সরকারি খাতে রয়েছে ৫ লাখ খালি পদে চাকরির সুযোগ
আস্থা ডেস্কঃ
মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। সেই আন্দোলনের জেরে সরকারের পতন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সমর্থনেই নতুন সরকার গঠন হয়েছে। কিন্তু তাদের কাঙ্ক্ষিত চাকরির বিষয়ে স্থবিরতা কাটেনি এখনো।
সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৫ লাখ ৩ হাজার ৩শ ৩৩টি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে এই মুহূর্তে। এই পদ পূরণ হলে চাকরি প্রত্যাশীদের বড় অংশের কর্মসংস্থান হতে পারে। এই পদ পূরণে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি কমিশন করে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে ৫ লাখ ৩ হাজার ৩শ ৩৩টি পদ খালি। বিপুল পরিমাণ এই শূন্যপদ থাকলেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না চাকরি পরীক্ষা। আবার আগে অনুষ্ঠিত হওয়া চাকরি পরীক্ষাও সম্পন্ন হচ্ছে না।
গত আমলের সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ছিল ব্যাপক অনিয়ম। এছাড়াও ছিল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) বিসিএস’র প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ। আটকে আছে তিনটি বিসিএসসহ একাধিক নন-ক্যাডারের নিয়োগ কার্যক্রম। হচ্ছে না পদোন্নতির পরীক্ষাও। আন্দোলনের সময় স্থগিত করা হয় ৪৪তম বিসিএস’র মৌখিক পরীক্ষা। পরবর্তীতে ৪৬তম বিসিএস’র লিখিত পরীক্ষাও স্থগিত হয়। ১৪ই সেপ্টেম্বর ক্যাডারভুক্ত ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের অর্ধবার্ষিক বিভাগীয় পরীক্ষা স্থগিত হয়। আর দীর্ঘদিন ধরে ৪৫তম বিসিএস’র লিখিত পরীক্ষার ফলও আটকে আছে।
৪৬তম বিসিএস’র প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ৬শ ৩৮ জন প্রার্থী। এসব প্রার্থীই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এই বিসিএস’র মাধ্যমে ৩ হাজার ১শ ৪০ জন ক্যাডারে নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়া ৪৪তম বিসিএস-এ বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৭শ ১০ জন কর্মকর্তা নেয়া হবে। ৪৫তম বিসিএস’র মাধ্যমে ২ হাজার ৩শ ৯ জন কর্মকর্তা ও নন-ক্যাডারে নেয়া হবে ১ হাজার ২২ জন।
জনপ্রশাসনের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১শ ২৫টি পদ শূন্য রয়েছে।
এগুলোর মধ্যে প্রথম শ্রেণির পদ ৪৩ হাজার ৩শ ৩৬টি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ৪০ হাজার ৫শ ৬১টি। বাকিগুলো তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি।
২০২৩ সালের জুনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীর ৬শ ৫৬টি পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এখনো হয়নি পরীক্ষা।
২০১৯ সালে বিজ্ঞপ্তি হওয়া কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শন (সেফটি) ৪১টি পদের পরীক্ষা হয়নি। জটিলতায় ভেস্তে যাওয়া সেই প্রজ্ঞাপন পুনরায় প্রকাশ করে পিএসসি গতবছরের জুনে। এরপরও পরীক্ষা নিতে পারেনি পিএসসি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে হওয়া বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর চাহিদা ছিল ৫শ ১৬ জনের। ২০২৩ সালে হয় পুনঃবিজ্ঞপ্তি। গত জুলাইয়ে রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই পরীক্ষায় চাউর হয় প্রশ্ন ফাঁসের।
এতে পিএসসি’র সাবেক বর্তমান ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।
এছাড়াও জনপ্রশাসন থেকে গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, শিক্ষা প্রকৌশল, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাহিদাপত্র দেয়ার পরও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি পিএসসি।
আবার পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর স্থগিত রয়েছে পেট্রোবাংলার লিখিত পরীক্ষা, সাধারণ বীমা করপোরেশনের এমসিকিউ পরীক্ষা স্থগিত করেছে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক-কাম-কম্পিউটার অপারেটর এবং কম্পিউটার অপারেটর পদের লিখিত পরীক্ষা, শ্রম অধিদপ্তরের মৌখিক পরীক্ষা, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মচারী নিয়োগ, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জুনিয়র অফিসার, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা এবং লিখিত পরীক্ষা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে চাকরিপ্রত্যাশী তোফায়েল হোসেন বলেন, শুধু প্রস্তুতিই নিয়ে যাচ্ছি। কবে পরীক্ষা হবে না হবে কিছুই জানি না। আমরা তো আন্দোলন করেছি মেধার মূল্যায়নের জন্য। কিন্তু মূল্যায়নের স্থানটাই পাচ্ছি না।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের কাছে আবেদন করে বলেন, শুধুমাত্র স্থগিত হওয়া পরীক্ষা নেয়ার জন্য একটা কমিশন গঠন করুন। পরবর্তীতে পিএসসি নতুন করে সাজিয়ে তুলুন কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে এই পরীক্ষাগুলো নেয়া ও পদায়নের ব্যবস্থা করুন।
এদিকে নিয়োগের তিন বছর পর শূন্যপদের তালাশ করছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি) অনলাইনে ই-রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে তথ্য চাইছে।
প্রায় ৫০ হাজারের অধিক শূন্য পদ রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু নিয়োগে ধীরগতি ও হয়রানির সদর দপ্তরে পরিণত হওয়া এনটিআরসিএ কয়েক বছর ধরেই ঝুলিয়ে রেখেছেন এসব চাকরিপ্রত্যাশীদের। সদিচ্ছার অভাবে নিয়োগ পাচ্ছেন না তারা। আর নিয়মিত করে যেতে হচ্ছে আন্দোলন।
৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে চাকরিপ্রত্যাশী আহসানুল কবির বলেন, দ্রুততার সঙ্গে হয়রানিমুক্তভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত প্রতিষ্ঠানটির। এটা নতুন বাংলাদেশ নতুন করে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা পরিচালনা করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের বুকের তাজা রক্তে নতুন বাংলাদেশ হয়েছে। তাদের দাবি ছিল বৈষম্য দূর করা। কিন্তু তাদের পরীক্ষাগুলো স্থগিত হয়ে আছে।