লিখেছেন, আগে বলা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। কিন্তু এখন ৫০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করা হয়েছে। ২৭ আগস্টের আগে এই ট্যারিফও প্রযোজ্য হবে না। তার আগে ১৫ আগস্ট প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ভারত ছাড়া অন্য কোনও দেশকে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জন্য নিশানা করা হয়নি।
এখন আশঙ্কা জন্মাচ্ছে, ট্রাম্প এমন এক চুক্তিতে রাজি হতে পারেন; যার ফলে ইউক্রেন তাদের জমি হারাবে। এবং যদি ইউক্রেন তা অস্বীকার করে, তাহলে রাজি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিতে থাকবে।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর একই পদ্ধতিতে কাজ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। টার্নার লিখেছেন, জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে বেশ কয়েকবারই এমনটাই করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, তারা ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানও ব্যাহত করেছে। কিন্তু রাশিয়ার ওপর কোনও চাপ দেয়নি।
ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল ও সার আমদানি করছে। এর ফলে রাশিয়া ভারতের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে। বর্তমানে রাশিয়া থেকে মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির ৩৫-৪০ শতাংশ ভারতে যায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জ্বালানি রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে। (সূত্র-বিবিসি বাংলা।)















