সমীকরণ প্রতিবেদন:
চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ সারা দেশের ১ হাজার পাঁচটি কেন্দ্রে আজ করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম একযোগে শুরু হবে। টিকা নিতে ইতিমধ্যে ৩ লাখ ২৮ হাজার জন নিবন্ধন করেছেন। কার্যক্রমের প্রথম দিনই টিকা নেবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এ ছাড়া জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য, সচিব ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ টিকা নেবেন। গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, ‘অনেক দেশের আগে আমরা টিকা জোগাড় করতে পেরেছি। আশা করছি সুষ্ঠুভাবে কাজটা সম্পন্ন করতে পারব। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। ঢাকার মোট ৫০টি হাসপাতালে ২০৪টি টিম কাজ করবে।
ঢাকার বাইরে সারা দেশে ৯৫৫টি হাসপাতালে কাজ করবে ২ হাজার ১৯৬টি টিম। আমাদের সর্বমোট ১ হাজার পাঁচটি হাসপাতালে ২ হাজার ৪০০টি টিম কাজ করবে। আমাদের টিম প্রস্তুত আছে ৭ হাজার ৩৪৪টি। আপাতত ২ হাজার ৪০০টি টিম দিয়ে আমরা শুরু করছি।’ ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘আজ সকাল ১০টায় শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক টিকা নেবেন। এর আগে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে অনলাইনে সারা দেশের কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলবেন।
আজ (গতকাল) দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৩ লাখ ২৮ হাজার ১৩ জন। সব প্রস্তুতি ভালো। আশা করি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই টিকার কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’
চুয়াডাঙ্গা:
সারা দেশের ন্যায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় আজ সকাল থেকে দেওয়া হবে করোনাভাইরাসের টিকা। সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কেন্দ্রে উদ্বোধন করবেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুন। এসময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান প্রথম টিকার ডোজ নিবেন বলে তিনি নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেলায় বিভিন্ন শ্রেণির ১ হাজার ৮১৬ জন মানুষ টিকা নেওয়ার জন্য (সুরক্ষাঅ্যাপে) নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১ হাজার ৬ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় চার শ জন, দামুড়হুদা উপজেলা ১ শ ৯৪ ও জীবনননগর উপজেলায় ২ শ ১৬ জন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। প্রথম দিন জেলায় মোট ১৯টি কেন্দ্রে মোট ৪ শ ২০ জনকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে দেওয়া হবে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১০টি কেন্দ্রে ৩ শ ৭০ জনকে এই টিকা দেওয়া হবে। কেন্দ্রগুলো হলো- চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মধ্যে ৮টি, জেলা পুলিশ হাসপাতালে ১টি ও বিজিবি হাসপাতালে ১টি।
আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২০ জন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২০ জন ও জীবননগর উপজেলায় ৩টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১০ জনকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এছাড়াও প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দুই দিনব্যাপী ভ্যাকসিন প্রয়োগের সকল প্রস্তুতির অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণও শেষ হয়েছে। দুজন স্বাস্থ্যকর্মী ও দুজন স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে প্রতিটি দলে চারজন সদস্য থাকবেন৷ প্রত্যেকটি দলের স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বোচ্চ ১৫০ জনকে টিকা প্রয়োগ করতে পারবেন৷
জেলা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি সকালে ৩৬ হাজার ডোজ টিকা চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়। ইতিমধ্যে জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পাঠানো হয়েছে করোনার এই টিকা। করোনাভাইরাসের টিকাদানের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বপ্রথম আমি নিজেই টিকার প্রথম ডোজ নেব। এসময় তিনি টিকা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এমন গুজব বা মিথ্যা অপপ্রচার রোধে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
মেহেরপুর:
আজ রোববার সারা দেশের ন্যায় মেহেরপুর জেলাতেও করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। মেহেরপুর সিভিল সার্জন ইতিমধ্যে নিশ্চিত করেছে, ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহী ১২ শ জনের অধিক মানুষ তাদের নাম রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। প্রথম ধাপে প্রয়োগের জন্য মেহেরপুর জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের হাতে এসে পৌঁছেছে ১২শ ভায়াল করোনা টিকা।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন চলছে। গতকাল শনিবার সকালের দিকে সদরে ৭শ ৮৭ জন, গাংনী উপজেলায় ৩শ ১৩ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় ১শ ৯ জন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। তবে বিকেল পর্যন্ত আরও কতজন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে তা সার্ভারে সমস্যার কারণে তথ্য দিতে পারেননি সিভিল সার্জন।
এদিকে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য নানা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ। সকাল ১০টায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনলাইনে উদ্বোধন করবেন। এরপরে দুপুর ১২টায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি ভার্চুয়াল উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে সদর হাসপাতালে এ কার্যক্রম শুরু হবে। উদ্বোধনের সময় নিজে টিকা নিবেন উল্লেখ করে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টিকা গ্রহণ করবেন। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একযোগে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম. রিয়াজুল আলম বলেন, ‘গাংনী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) আব্দুর রশিদ এ উপজেলায় প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টিকা গ্রহণ করবেন। এরপরে রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী টিকা প্রয়োগ করা হবে।’
মুজিবনগর উপজেলাতেও একইভাবে দুপুর ১২টার দিকে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশনের ক্রমানুযায়ী টিকা প্রদান করা হবে।