সংকট উত্তরণের ফর্মূলা আছে-জাতীয় পার্টি
আস্থা ডেস্কঃ
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনীতিতে ততই উত্তাপ বাড়ছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। কেউ কেউ মনে করছেন, যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, সেহেতু নির্বাচন হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আবার কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলেও যথাসময়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন এবং এই নির্বাচনেকে অংশগ্রহণ করলো, বা কে করলো না, সেটা প্রতিটি দলের নিজস্ব ব্যাপার।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ তাদের শরিকরা সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে যেমন অনড়, অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। দুই পক্ষই কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এ অবস্থায় আগামী দিনে সব রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নেও জনমনে শঙ্কা ভোট হবে কি না?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের প্রধান দুই দল সমঝোতার পথে হাঁটার পরিবর্তে অবস্থান নিয়েছে দুই মেরুতে। এতে করে রাজনৈতিক সঙ্কট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। পালটাপালটি কর্মসূচি দিয়ে মাঠের রাজনীতি সরব রাখলেও চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণে সমাধান কোন পথে, তা বলছে না কোনো পক্ষই। এমনকি কোনো পক্ষ থেকেই সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়ার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সঙ্কট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধিসহ অনেকে সংলাপের পক্ষে। কিন্তু সংলাপের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে না কেউ। বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকেই এ সংকট সমাধান করতে হবে। সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগী হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সংশ্লিষ্ট্র সূত্র। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র আমন্ত্রণে ভারত সফর করেছেন।
সফর থেকে ফিরে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের নেতারা বলেছেন, ভারত বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়।
ভারত সফরে গিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়াম্যান জি এম কাদের। জি এম কাদেরের সঙ্গে ভারতের কি কথা হয়েছে, তা নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে নারাজ। এরপর বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলেরও ভারত সফরের কথা রয়েছে বলে একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় একটি ফ্যাক্ট। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তা জাতীয় পার্টির মাধ্যমেই সমাধানের একটি পথ। কারণ বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে জাতীয় পার্টি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের একটি পথ হতে পারে।
জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ভারতকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এছাড়াও তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে এক সাক্ষাতে জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি এককভাবে ৩শ’ আসনেই নির্বাচনে প্রার্থী দিবে। যদি জাতীয় পার্টি এটি করে, তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন খানিকটা হলেও সম্ভব।
সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা, বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলছেন,
বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের বলয়ের দলগুলোর নেতারা আন্দোলনে সক্রিয়। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরাও নির্বাচন সামনে রেখে বেশ তৎপর। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে নাকি বিএনপিসহ একটি বড় অংশ নির্বাচন বর্জন করবে এমন সব জিজ্ঞাসা রাজনীতির অন্দরমহল থেকে প্রকাশ্যে চলে আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই মুখোমুখি অবস্থানে জনগণের শঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলছেন, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো সুযোগ নেই। শনিবার (২৬ আগস্ট) তারা (বিএনপি-জামায়াত) একটি গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক সরকারের পরিবর্তে আরেকটি অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। তারা সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদী শক্তিকে উসকে দিয়ে এবং ধর্মের নামে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে চায়।
তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব না। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে বৈষম্যহীন, শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। তাই তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো সুযোগ নেই।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংকট উত্তরণে আলোচনার বিকল্প নেই, একদল যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া। আরেক দল যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া। এরা কেউ জনগণের কথা ভাবে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এতে সঙ্কট বাড়বে ছাড়া কমবে না। সংকট উত্তরণে প্রয়োজন আলাপ-আলোচনায় বসা।